অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এশিয়ান আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থায় (আসিয়ান) বাংলাদেশের যোগদানের প্রচেষ্টা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ পাওয়ার উদ্যোগসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
অধ্যাপক ইউনূস গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ মাসে আমাদের সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল অভূতপূর্ব।’
তিনি ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ ভোটার শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন। ‘গত ১৫ বছর আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত ছিলাম। এখন সবাই অধীর আগ্রহে ফেব্রুয়ারির অপেক্ষা করছে,’ যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট স্টাবকে জানান, বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো শিগগিরই ‘জুলাই চার্টার’-এ সই করবে, যা গভীরতর রাজনৈতিক সংস্কারের একটি কাঠামো।
ড. ইউনূস জানান, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার তার সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। তিনি উল্লেখ করেন, বিচারকাজ আন্তর্জাতিক আইনগত মানদণ্ড অনুযায়ী চলছে। ‘বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি (হাসিনা) উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীলতামূলক মন্তব্য চালিয়ে যাচ্ছেন,’ বলেন তিনি। ইউনূস যোগ করেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করেছে।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করছে এবং সক্রিয়ভাবে আসিয়ান সদস্যপদ পেতে তৎপর। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে দেখতে চাই। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আবেদন পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদের পথে একটি ধাপ।’
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে ফিনিশ প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসংঘের কার্যকারিতা বাড়াতে সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে। আমাদের জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন আলেকজান্ডার স্টাব।
স্টাবের বক্তব্যে সায় দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জাতিসংঘ এখন বড় বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ‘বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কার্যকর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছে,’ বলেন তিনি।
দুই নেতা দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক মিলিয়নেরও বেশি শরণার্থীর সহায়তায় আন্তর্জাতিক তহবিল বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তারা আঞ্চলিক সংযোগের বিষয়েও আলোচনা করেন। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে তা সমগ্র অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস।
বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এমইউ/এমএমকে/এএসএম
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।
এডমিন 











