০২:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • 13

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসইসি কর্তৃক গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য মো. আল-আমিন বলেছেন, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতোই ব্যবহার করা হয়। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে পুঁজিবাজারকে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয়ভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা (আমলা) নিজেদের অবস্থান ছাড়তে চান না। ফলে পুঁজিবাজারে নেগলেকশন চলছে এবং তারা এখান থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা নিচ্ছেন।

মো. আল-আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টেকসই ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার মূল কারণ গভর্নেন্স ব্যর্থতা। এজন্য অডিটর, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও স্বাধীন পরিচালকদের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ‘ফিট অ্যান্ড প্রপার’ তালিকা প্রণয়ন করে যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরিচালকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পদক্ষেপ ছাড়া বিনিয়োগকারীর আস্থা ও বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

শনিবার (৪ অক্টোবর) জাগো নিউজ২৪.কম আয়োজিত ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাগো নিউজের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক এবং সঞ্চালনা করেন ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাঈদ শিপন।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান, হিসাববিদ মাহমুদ হোসেন (এফসিএ) এবং ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট মো. মামুনুর রশীদ।

এসময় জাগো নিউজ২৪.কমের প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ, চিফ রিপোর্টার ইব্রাহিম হোসেন অভি, নিউজ এডিটর মাহবুব আলম রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে
‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সংস্কার কার্যক্রমে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা পাঁচজন সদস্য নিয়ে কাজ করেছি— এখানে কেউ প্রধান ছিলেন না। আমাদের সঙ্গে ছিল ১২ সদস্যের ফোকাস গ্রুপ, যারা বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মার্কেট প্র্যাকটিশনার। এছাড়া বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ছিল একটি কনসালটেশন গ্রুপ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে লক্ষ্য করি, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা বা ‘ক্যানসার’ নেগেটিভ ইক্যুইটি। এর পেছনে মার্জিন ঋণের অপব্যবহার একটি প্রধান কারণ। বড় বিনিয়োগকারীদের অনেক সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে মার্জিন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য আমরা মার্জিন ঋণে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করেছি— যেমন, বিনিয়োগকারীর কমপক্ষে এক বছরের বাজার অভিজ্ঞতা এবং ৫ লাখ টাকার মূলধন থাকতে হবে। মূলত আমরা মার্জিন ঋণকে সীমিত করতে চেয়েছি, যাতে এটি মাত্র অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরাই ব্যবহার করতে পারেন।’

১৪ মাসে পোর্টফোলিও অর্ধেকে, আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের
মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাস, নতুন ব্যবসায় স্থবিরতার ইঙ্গিত
শেয়ারবাজারে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারী

ঢাবি অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা পি/ই অনুপাতের হিসাবেও পরিবর্তন এনেছি। আগে ‘ওয়ান-অব’ বা অস্থায়ী আয়ের ওপর ভিত্তি করে পি/ই গণনা করা হতো, যা বিভ্রান্তিকর ছিল। এখন কেবল অপারেটিং ইনকামের ভিত্তিতেই পি/ই গণনার সুপারিশ করেছি, যাতে কৃত্রিমভাবে শেয়ারমূল্য বাড়ানো না যায়।’

মিউচুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক ফান্ড প্রকৃত সম্পদমূল্যের তুলনায় ওভারপ্রাইসড। কিছু ফান্ড অঘোষিতভাবে বিদেশে অর্থপাচার করেছে, যেমন এলআর গ্লোবালের ঘটনার মতো। এজন্য আমরা কাস্টোডিয়ান, ট্রাস্টি ও অ্যাসেট ম্যানেজারদের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে এমন অর্থ পাচাররোধ করা যায়।’

আইপিও সংক্রান্ত সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি— অনেক নামসর্বস্ব ও অযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। তারা কৃত্রিমভাবে আর্থিক বিবরণী সাজিয়ে বাজারে আসে এবং জনগণের অর্থ নিয়ে চলে যায়। এজন্য আমরা অডিটর, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের জবাবদিহি বাড়ানোর সুপারিশ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের জন্য আমরা ‘ফিট অ্যান্ড প্রোপার’ তালিকা করার প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের করপোরেট গভর্নেন্স, কোম্পানি আইন ও ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। পাশাপাশি তাদের যথাযথ পারিশ্রমিকও দিতে হবে— যাতে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন।’

