জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা অফিস (ইউএনওপিএস) এবং জাপানের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি যৌথভাবে বাংলাদেশে একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প চালু করেছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ও অবহেলিত অঞ্চলে ৭.৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
তাকেদার ৭.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি টেকসই ও পুনরায় প্রয়োগযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাঠামো গড়ে তোলা হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ ও গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে চিকিৎসা বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা অভাবজনিত কারণে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলো প্রতিদিন প্রতি বেডে গড়ে ৩.৪ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন করছে, যেখানে ২০১৯ সালে এই পরিমাণ ছিল ২ কেজি। অথচ দেশের ৮০ শতাংশ পৌরসভায় এখনো উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা নেই। মৌসুমি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে, কারণ এই দুর্যোগের ফলে অপরিশোধিত ও সংক্রামক বর্জ্য আশপাশের জনপদ ও পানিসমূহে ছড়িয়ে পড়ে, যার মাধ্যমে এইচআইভি, হেপাটাইটিস এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই সংকট মোকাবিলায় প্রকল্পটির আওতায় ছয়টি আধুনিক ও জলবায়ু-সহনশীল চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে সেবা দেবে এবং বছরে প্রায় ১৮ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছাবে। পাশাপাশি ১,৪০০ স্বাস্থ্যকর্মী ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং ২৫০ জন স্থানীয় প্রবীণ ও স্বেচ্ছাসেবককে সম্পৃক্ত করা হবে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে।
ইউএনওপিএস-এর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় মাথুর বলেন, তাকেদার সঙ্গে আমাদের এই অংশীদারত্ব প্রমাণ করে যে, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে জটিল সংকটগুলোরও কার্যকর সমাধান সম্ভব। আমরা চিকিৎসা বর্জ্য সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ করছি। এই প্রকল্প শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা অঞ্চলের জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।
তাকেদার গ্লোবাল করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তোশিয়ে আন্দো বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা জোরদারে আমাদের এই যৌথ উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং স্থানীয় সক্ষমতা বাড়াতে চাই। এই প্রকল্পটি একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে, যা বিশ্বের অন্যান্য অনুরূপ অঞ্চলেও প্রয়োগযোগ্য।
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর একটি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করা, যেখানে অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সমাধান এবং স্থানীয় সরকারের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্থায়ী ও কার্যকর চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য দুর্বল অঞ্চলের জন্য একটি আদর্শ হতে পারে।
এমআরএম
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।
এডমিন 








