০১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলকামান দাগা নয় শিক্ষকের বেঁচে থাকার সুযোগ দিন

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • 0

মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্মী মাসিক বেতন পান ১০ হাজার টাকা। বাড়তি পান ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুবিধা,পোশাক-পরিচ্ছদ ও ঈদে-পার্বণে বকশিস।সব মিলে ১৮/১৯ হাজার টাকা রোজগার তাঁর প্রতি মাসে। ছোটা বুয়া হিসেবে পরিচিত গৃহকর্মীর আয় তার চেয়ে ঢের বেশি।

কিন্তু মানুষ গড়ার কারিগর খ্যাত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক,যাকে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জনের জন্য ১৫/২০ বছর লেখাপড়া করতে হয়,বাবার পকেটের কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়ে যায়,চাকরি লাভের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে সোনার হরিণ চাকরিটা কপালে জুটে তাঁর। এত ঝক্কিঝামেলা ও ব্যয়ের পর চাকরিতে বেতন হয় মাসিক বেতন ১১ হাজার টাকা।বাড়তি সুযোগ সুবিধাসহ তার আয় উল্লেখিত গৃহকর্মীর সমান। এই কথাগুলো গৃহকর্মীকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে বলছি না। যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিনিয়োগ ও শ্রমের বিষয়টি এখানে আলোচ্য।দক্ষতা শিক্ষা ও মর্যাদার প্রসঙ্গটিও। প্রশ্ন সেখানেই- মানুষ গড়ার কারিগর বিশেষণ যুক্ত করে দিলাম আর তাকে বেতন দেওয়া হলো গৃহকর্মীর সমান,তাইলে তাঁর সন্মানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর আমরা যে চিৎকার করছি, মেধাভিত্তিক মূল্যায়ণ হতে হবে, এর কোনো লেশ কি পাওয়া যাবে এই ব্যবস্থায়?

জবাব পেতে নজর দেওয়া যেতে পারে ঢাকার রাজপথে। কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের ৬৫ হাজারের বেশি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকগণ আন্দোলন করছেন।তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু যেন দেওয়া হয়,তাদের ন্যায্য বেতনটুকু যেন রাষ্ট্র তাদের প্রদান করে। রাষ্ট্রের অপরাপর কর্মচারী এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও যেভাবে শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে, সেটুকু যেন তাদেরও দেওয়া হয়- এটুকুই তাদের দাবি। তাদের এই চাওয়াটুকু কি খুব বেশি কিছু?

দ্রুত গতিতে এবং ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষকদের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের পথ সরকারকেই বের করতে হবে। এমন পথেই সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে শিক্ষকদের ক্ষোভ মিটে যায়। রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাকে যেন তারা বিবেচনায় আনে, সেদিকটিও দেখতে হবে।আর সেইজন্য প্রয়োজন আলোচনা।সরকার সে পথে এখনও ওইভাবে আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে অতি দ্রুত আলোচনায় বসে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে আগামী মাসেই বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

হয়তো সবাই বলবেন,দাবি ন্যায্য। সবাই বলবেন, তাঁরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষক,সন্মানীয়ও বটে। কিন্তু সেই সন্মানীয়রা যখন পুলিশের পিটুনি খায়,জলকামানের মুখে নাকানিচুবানী খায়,তখন কিন্তু একবাক্যে বলতে হবে-এটা অন্যায়,এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রশ্ন আসতে পারে-এই মানুষগুলোর ভাগ্যই কি তাহলে এমন?

