০৮:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিয়া উদ্যান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 2

জিয়া উদ্যান রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধি এখানে অবস্থিত। তার সমাধিকে কেন্দ্র করে সমাধি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী উদ্যান এবং লেকটি দেখতে আসেন। শহরের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি উত্তম জায়গা। ঢাকা শহরের উদ্যানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যান।

প্রথমদিকে উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’। নামকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতামত পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেখান থেকেই এ নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, দক্ষিণপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর নাম চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছিলেন।

১৯৮১ সালে এখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করা হয়। এলাকাটিকে পরিষ্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য মনোরম স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন।

জিয়া উদ্যান শেরে বাংলা নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। উদ্যানের দক্ষিণে জাতীয় সংসদ ভবন, উত্তরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ও একসময়ের বাণিজ্য মেলার মাঠ, পশ্চিমে গণভবন এবং পূর্বে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর অবস্থিত। উদ্যানটি ৭৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত।

জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স দেশের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন সমাধি কমপ্লেক্স ও উদ্যান দেখার জন্য। উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সমাধির পূর্ব ও পশ্চিমে আছে ক্যান্টিন, দক্ষিণে ঝুলন্ত সেতু, উত্তরে মেমোরিয়াল হল ও মসজিদ।

আরও পড়ুন
জাবালে নূর: মক্কার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র 
শীতে ঘুরে আসুন পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি 

জিয়াউর রহমানের সমাধির দক্ষিণ পাশে ক্রিসেন্ট লেক। এটি বাঁকা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় ক্রিসেন্ট লেক নাম রাখা হয়। দক্ষিণ পাশে চমৎকার করে সিঁঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বসার স্থান করা হয়েছে চারপাশে। ভেতরে প্রবেশের জন্য লেকের মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম সেতু। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর দুপাশে দুটি ফোয়ারা। সন্ধ্যার পর ফোয়ারাগুলো চালু হলে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম চত্বরে দুটি সুশোভিত বাগান। তাতে আছে বিভিন্ন রকমের ফুল আর পাতা বাহারের সমাহার। লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি সবুজ ঘাস ও গাছগাছালি। বাগানের মধ্যে আছে খোলা চত্বর, যা ওপেন থিয়েটার বা পথ নাটকের জন্য আদর্শ স্থান। পূর্ব ও পশ্চিম অক্ষ বরাবর সুদৃশ্য দুটি ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে করা হয়েছে খোলা চত্বর। যারা প্রাত্যহিক ভ্রমণ, বিশ্রাম বা সমাধি জিয়ারতের জন্য আসেন; তাদের জন্য রাস্তাগুলো তৈরি হয়েছে আলাদাভাবে।

এখানে টয়লেট, বিশ্রামাগার, ফাস্টফুডের দোকান, বিশ্রাম নেওয়ার চমৎকার সব বেঞ্চ আছে। বসার স্থানগুলোয় সাদা পাথর বসানো। রোদ-বৃষ্টিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ছাউনি। সমাধি কমপ্লেক্সে আছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় পুরো এলাকার নিরাপত্তা ও সাউন্ড সিস্টেম। রাস্তায় লাইট পোস্টের সঙ্গে আছে গোপন সাউন্ড বক্স, যা এখানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নতুন চমক। বক্সগুলোতে বাজানো হয় কোরআন তেলাওয়াত ও দেশাত্মবোধক গান।

জিয়াউর রহমানের সমাধির পূর্ব ও পশ্চিম পাশের উদ্যানের ভেতরে আছে দুটি পুকুর। পুকুরকে সংস্কার করে দর্শনীয় করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট করা হয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে বিভিন্ন দলে, বিভিন্ন নামে ভাগ হয়ে গ্রুপভিত্তিক শরীরচর্চা। চন্দ্রিমা উদ্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আনসারের একটি দল এবং কিছু পুলিশ সদস্য। আনসাররা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন। তারা তিন শিফটে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত রাখা।

এসইউ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

জিয়া উদ্যান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

জিয়া উদ্যান রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধি এখানে অবস্থিত। তার সমাধিকে কেন্দ্র করে সমাধি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী উদ্যান এবং লেকটি দেখতে আসেন। শহরের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি উত্তম জায়গা। ঢাকা শহরের উদ্যানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যান।

