১১:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাদামাটিতে চাপা শ্রীলঙ্কার গাম্পোলায় ক্ষোভ-হতাশা

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 18

কাদামাটিতে চাপা শ্রীলঙ্কার গাম্পোলায় ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। শহরের সংকীর্ণ, নোংরা গলিগুলো এখন পরিণত হয়েছে ভেসে থাকা ভাঙা আসবাব, ভেজা খেলনা আর নষ্ট মাদুরের স্তূপে। ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে গত শুক্রবার এই এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে অনেক বাসিন্দাই পালানোর সুযোগ পাননি।

শহরের রাস্তাঘাটে ধ্বংসস্তূপের পাহাড়। রাস্তায় হাঁটু সমান কাদার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া বেশ কঠিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝড় আঘাত হানার আগে তারা কোনো সতর্কবার্তা পাননি। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়নি। ঝড় পরবর্তী সময়েও যথাযথ সরকারি সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

‘নয়টা মরদেহ তুলেছি’

ঝড়-বন্যার পর নিজেরাই উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন এলাকার মানুষজন। তবে কারও কারও ভাগ্যে উদ্ধার নয়, জুটেছে মরদেহ বহন করা। মোহাম্মদ ফায়রুস তেমনই একজন।

কাদাপানিতে ভরা একটি বাড়ির দিকে ইশারা করে তিনি বলেন, ‘এই বাড়ি থেকে পাঁচজনের মরদেহ তুলেছি। মোট নয়টা মরদেহ আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন>>
শ্রীলঙ্কা/ বন্যার পানিতে জেগে উঠেছে মানবতা
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি
বাংলাদেশ সরকারের জরুরি মানবিক সহায়তা শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে
বন্যায় এশিয়ার ৪ দেশে দেড় হাজার প্রাণহানি, আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে ফায়রুস বলেন, ‘যখন মরদেহ তুলছিলাম, পুলিশ–নৌবাহিনী কাউকে পাঠানো হয়নি। নৌকা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আপলোড করতে হয়েছিল।’

‘এক পরিবারের পাঁচজনই নিহত’

রাস্তার অল্প দূরে আরেকটি বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবীরা কাদা সরাচ্ছেন। একজন বলেন, ‘এখানে পাঁচজন মারা গেছেন। সবাই একই পরিবারের সদস্য—মা, বাবা, দুই মেয়ে আর এক ছেলে।’

তাদের প্রতিবেশী কুমুদু উইজেকন বলেন, ‘নিজেদের বাড়িতে ভূমিধসের ভয় ছিল, তাই তারা বন্ধুর বাড়িতে এসেছিল। যদি ওরা নিজেদের বাড়িতে থাকতো, হয়তো বেঁচে যেতো।’

‘কাছে এক টাকাও নেই’

কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি ফটো স্টুডিওতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন চামিলাকা দিলরুকশি। দুই সন্তানসহ তিনি আর স্বামী আনন্দা এই ব্যবসা চালাতেন। এখন দোকান ভরা কাদায় ডুবে থাকা ক্যামেরা, লাইট, ফ্রেম আর ছবির ছিন্নভিন্ন স্তূপ।

চামিলাকা হাতে ধরে আছেন এক প্যাকেট চাল। বন্ধুর দেওয়া এটাই তাদের একমাত্র খাবার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক টাকাও নেই ব্যবসা আবার শুরু করার মতো। ঘর বানাতেই সব সঞ্চয় খরচ হয়ে গেছে।’

চামিলাকা আরও বলেন, ‘আমরা কোনো সতর্কবার্তা পাইনি। পেলে ক্যামেরা–কম্পিউটার বাঁচাতে পারতাম।’

সরকারি ব্যর্থতায় ক্ষোভ

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আন্তর্জাতিক সহায়তাও পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদরা দুই সপ্তাহ আগেই সতর্কবার্তা দিলেও তাতে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তামিল ভাষায় পর্যাপ্ত বার্তা না দেওয়ার সমালোচনাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাম্পোলার মতো এলাকাগুলো পুনর্গঠনে দীর্ঘ সময় লাগবে। আর অর্থনৈতিক ধস থেকে সবে মাথা তুলতে থাকা দেশটির জন্য এই পুনর্নির্মাণও বড় চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: স্কাই নিউজ
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, পুড়লো ৪০ ঘর