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এমন শিক্ষকদেরই অনেককে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।কারো কারো গায়ে হাত তোলা হয়েছে।কাউকে কাউকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।ওই মব সংস্কৃতির ভিকটিম শিক্ষকদের বলা হতো, তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর।তখন শিক্ষকদের এই অপমানে অনেকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার পরও কেউ কেউ মব সংস্কৃতিকে জায়েজ করার পক্ষেও কথা বলেছেন।দুঃখজনক হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শিক্ষক ঢাকার রাজপথে একত্রিত হয়ে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যে দাবি জানাচ্ছেন, এবারও বলা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে।ফ্যাসিস্টরা শিক্ষকদের উস্কে দিচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এমন মন্তব্য কিন্তু ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমেই এসেছে। কী সাংঘাতিক কথা! ন্যায্য দাবি আদায়ে কেউ রাজপথে নামলে তাকে ফ্যাসিস্ট এর দোসর হয়ে যেতে হবে? আর যদি তারা ফ্যাসিস্ট এর দোসর হয়ে থাকে তখন বিষয়টা আরও জটিল বলে গণ্য হতে পারে।তার মানে দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকই কি স্বৈরাচারের দোসর? প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি প্রশ্ন কিন্তু করতেই হয়- প্রায় ৪ লাখ শিক্ষকই কি জুলাই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ছিলেন?তাদের কি অংশগ্রহণ ছিলো না জুলাই অভ্যুত্থানে?

এমনটা দেশের মানুষ আগের সরকার আমলেও দেখেছে। সরকারের কাজের সমালোচনা কিংবা আন্দোলনকারীদের এভাবেই ট্যাগ দেওয়া হতো। কিন্তু ভাবা হতো না এই মানুষগুলোর রুটি রোজীর দাবির সঙ্গে হয়তো কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে পারে, তবে মানুষগুলো রাজনৈতিক দাবার গুটি নয়।

তাদের দাবিগুলো কি নতুন কিছু?তারা গত মে জুন মাসেও আন্দোলন করেছে।এভাবেই তারা পুলিশের পিটুনি খেয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার ওয়াদাকে শেষ পর্যন্ত তারা সন্মান জানিয়েছেন।উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, অনুরোধ করেছিলেন-ক্লাসে গিয়ে আবার পাঠদানের জন্য।শিক্ষকগণ কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল উপদেষ্টাকে সন্মান জানিয়েছেন,বিশ্বাস করেছেন। এর পরের অবস্থা কি-তা এই মুহূর্তে শিক্ষকদের পুলিশের পিটুনি খাওয়া এবং জলকামানের মুখে পড়াই প্রমাণ করে দেয়।

আসলে এই শিক্ষকদের ধৈর্য আছে।কিংবা বলা চলে চাকরির মায়ায় তারা চুপ করে থাকেন। তাঁরা পদোন্নতির যে দাবি করেছেন, এটাকে কি অযৌক্তিক বলার সুযোগ আছে?অবশ্যই না।সরকার পদোন্নতির বিধান করার মাধ্যমে তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ দিয়েছে।শিক্ষকদের দাবি শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবেন পদোন্নতি মাধ্যমে। সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ২০ভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে সরকারিভাবে। বর্তমান এই হারকে যদি মেনেও নেয়া হয় তারপরও অবস্থাটা কি? এটা কি বিশ্বাস করা যায়! দেশের ৫২ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য! ৬৫ হাজারের বেশি স্কুলে ২৪ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন ধরে।

এই যখন আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা সেখানে সুষ্ঠু শিক্ষাদান কার্যক্রমের আশা করা নিতান্তই দুরাশা বলে মনে করি।তার ওপর আছে অব্যবস্থাপনাগত দিক।এমনও দেখা গেছে কোনো বিদ্যালয়ে হয়তো পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র দুইজন কিংবা তিনজন। যার মধ্যে একজনকে আবার কারণিক কাজ ও সরকারি যোগাযোগও করতে হয়। ছোট হলেও প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। এই বেহাল অবস্থায় কী শিক্ষাদান চলে তা কি বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে?

