একের পর এক ম্যাচ হেরেই যাচ্ছে লিভারপুল। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরই হতে পারছে না তারা। যেন গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির প্রতিচ্ছবি। রোববার রাতে তারা ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হেরে গেলো ২-১ গোলের ব্যবধানে। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচ হারলো আরনে স্লটের শিষ্যরা।
প্রায় এক দশক পর অ্যানফিল্ডে জয়ের স্বাদ পেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। রুবেন আমোরিমের অধীনে টানা দ্বিতীয় প্রিমিয়ার লিগ জয় এনে দিলেন ডিফেন্ডার হ্যারি ম্যাগুইরে। শেষ মুহূর্তে তার হেডেই লিভারপুলকে হারায় ইউনাইটেড।
৭৮ মিনিটে কোডি গাকপো সমতা ফিরিয়ে ম্যাচটিকে জটিল করে তুলেছিলেন, কিন্তু ৮৬তম মিনিটে কর্নার থেকে ম্যাগুইরের দারুণ হেড জড়িয়ে যায় লিভারপুলের জালে। সে সঙ্গে তাদের সেট-পিস দুর্বলতা আরও একবার প্রকাশ হয়ে পড়ে। যার ফলে টানা চতুর্থ পরাজয়ের (তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) তিক্ত স্বাদ পেতে হলো আরনে স্লটের দলকে। ২০১৪ সালের পর প্রথমবার এমন দুঃসময়ের মুখোমুখি হলো তারা।
লিভারপুল গত ৪০০ দিনে প্রথমবার ঘরের মাঠে প্রিমিয়ার লিগে হারল, আর ইউনাইটেড এখন তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে মাত্র দুই পয়েন্ট পিছিয়ে। অন্যদিকে, স্লটকে এখন খুঁজতে হবে তার আক্রমণভাগের ব্যর্থতার কারণ। ৮ ম্যাচে লিভারপুলের অর্জন ১৫ পয়েন্ট। তারা রয়েছে চতুর্থ স্থানে। অন্যদিকে ম্যানইউর অর্জন ১৩ পয়েন্ট। তবে তারা রয়েছে ৯ম স্থানে।
ম্যাচের শুরুতেই ইউনাইটেডের হয়ে ব্রায়ান এমবেবিওমো ৬২ সেকেন্ডে গোল করে বসেন— অ্যানফিল্ডে দুই দলের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে দ্রুততম গোল এটি। এমবিওমো, মাতেউ কুনহা ও ম্যাসন মাউন্টের গতিশীল আক্রমণভাগ প্রথমার্ধেই লিভারপুলের ডিফেন্সকে চাপে ফেলে দেয়। বিশেষ করে ভিরগিল ফন ডাইক ও মিলোস কেরকেজের বাঁ-দিকটিকে লক্ষ্য করে।
ফন ডাইক ও ম্যাক অ্যালিস্টারের সংঘর্ষে বল পেয়ে এমবিওমো এগিয়ে যান এবং লিভারপুল গোলরক্ষক জর্জি মামারদাশভিলির হাত ও উরুর মাঝ দিয়ে শটে বল জালে পাঠান। এটি ছিল স্লটের দলের সপ্তম ম্যাচ টানা ক্লিন শিটবিহীন।
ফন ডাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে ম্যাক অ্যালিস্টারের মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে পড়ে। মাথায় ব্যান্ডেজ পরেও আবার মাঠে ফেরেন অ্যালিস্টার; কিন্তু লিভারপুল তখনও তাল খুঁজে পাচ্ছিল না। ইউনাইটেড ৫-৪-১ ফরমেশনে নেমে দীর্ঘ বলের কৌশলেই বিপজ্জনক ছিল।
কোডি গাকপো প্রথমার্ধে তিনবার পোস্টে আঘাত করেন— একবার সরাসরি গোলের সামনে থেকেও লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে, ব্রুনো ফার্নান্দেসের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে এবং মাউন্টের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল চাপ বাড়ালেও ইউনাইটেড ডিফেন্স শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। গাকপো আবারও পোস্টে আঘাত করেন, আর ম্যাক অ্যালিস্টারের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৬৫ মিনিটে স্লট একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন— ফ্লোরিয়ান ভির্ৎজ, হুগো একিতিকে ও কার্টিস জোন্স মাঠে নামেন এবং দলটি ৪-২-৪ ফরমেশনে যায়। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তারা। মোহাম্মদ সালাহ কেরকেজের ক্রস থেকে দূর পোস্টে শট নেন, কিন্তু সেটিও বাইরে চলে যায়।
৭৮ মিনিটে অবশেষে লিভারপুল সমতায় ফেরে — ভির্ৎজের পাস থেকে ফেডেরিকো চিয়েসার ক্রসে গাকপো কাছ থেকে গোল করেন।
কিন্তু আনন্দ টিকল না বেশি সময়। ৮৬ মিনিটে কর্নার থেকে উঠে আসা হ্যারি ম্যাগুইরে দুর্দান্ত হেডে বল জালে পাঠিয়ে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। এটি ছিল ফেব্রুয়ারির পর প্রিমিয়ার লিগে তার প্রথম গোল, আর সেই সাথেই ২০১৬ সালের পর অ্যানফিল্ডে প্রথম জয় তুলে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
শেষ মুহূর্তে গাকপো আরও একবার হেডে গোলের সুযোগ মিস করেন, যা ম্যাচের ফল পুরোপুরি নির্ধারণ করে দেয় — হতাশার চতুর্থ ধারাবাহিক পরাজয় লিভারপুলের জন্য, আর গৌরবময় রাত রেড ডেভিলদের জন্য।
আইএইচএস/
এডমিন 