কাদামাটিতে চাপা শ্রীলঙ্কার গাম্পোলায় ক্ষোভ-হতাশা

আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

কাদামাটিতে চাপা শ্রীলঙ্কার গাম্পোলায় ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। শহরের সংকীর্ণ, নোংরা গলিগুলো এখন পরিণত হয়েছে ভেসে থাকা ভাঙা আসবাব, ভেজা খেলনা আর নষ্ট মাদুরের স্তূপে। ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার প্রভাবে গত শুক্রবার এই এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে অনেক বাসিন্দাই পালানোর সুযোগ পাননি।

শহরের রাস্তাঘাটে ধ্বংসস্তূপের পাহাড়। রাস্তায় হাঁটু সমান কাদার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া বেশ কঠিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝড় আঘাত হানার আগে তারা কোনো সতর্কবার্তা পাননি। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়নি। ঝড় পরবর্তী সময়েও যথাযথ সরকারি সহায়তা মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের।

‘নয়টা মরদেহ তুলেছি’

ঝড়-বন্যার পর নিজেরাই উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন এলাকার মানুষজন। তবে কারও কারও ভাগ্যে উদ্ধার নয়, জুটেছে মরদেহ বহন করা। মোহাম্মদ ফায়রুস তেমনই একজন।

কাদাপানিতে ভরা একটি বাড়ির দিকে ইশারা করে তিনি বলেন, ‘এই বাড়ি থেকে পাঁচজনের মরদেহ তুলেছি। মোট নয়টা মরদেহ আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন>>
শ্রীলঙ্কা/ বন্যার পানিতে জেগে উঠেছে মানবতা
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি
বাংলাদেশ সরকারের জরুরি মানবিক সহায়তা শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে
বন্যায় এশিয়ার ৪ দেশে দেড় হাজার প্রাণহানি, আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে ফায়রুস বলেন, ‘যখন মরদেহ তুলছিলাম, পুলিশ–নৌবাহিনী কাউকে পাঠানো হয়নি। নৌকা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও আপলোড করতে হয়েছিল।’

‘এক পরিবারের পাঁচজনই নিহত’

রাস্তার অল্প দূরে আরেকটি বাড়িতে স্বেচ্ছাসেবীরা কাদা সরাচ্ছেন। একজন বলেন, ‘এখানে পাঁচজন মারা গেছেন। সবাই একই পরিবারের সদস্য—মা, বাবা, দুই মেয়ে আর এক ছেলে।’

তাদের প্রতিবেশী কুমুদু উইজেকন বলেন, ‘নিজেদের বাড়িতে ভূমিধসের ভয় ছিল, তাই তারা বন্ধুর বাড়িতে এসেছিল। যদি ওরা নিজেদের বাড়িতে থাকতো, হয়তো বেঁচে যেতো।’

‘কাছে এক টাকাও নেই’

কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি ফটো স্টুডিওতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছেন চামিলাকা দিলরুকশি। দুই সন্তানসহ তিনি আর স্বামী আনন্দা এই ব্যবসা চালাতেন। এখন দোকান ভরা কাদায় ডুবে থাকা ক্যামেরা, লাইট, ফ্রেম আর ছবির ছিন্নভিন্ন স্তূপ।

চামিলাকা হাতে ধরে আছেন এক প্যাকেট চাল। বন্ধুর দেওয়া এটাই তাদের একমাত্র খাবার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক টাকাও নেই ব্যবসা আবার শুরু করার মতো। ঘর বানাতেই সব সঞ্চয় খরচ হয়ে গেছে।’

চামিলাকা আরও বলেন, ‘আমরা কোনো সতর্কবার্তা পাইনি। পেলে ক্যামেরা–কম্পিউটার বাঁচাতে পারতাম।’

সরকারি ব্যর্থতায় ক্ষোভ

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। আন্তর্জাতিক সহায়তাও পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

আবহাওয়াবিদরা দুই সপ্তাহ আগেই সতর্কবার্তা দিলেও তাতে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তামিল ভাষায় পর্যাপ্ত বার্তা না দেওয়ার সমালোচনাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাম্পোলার মতো এলাকাগুলো পুনর্গঠনে দীর্ঘ সময় লাগবে। আর অর্থনৈতিক ধস থেকে সবে মাথা তুলতে থাকা দেশটির জন্য এই পুনর্নির্মাণও বড় চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: স্কাই নিউজ
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।