মাস খানেকের মধ্যে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ হয়েছে অধিকাংশ স্কুলেই সিলেবাসের ৫০শতাংশেরও কম সম্পন্ন করা হয়েছে।এই শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের দায় নেবে কে? বলা হয়ে থাকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মামলা মোকদ্দমার কারণে শিক্ষক নিয়োগে সরকার মনোযোগী হতে পারেনি। দেশের লাখ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে এমন বাহানার যুক্তি নেই। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে এতদিনে শিক্ষকবিহীন স্কুল শূন্যে নেমে আসতো। শিক্ষার নিন্মমান নিয়ে যে হরহামেশা অভিযোগ শোনা যায় তখন সেই অভিযোগটি হতো যৌক্তিক।এখন কাকে প্রশ্ন করা হবে,শিক্ষার মান উন্নত নয় কেন? হাই স্কুলে কেন মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না এর জবাব প্রাথমিকের এই দুরবস্থাই বলে দেয়। কোটি শিক্ষার্থীর ভিতই যেখানে পোক্ত নয় সেখানে ১৫/২০ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০-৫০% অকৃতকার্য হওয়াটা খুব বেশি মনে হয় না।

পদোন্নতির বিষয়টি কার্যকর না করে সরকার নতুন নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এখানেও নতুন ফেকড়া তৈরি করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারিরচর্চা শিক্ষক ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়ে।কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।কিন্তু শিশুদের মানসিক বিকাশের পথ বন্ধ করে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।সম্প্রতি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এর প্রতিবাদে মিছিল মানববন্ধনও করেছে।

সরকার হয়তো বলতে পারে এই মুহূর্তে শিক্ষকদের দাবি দাওয়া মেনে নিলে অর্থ সংস্থানের সুরাহা হবে কিভাবে? মনে রাখা প্রয়োজন-আগেই শিক্ষকদের সংকটের কথা তারা আন্দোলন করে সরকারকে জানিয়েছে। যদি নাও জানানো হতো তাতেও সরকারের নিজেরই জানার কথা স্কুলগুলোর কি অবস্থা। বাজেটে অর্থ সংস্থান না করলে এর সমাধান না করার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি ইতিপূর্বে মেনে নিয়েছে সরকার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিও তাদের মেনে নেয়া উচিত। আগামী বাজেটের দোহাই দিয়ে শিক্ষকদের কতটা বিশ্বাসে আনা যাবে তাও বোধগম্য নয়। কারণ সরকারের তরফ থেকে ইতিপূর্বে কথা দিয়েও তা মানা হয়নি।তার মধ্যে আবার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।বর্তমানে ঝুলে থাকা কোনো সিদ্ধান্ত নতুন সরকার কিভাবে সমাধান করবে সেই চিন্তাও শিক্ষকদের আছে। তাই একথা বলা যাবে না,নতুন পদোন্নতি মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব নয়,কিংবা সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য সম্ভবত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা বলেছেনও। সরকার কি এখনও মনে করছে পাশ কাটিয়ে সময় পার করে দেওয়া যাবে? মনে রাখার প্রয়োজন আছে এই তিন লাখ শিক্ষক আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় ভূমিকা পালন করবেন। তাদের অভুক্ত রেখে কিংবা তাদের বিগড়ে দিয়ে অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব পালনে কি তাদের বাধ্য করানো যাবে?