প্রথমদিকে উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’। নামকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু মতামত পাওয়া যায়। কারো কারো মতে, এখানে চন্দ্রিমা নামে একজনের বাড়ি ছিল, সেখান থেকেই এ নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, দক্ষিণপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ক্রিসেন্ট লেকের সাথে মিল রেখে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর নাম চন্দ্রিমা উদ্যান রেখেছিলেন।

১৯৮১ সালে এখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করা হয়। এলাকাটিকে পরিষ্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য মনোরম স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয়। পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান নামকরণ করেন।

জিয়া উদ্যান শেরে বাংলা নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। উদ্যানের দক্ষিণে জাতীয় সংসদ ভবন, উত্তরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ও একসময়ের বাণিজ্য মেলার মাঠ, পশ্চিমে গণভবন এবং পূর্বে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দর অবস্থিত। উদ্যানটি ৭৪ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত।

জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স দেশের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন সমাধি কমপ্লেক্স ও উদ্যান দেখার জন্য। উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হয় ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। সমাধির পূর্ব ও পশ্চিমে আছে ক্যান্টিন, দক্ষিণে ঝুলন্ত সেতু, উত্তরে মেমোরিয়াল হল ও মসজিদ।

আরও পড়ুন
জাবালে নূর: মক্কার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র 
শীতে ঘুরে আসুন পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি 

জিয়াউর রহমানের সমাধির দক্ষিণ পাশে ক্রিসেন্ট লেক। এটি বাঁকা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় ক্রিসেন্ট লেক নাম রাখা হয়। দক্ষিণ পাশে চমৎকার করে সিঁঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বসার স্থান করা হয়েছে চারপাশে। ভেতরে প্রবেশের জন্য লেকের মাঝখান দিয়ে তৈরি হয়েছে মনোরম সেতু। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর দুপাশে দুটি ফোয়ারা। সন্ধ্যার পর ফোয়ারাগুলো চালু হলে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম চত্বরে দুটি সুশোভিত বাগান। তাতে আছে বিভিন্ন রকমের ফুল আর পাতা বাহারের সমাহার। লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি সবুজ ঘাস ও গাছগাছালি। বাগানের মধ্যে আছে খোলা চত্বর, যা ওপেন থিয়েটার বা পথ নাটকের জন্য আদর্শ স্থান। পূর্ব ও পশ্চিম অক্ষ বরাবর সুদৃশ্য দুটি ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে করা হয়েছে খোলা চত্বর। যারা প্রাত্যহিক ভ্রমণ, বিশ্রাম বা সমাধি জিয়ারতের জন্য আসেন; তাদের জন্য রাস্তাগুলো তৈরি হয়েছে আলাদাভাবে।

এখানে টয়লেট, বিশ্রামাগার, ফাস্টফুডের দোকান, বিশ্রাম নেওয়ার চমৎকার সব বেঞ্চ আছে। বসার স্থানগুলোয় সাদা পাথর বসানো। রোদ-বৃষ্টিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে ছাউনি। সমাধি কমপ্লেক্সে আছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় পুরো এলাকার নিরাপত্তা ও সাউন্ড সিস্টেম। রাস্তায় লাইট পোস্টের সঙ্গে আছে গোপন সাউন্ড বক্স, যা এখানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নতুন চমক। বক্সগুলোতে বাজানো হয় কোরআন তেলাওয়াত ও দেশাত্মবোধক গান।

জিয়াউর রহমানের সমাধির পূর্ব ও পশ্চিম পাশের উদ্যানের ভেতরে আছে দুটি পুকুর। পুকুরকে সংস্কার করে দর্শনীয় করার জন্য শানবাঁধানো ঘাট করা হয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে বিভিন্ন দলে, বিভিন্ন নামে ভাগ হয়ে গ্রুপভিত্তিক শরীরচর্চা। চন্দ্রিমা উদ্যানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আনসারের একটি দল এবং কিছু পুলিশ সদস্য। আনসাররা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন। তারা তিন শিফটে ভাগ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত রাখা।

এসইউ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।