সোমবার (৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দলটির ঘোষণা অনুযায়ী, খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে। অন্যদিকে, তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর বিএনপির দায়িত্ব নিয়ে ১৯৯১ সালে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেন খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমান এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যদিও ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন, কিন্তু সেই নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকে দলীয় কার্যক্রম তাকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছে, তবে তারেক রহমান এসব কর্মকাণ্ড লন্ডন থেকে পরিচালনা করে আসছেন।
এর আগে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিরাট জয় নিয়ে সরকারে আসার পর তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
অনেকে মনে করেন, সেই সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই খালেদা জিয়া কার্যত তখনই তারেক রহমানকে দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেছিলেন।
যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন- এ নিয়ে রাজনৈতিক সংকটের মুখে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি চরম সংকটে পড়েছিল। ওই বছরের ৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয়েছিল তারেক রহমানকে। পরে তার মা খালেদা জিয়াও গ্রেফতার হন।
আঠারো মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর আগে ১৩টি মামলায় জামিন পান তারেক রহমান।
এরপর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে। তারেক রহমান লন্ডন যাত্রার আগে তার মা খালেদা জিয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে সুস্থ না হয়ে উঠা পর্যন্ত তারেক রহমান রাজনীতির বাইরে থাকবেন।
তবে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন যে ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন:
বিএনপির কাছে ৩০০ আসনের ২২২ আসনই চায় মিত্ররা
বিএনপির আসন বণ্টনের ইতিহাস
এর মধ্যেই লন্ডন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন তারেক রহমান। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হলে দলের পূর্ণ কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব তার হাতেই উঠে আসে।
দলটির সভা সমাবেশে গত কয়েক বছর ধরে নেতাকর্মীদের কাছে তারেক রহমানকেই মুখ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডন সফরে গেলে সাত বছর পর তার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ হয়।
কিন্তু দলটির সার্বিক কর্মকাণ্ড তারেক রহমানের নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি লন্ডনে তার সঙ্গে বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তবে দলটির একাধিক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় ছিল অনেক, কারণ তিনি অনেক দিন ধরেই হাসপাতালে বা বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন।
নেতাদের ধারণা ছিল প্রতীকী হিসেবে খালেদা জিয়া হয়তো একটি আসনে থাকবেন আর মূল নেতা হিসেবে তারেক রহমানই হয়তো একাধিক আসনে নির্বাচন করবেন।
কিন্তু দলের প্রার্থী ঘোষণার পর দেখা গেলো খালেদা জিয়া তিনটি আসনে আর তারেক রহমান একটি আসনে নির্বাচন করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি এই বার্তাই দিয়েছে যে- খালেদা জিয়া এখনো সক্রিয় আছেন এবং তিনিই দলটির শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করে আনাটা হলো দলটির নির্বাচনি কৌশলের অংশ। দলটির অবস্থান বা নির্বাচন নিয়ে যে অনেক প্রশ্ন এখনো আছে, সে বিষয়ে একটা বার্তা গেছে যে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। আর খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি কাজে লাগানোর কৌশল তো আছেই।
তারমতে, তারেক রহমান এখনো দেশে না আসায় তার ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা বা উদ্বেগ এখনো কাটেনি।
নির্বাচন ও সরকারের কে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির হয়ে তা এখনো পরিষ্কার না। এমনও হতে পারে যে খালেদা জিয়া দলনেতা হিসেবেই থাকবেন, আর দলটি সরকার গঠন করলে তাতে নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান।
তবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের কথায় এটা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে যে, তারা নির্বাচনে জিতলে তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেবেন, এই চিন্তাই দলের মধ্যে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
যদিও এসব কিছুই স্পষ্ট হবে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসার পর। যদিও তিনি কবে ফিরবেন তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো তার দল জানাতে পারেনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএনআর/জেআইএম
এডমিন 