নিবন্ধের শুরুতে গৃহকর্মীর প্রসঙ্গ টানা হয়েছিলো। শেষাংশে গৃহকর্মীর একটি উদাহরণ দিতে চাই। এটা আমাদের পারিবারিক একটি উদাহরণ। আমার দাদীর সহকারী ছিলেন এক মহিলা। দাদীর বান্ধবীর মতো। আমরা ডাকতাম ধনীর মা ফুপু বলে। ১৮ বছর বয়সে বিধবা হয়ে দাদীর সহকারী হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন।থাকতেন আমাদের ঘরে।কালে-ভদ্রে আমাদের পাড়াতেই তার মেয়ের বাড়িতে যেতেন। ধনীর মা ফুপুর মতো আম্মার সহকারী ছিলেন জড়িনার মা ফুপু। একই পাড়ায় দুজনের বাড়ি। আমাদের পরিবারে তাদের অবদান বিশাল। যে কারণে আমরা বলতাম ধনীর মা ফুপুর হাতের এক মণ ডাল না খেলে বিএ পাস করা যাবে না। তো সেই ধনীর মা ফুপু এবং জড়িনার মা ফুপুর পুরো জীবন কাটিয়েছেন আমাদের ঘরে। তাদের পারিশ্রমিক ছিলো মাত্র ৩ বেলা খাবার। ঈদের সময় ফেৎরার টাকা।শহর থেকে চাচা ফুপুরা গেলে কাপড়চোপড় ও কিছু বকশিস আর ওষুধপত্র। আজকের ধনীর মা ফুপুদের অবস্থা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ভাগ্য কিভাবে বদলে গেছে সেখানে বলা আছে।

সেই তুলনায় আমাদের মানুষ গড়ার কারিগরদের ভাগ্য কি পরিবর্তন হয়েছে? হয়নি। ধনীর মা ফুপুদের এটা পাওনা ছিলো এবং সেটা অর্জন হয়েছে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে। শিক্ষকদের পরিবর্তনটা করতে হবে আমাদের। এবং এর দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

দ্রুত গতিতে এবং ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষকদের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের পথ সরকারকেই বের করতে হবে। এমন পথেই সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে শিক্ষকদের ক্ষোভ মিটে যায়। রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাকে যেন তারা বিবেচনায় আনে, সেদিকটিও দেখতে হবে।আর সেইজন্য প্রয়োজন আলোচনা।সরকার সে পথে এখনও ওইভাবে আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে অতি দ্রুত আলোচনায় বসে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে আগামী মাসেই বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

লেখক-সাংবাদিক,শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

জলকামান দাগা নয় শিক্ষকের বেঁচে থাকার সুযোগ দিন

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্মী মাসিক বেতন পান ১০ হাজার টাকা। বাড়তি পান ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুবিধা,পোশাক-পরিচ্ছদ ও ঈদে-পার্বণে বকশিস।সব মিলে ১৮/১৯ হাজার টাকা রোজগার তাঁর প্রতি মাসে। ছোটা বুয়া হিসেবে পরিচিত গৃহকর্মীর আয় তার চেয়ে ঢের বেশি।

কিন্তু মানুষ গড়ার কারিগর খ্যাত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক,যাকে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জনের জন্য ১৫/২০ বছর লেখাপড়া করতে হয়,বাবার পকেটের কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়ে যায়,চাকরি লাভের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে সোনার হরিণ চাকরিটা কপালে জুটে তাঁর। এত ঝক্কিঝামেলা ও ব্যয়ের পর চাকরিতে বেতন হয় মাসিক বেতন ১১ হাজার টাকা।বাড়তি সুযোগ সুবিধাসহ তার আয় উল্লেখিত গৃহকর্মীর সমান। এই কথাগুলো গৃহকর্মীকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে বলছি না। যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিনিয়োগ ও শ্রমের বিষয়টি এখানে আলোচ্য।দক্ষতা শিক্ষা ও মর্যাদার প্রসঙ্গটিও। প্রশ্ন সেখানেই- মানুষ গড়ার কারিগর বিশেষণ যুক্ত করে দিলাম আর তাকে বেতন দেওয়া হলো গৃহকর্মীর সমান,তাইলে তাঁর সন্মানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আর আমরা যে চিৎকার করছি, মেধাভিত্তিক মূল্যায়ণ হতে হবে, এর কোনো লেশ কি পাওয়া যাবে এই ব্যবস্থায়?

