০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলাবদ্ধতা-অভাব-আতঙ্ক, দুর্গাপূজার উৎসব নেই বাড়েধাপাড়ায়

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 15

জলাবদ্ধতা, অভাব-অনটন আর আতঙ্কে দুর্গাপূজার উৎসব নেই যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েধাপাড়ায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মাঝে। পানিবন্দি টানাটানির সংসারে তিনবেলা আহার জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। প্রায় চার মাস ধরে জলাবদ্ধতায় মাছ শিকার ও শাপলা বিক্রি করে চলছে তাদের সংসার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামের চারিদিকে পানি আর পানি। জলাবদ্ধতায় বাড়েধাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর যাতায়াতের একমাত্র বাহন তালের ডোঙা। বসতঘরের বারান্দা থেকে রাস্তা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখনো অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা রয়েছেন আত্মগোপনে। বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা জলাবদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্গাপূজা শুরু হলেও তাদের চোখেমুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। নেই উৎসবের কোনো আমেজ।

গণমাধ্যমকর্মী দেখে বাড়েধাপাড়ার প্রশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ‌‘চলতি বছরের ২২ মে নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৮টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বছরের জন্য মজুত খাবার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে আমরা পাশের গ্রামে পালিয়ে যাই। পরে পাল্টাপাল্টি মামলা হলে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। অন্যরা আটক আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে ওই মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।’

jagonews24

মৃত পাগল চান বিশ্বাসের স্ত্রী সবিতা বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুরু হলেও উৎসব করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। কারণ যে মৎস্যঘের নিয়ে দ্বন্দ্বে একজন খুন হলেন, সেই মৎস্যঘেরের মাছ লুট হয়েছে। এখন দিনের খাবার জোগাতে কষ্ট হয়। বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কেনার টাকা নেই। শিকার করা মাছ বাজারে বিক্রি করে চাল কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন শাপলা দিয়ে ভাত খেতে হয়। খুবই কষ্টে জীবন চলছে। এর মধ্যে উৎসব করার ইচ্ছ বা সামর্থ্য কিছুই আমাদের নেই।’

মৃত গোপাল বিশ্বাসের ছেলে বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, ‘ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন ঘর নির্মাণসহ সংস্কার ও আসবাবপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কেউ খবর রাখে না। আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

এ বিষয়ে সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা পেয়েছিল। তবে দুর্গোৎসবের বিষয়ে তাদের জন্য কোনো সহযোগিতা আসেনি। তারপরও পরিষদের উদ্যোগে তাদের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মতুয়া সম্প্রদায়ের অসহায় পরিবারগুলোর জন্য পূজার মধ্যেই কিছু উপহার দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে।

মিলন রহমান/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

ফরিদপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি মামলা

জলাবদ্ধতা-অভাব-আতঙ্ক, দুর্গাপূজার উৎসব নেই বাড়েধাপাড়ায়

আপডেট সময়ঃ ০৬:০০:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জলাবদ্ধতা, অভাব-অনটন আর আতঙ্কে দুর্গাপূজার উৎসব নেই যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েধাপাড়ায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মাঝে। পানিবন্দি টানাটানির সংসারে তিনবেলা আহার জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। প্রায় চার মাস ধরে জলাবদ্ধতায় মাছ শিকার ও শাপলা বিক্রি করে চলছে তাদের সংসার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটী গ্রামের চারিদিকে পানি আর পানি। জলাবদ্ধতায় বাড়েধাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর যাতায়াতের একমাত্র বাহন তালের ডোঙা। বসতঘরের বারান্দা থেকে রাস্তা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখনো অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা রয়েছেন আত্মগোপনে। বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা জলাবদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্গাপূজা শুরু হলেও তাদের চোখেমুখে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। নেই উৎসবের কোনো আমেজ।

গণমাধ্যমকর্মী দেখে বাড়েধাপাড়ার প্রশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ‌‘চলতি বছরের ২২ মে নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৮টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বছরের জন্য মজুত খাবার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে আমরা পাশের গ্রামে পালিয়ে যাই। পরে পাল্টাপাল্টি মামলা হলে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। অন্যরা আটক আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে ওই মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য আমাদের নেই।’

jagonews24

মৃত পাগল চান বিশ্বাসের স্ত্রী সবিতা বিশ্বাস বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুরু হলেও উৎসব করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। কারণ যে মৎস্যঘের নিয়ে দ্বন্দ্বে একজন খুন হলেন, সেই মৎস্যঘেরের মাছ লুট হয়েছে। এখন দিনের খাবার জোগাতে কষ্ট হয়। বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য নতুন পোশাক কেনার টাকা নেই। শিকার করা মাছ বাজারে বিক্রি করে চাল কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন শাপলা দিয়ে ভাত খেতে হয়। খুবই কষ্টে জীবন চলছে। এর মধ্যে উৎসব করার ইচ্ছ বা সামর্থ্য কিছুই আমাদের নেই।’

মৃত গোপাল বিশ্বাসের ছেলে বিষ্ণুপদ বিশ্বাস বলেন, ‘ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন ঘর নির্মাণসহ সংস্কার ও আসবাবপত্র দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কেউ খবর রাখে না। আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

এ বিষয়ে সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা পেয়েছিল। তবে দুর্গোৎসবের বিষয়ে তাদের জন্য কোনো সহযোগিতা আসেনি। তারপরও পরিষদের উদ্যোগে তাদের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মতুয়া সম্প্রদায়ের অসহায় পরিবারগুলোর জন্য পূজার মধ্যেই কিছু উপহার দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে।

মিলন রহমান/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।