পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বারবার অভিযোগ করে আসছেন যে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন করছেন সেখানকার সরকার। বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাদেরকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পেও রাখার অভিযোগ উঠেছে। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৫ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওটি বাংলাদেশ থেকে পোস্ট করা। ভাইরাল ওই ভিডিওতে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার কালিয়াচক এক নম্বর ব্লকের আমির শেখ নামের এক যুবক দাবি করেন, তিনি পরিযায়ী শ্রমিক, পশ্চিমবঙ্গের মালদহের বাসিন্দা। তাকে বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।
ওই ভিডিও ক্লিপ দেখার পর আমির শেখের পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর মালদহ দক্ষিণের সংসদ সদস্য ইশা খান আমির শেখকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হন। তিনি প্রথমে বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল দলজিৎ সিং চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তাকে পুরো বিষয়টি জানান। আমিরকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয় সেজন্য বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদনপত্র জমা দেন। এরপরই তৎপর হয়ে ওঠে বিএসএফ। অবশেষে গত বুধবার (১৩ আগষ্ট) বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরতে সক্ষম হন আমির শেখার।
তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আমির কয়েক মাস ধরে ভারতের রাজস্থানে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল। বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য গত ১৯ জুন রাজস্থানের পুলিশ তাকে আটক করে। ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসাবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড দেখালেও তাকে জোরপূর্বক ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। বিএসএফ ২২ বছর বয়সী আমির শেখকে বাংলাদেশে পুশ ইন করে।
গত বুধবার ১৩ আগষ্ট আমির শেখকে বিজিবি বিএসএফের হাতে হস্তান্তর করে। বিএসএফ বসিরহাট থানায় হস্তান্তর করে।এরপর বসিরহাট থানার পুলিশ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেন আমিরকে।
দেশে ফিরে আমির খুব খুশি। তিনি বলেন,আমি রাজস্থানে গিয়েছিলাম কাজে। সেখানকার পুলিশ আমাকে বাংলাদেশি বলে দুমাস জেল খাটিয়েছে। পরে পুলিশ আমাকে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়।দেশে ফিরে আমি ভীষণ খুশি।
আমিরের বাবা জানিয়েছেন, ভাইরাল ভিডিও দেখে খুব চিন্তায় ছিলাম কি হবে জানি না। কিন্তু আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুশি হয়েছি। বাংলা কথা বলার জন্য তাকে ঘোজাডাঙ্গা আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।
আমির শেখের আইনজীবী সৈকত ঠাকুরতা জানিয়েছেন, রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়ার পর বিএসএফ ওকে ধরে। বাংলা বলায়বাংলাদেশে পাচার করা হয়। ভারতীয় সব নথি দেখতে চাওয়া হয়েছিল সেগুলো দেখানোর পরেও তাকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আমরা সব নথি জমা দিয়ে ওকে নিয়ে আসি। মহামান্য আদালত রায় দেওয়ার পর বিএসএফ আজ ওকে বসিরহাটের থানার হাতে হস্তান্তর করে। তারপর সেখান থেকে আমরা ওকে নিয়ে বাড়ি আসি। এই সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৭ তারিখে।
ডিডি/টিটিএন