জবাব পেতে নজর দেওয়া যেতে পারে ঢাকার রাজপথে। কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের ৬৫ হাজারের বেশি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকগণ আন্দোলন করছেন।তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু যেন দেওয়া হয়,তাদের ন্যায্য বেতনটুকু যেন রাষ্ট্র তাদের প্রদান করে। রাষ্ট্রের অপরাপর কর্মচারী এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও যেভাবে শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে, সেটুকু যেন তাদেরও দেওয়া হয়- এটুকুই তাদের দাবি। তাদের এই চাওয়াটুকু কি খুব বেশি কিছু?

দ্রুত গতিতে এবং ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষকদের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের পথ সরকারকেই বের করতে হবে। এমন পথেই সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে শিক্ষকদের ক্ষোভ মিটে যায়। রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাকে যেন তারা বিবেচনায় আনে, সেদিকটিও দেখতে হবে।আর সেইজন্য প্রয়োজন আলোচনা।সরকার সে পথে এখনও ওইভাবে আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে অতি দ্রুত আলোচনায় বসে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে আগামী মাসেই বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

হয়তো সবাই বলবেন,দাবি ন্যায্য। সবাই বলবেন, তাঁরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষক,সন্মানীয়ও বটে। কিন্তু সেই সন্মানীয়রা যখন পুলিশের পিটুনি খায়,জলকামানের মুখে নাকানিচুবানী খায়,তখন কিন্তু একবাক্যে বলতে হবে-এটা অন্যায়,এটা অগ্রহণযোগ্য। প্রশ্ন আসতে পারে-এই মানুষগুলোর ভাগ্যই কি তাহলে এমন?

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এমন শিক্ষকদেরই অনেককে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।কারো কারো গায়ে হাত তোলা হয়েছে।কাউকে কাউকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।ওই মব সংস্কৃতির ভিকটিম শিক্ষকদের বলা হতো, তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর।তখন শিক্ষকদের এই অপমানে অনেকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার পরও কেউ কেউ মব সংস্কৃতিকে জায়েজ করার পক্ষেও কথা বলেছেন।দুঃখজনক হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শিক্ষক ঢাকার রাজপথে একত্রিত হয়ে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যে দাবি জানাচ্ছেন, এবারও বলা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে।ফ্যাসিস্টরা শিক্ষকদের উস্কে দিচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এমন মন্তব্য কিন্তু ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমেই এসেছে। কী সাংঘাতিক কথা! ন্যায্য দাবি আদায়ে কেউ রাজপথে নামলে তাকে ফ্যাসিস্ট এর দোসর হয়ে যেতে হবে? আর যদি তারা ফ্যাসিস্ট এর দোসর হয়ে থাকে তখন বিষয়টা আরও জটিল বলে গণ্য হতে পারে।তার মানে দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষকই কি স্বৈরাচারের দোসর? প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি প্রশ্ন কিন্তু করতেই হয়- প্রায় ৪ লাখ শিক্ষকই কি জুলাই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ছিলেন?তাদের কি অংশগ্রহণ ছিলো না জুলাই অভ্যুত্থানে?

এমনটা দেশের মানুষ আগের সরকার আমলেও দেখেছে। সরকারের কাজের সমালোচনা কিংবা আন্দোলনকারীদের এভাবেই ট্যাগ দেওয়া হতো। কিন্তু ভাবা হতো না এই মানুষগুলোর রুটি রোজীর দাবির সঙ্গে হয়তো কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে পারে, তবে মানুষগুলো রাজনৈতিক দাবার গুটি নয়।

তাদের দাবিগুলো কি নতুন কিছু?তারা গত মে জুন মাসেও আন্দোলন করেছে।এভাবেই তারা পুলিশের পিটুনি খেয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার ওয়াদাকে শেষ পর্যন্ত তারা সন্মান জানিয়েছেন।উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন, অনুরোধ করেছিলেন-ক্লাসে গিয়ে আবার পাঠদানের জন্য।শিক্ষকগণ কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল উপদেষ্টাকে সন্মান জানিয়েছেন,বিশ্বাস করেছেন। এর পরের অবস্থা কি-তা এই মুহূর্তে শিক্ষকদের পুলিশের পিটুনি খাওয়া এবং জলকামানের মুখে পড়াই প্রমাণ করে দেয়।

আসলে এই শিক্ষকদের ধৈর্য আছে।কিংবা বলা চলে চাকরির মায়ায় তারা চুপ করে থাকেন। তাঁরা পদোন্নতির যে দাবি করেছেন, এটাকে কি অযৌক্তিক বলার সুযোগ আছে?অবশ্যই না।সরকার পদোন্নতির বিধান করার মাধ্যমে তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণ দিয়েছে।শিক্ষকদের দাবি শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবেন পদোন্নতি মাধ্যমে। সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে ২০ভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে সরকারিভাবে। বর্তমান এই হারকে যদি মেনেও নেয়া হয় তারপরও অবস্থাটা কি? এটা কি বিশ্বাস করা যায়! দেশের ৫২ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য! ৬৫ হাজারের বেশি স্কুলে ২৪ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য দীর্ঘদিন ধরে।

এই যখন আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা সেখানে সুষ্ঠু শিক্ষাদান কার্যক্রমের আশা করা নিতান্তই দুরাশা বলে মনে করি।তার ওপর আছে অব্যবস্থাপনাগত দিক।এমনও দেখা গেছে কোনো বিদ্যালয়ে হয়তো পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র দুইজন কিংবা তিনজন। যার মধ্যে একজনকে আবার কারণিক কাজ ও সরকারি যোগাযোগও করতে হয়। ছোট হলেও প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। এই বেহাল অবস্থায় কী শিক্ষাদান চলে তা কি বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে?

মাস খানেকের মধ্যে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ হয়েছে অধিকাংশ স্কুলেই সিলেবাসের ৫০শতাংশেরও কম সম্পন্ন করা হয়েছে।এই শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের দায় নেবে কে? বলা হয়ে থাকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মামলা মোকদ্দমার কারণে শিক্ষক নিয়োগে সরকার মনোযোগী হতে পারেনি। দেশের লাখ লাখ শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে এমন বাহানার যুক্তি নেই। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে এতদিনে শিক্ষকবিহীন স্কুল শূন্যে নেমে আসতো। শিক্ষার নিন্মমান নিয়ে যে হরহামেশা অভিযোগ শোনা যায় তখন সেই অভিযোগটি হতো যৌক্তিক।এখন কাকে প্রশ্ন করা হবে,শিক্ষার মান উন্নত নয় কেন? হাই স্কুলে কেন মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না এর জবাব প্রাথমিকের এই দুরবস্থাই বলে দেয়। কোটি শিক্ষার্থীর ভিতই যেখানে পোক্ত নয় সেখানে ১৫/২০ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০-৫০% অকৃতকার্য হওয়াটা খুব বেশি মনে হয় না।

পদোন্নতির বিষয়টি কার্যকর না করে সরকার নতুন নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এখানেও নতুন ফেকড়া তৈরি করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারিরচর্চা শিক্ষক ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়ে।কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।কিন্তু শিশুদের মানসিক বিকাশের পথ বন্ধ করে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।সম্প্রতি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এর প্রতিবাদে মিছিল মানববন্ধনও করেছে।

সরকার হয়তো বলতে পারে এই মুহূর্তে শিক্ষকদের দাবি দাওয়া মেনে নিলে অর্থ সংস্থানের সুরাহা হবে কিভাবে? মনে রাখা প্রয়োজন-আগেই শিক্ষকদের সংকটের কথা তারা আন্দোলন করে সরকারকে জানিয়েছে। যদি নাও জানানো হতো তাতেও সরকারের নিজেরই জানার কথা স্কুলগুলোর কি অবস্থা। বাজেটে অর্থ সংস্থান না করলে এর সমাধান না করার দায়ও সরকারকেই নিতে হবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি ইতিপূর্বে মেনে নিয়েছে সরকার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিও তাদের মেনে নেয়া উচিত। আগামী বাজেটের দোহাই দিয়ে শিক্ষকদের কতটা বিশ্বাসে আনা যাবে তাও বোধগম্য নয়। কারণ সরকারের তরফ থেকে ইতিপূর্বে কথা দিয়েও তা মানা হয়নি।তার মধ্যে আবার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনা করতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।বর্তমানে ঝুলে থাকা কোনো সিদ্ধান্ত নতুন সরকার কিভাবে সমাধান করবে সেই চিন্তাও শিক্ষকদের আছে। তাই একথা বলা যাবে না,নতুন পদোন্নতি মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব নয়,কিংবা সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য সম্ভবত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা বলেছেনও। সরকার কি এখনও মনে করছে পাশ কাটিয়ে সময় পার করে দেওয়া যাবে? মনে রাখার প্রয়োজন আছে এই তিন লাখ শিক্ষক আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় ভূমিকা পালন করবেন। তাদের অভুক্ত রেখে কিংবা তাদের বিগড়ে দিয়ে অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব পালনে কি তাদের বাধ্য করানো যাবে?

নিবন্ধের শুরুতে গৃহকর্মীর প্রসঙ্গ টানা হয়েছিলো। শেষাংশে গৃহকর্মীর একটি উদাহরণ দিতে চাই। এটা আমাদের পারিবারিক একটি উদাহরণ। আমার দাদীর সহকারী ছিলেন এক মহিলা। দাদীর বান্ধবীর মতো। আমরা ডাকতাম ধনীর মা ফুপু বলে। ১৮ বছর বয়সে বিধবা হয়ে দাদীর সহকারী হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন।থাকতেন আমাদের ঘরে।কালে-ভদ্রে আমাদের পাড়াতেই তার মেয়ের বাড়িতে যেতেন। ধনীর মা ফুপুর মতো আম্মার সহকারী ছিলেন জড়িনার মা ফুপু। একই পাড়ায় দুজনের বাড়ি। আমাদের পরিবারে তাদের অবদান বিশাল। যে কারণে আমরা বলতাম ধনীর মা ফুপুর হাতের এক মণ ডাল না খেলে বিএ পাস করা যাবে না। তো সেই ধনীর মা ফুপু এবং জড়িনার মা ফুপুর পুরো জীবন কাটিয়েছেন আমাদের ঘরে। তাদের পারিশ্রমিক ছিলো মাত্র ৩ বেলা খাবার। ঈদের সময় ফেৎরার টাকা।শহর থেকে চাচা ফুপুরা গেলে কাপড়চোপড় ও কিছু বকশিস আর ওষুধপত্র। আজকের ধনীর মা ফুপুদের অবস্থা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের ভাগ্য কিভাবে বদলে গেছে সেখানে বলা আছে।

সেই তুলনায় আমাদের মানুষ গড়ার কারিগরদের ভাগ্য কি পরিবর্তন হয়েছে? হয়নি। ধনীর মা ফুপুদের এটা পাওনা ছিলো এবং সেটা অর্জন হয়েছে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের কারণে। শিক্ষকদের পরিবর্তনটা করতে হবে আমাদের। এবং এর দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

দ্রুত গতিতে এবং ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষকদের সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধানের পথ সরকারকেই বের করতে হবে। এমন পথেই সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে শিক্ষকদের ক্ষোভ মিটে যায়। রাষ্ট্রের সীমাবদ্ধতাকে যেন তারা বিবেচনায় আনে, সেদিকটিও দেখতে হবে।আর সেইজন্য প্রয়োজন আলোচনা।সরকার সে পথে এখনও ওইভাবে আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভেবে অতি দ্রুত আলোচনায় বসে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে আগামী মাসেই বার্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।

লেখক-সাংবাদিক,শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

এইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।