গভর্নেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো গভর্নেন্স ফেইলিউর। তাই আমরা রিওয়ার্ড ও পানিশমেন্ট— উভয় দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি শক্তিশালী গভর্নেন্স কাঠামো প্রস্তাব করেছি।’

আইটি অটোমেশন প্রসঙ্গে মো. আল-আমিন বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যাতে বাজারের প্রতিটি তথ্য রিয়েল টাইমে পাওয়া যায়, যাতে বিনিয়োগকারীরা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

আমাদের কমিটির কাজ মাত্র সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া পর্যন্ত সীমিত ছিল। আমরা বাজার পরিচালনায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। ৩০ জুনের পর থেকে আমাদের সঙ্গে বিএসইসির কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্কও নেই। আমাদের কাজ ছিল ট্রান্সপারেন্টভাবে সুপারিশ দেওয়া— বাজার পরিচালনা নয়।’

শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক সংস্কার কমিশন হয়েছে, কিন্তু সবগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি— প্রতিটি মিটিং, আলোচনা ও সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাজারকে একটি টেকসই ও সুশাসিত কাঠামো উপহার দেওয়া।’

ইএআর/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

পুঁজিবাজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে

আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসইসি কর্তৃক গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য মো. আল-আমিন বলেছেন, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতোই ব্যবহার করা হয়। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে পুঁজিবাজারকে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয়ভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা (আমলা) নিজেদের অবস্থান ছাড়তে চান না। ফলে পুঁজিবাজারে নেগলেকশন চলছে এবং তারা এখান থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা নিচ্ছেন।

মো. আল-আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টেকসই ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার মূল কারণ গভর্নেন্স ব্যর্থতা। এজন্য অডিটর, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও স্বাধীন পরিচালকদের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ‘ফিট অ্যান্ড প্রপার’ তালিকা প্রণয়ন করে যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরিচালকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এসব পদক্ষেপ ছাড়া বিনিয়োগকারীর আস্থা ও বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

শনিবার (৪ অক্টোবর) জাগো নিউজ২৪.কম আয়োজিত ‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাগো নিউজের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক এবং সঞ্চালনা করেন ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাঈদ শিপন।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান, হিসাববিদ মাহমুদ হোসেন (এফসিএ) এবং ফান্ডামেন্টাল ও টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট মো. মামুনুর রশীদ।

এসময় জাগো নিউজ২৪.কমের প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ, চিফ রিপোর্টার ইব্রাহিম হোসেন অভি, নিউজ এডিটর মাহবুব আলম রনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেগলেক্ট করে রাখা হয়েছে
‘পুঁজিবাজার বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সংস্কার কার্যক্রমে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা পাঁচজন সদস্য নিয়ে কাজ করেছি— এখানে কেউ প্রধান ছিলেন না। আমাদের সঙ্গে ছিল ১২ সদস্যের ফোকাস গ্রুপ, যারা বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মার্কেট প্র্যাকটিশনার। এছাড়া বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ছিল একটি কনসালটেশন গ্রুপ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে লক্ষ্য করি, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা বা ‘ক্যানসার’ নেগেটিভ ইক্যুইটি। এর পেছনে মার্জিন ঋণের অপব্যবহার একটি প্রধান কারণ। বড় বিনিয়োগকারীদের অনেক সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে মার্জিন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য আমরা মার্জিন ঋণে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করেছি— যেমন, বিনিয়োগকারীর কমপক্ষে এক বছরের বাজার অভিজ্ঞতা এবং ৫ লাখ টাকার মূলধন থাকতে হবে। মূলত আমরা মার্জিন ঋণকে সীমিত করতে চেয়েছি, যাতে এটি মাত্র অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরাই ব্যবহার করতে পারেন।’

১৪ মাসে পোর্টফোলিও অর্ধেকে, আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের
মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাস, নতুন ব্যবসায় স্থবিরতার ইঙ্গিত
শেয়ারবাজারে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারী

ঢাবি অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা পি/ই অনুপাতের হিসাবেও পরিবর্তন এনেছি। আগে ‘ওয়ান-অব’ বা অস্থায়ী আয়ের ওপর ভিত্তি করে পি/ই গণনা করা হতো, যা বিভ্রান্তিকর ছিল। এখন কেবল অপারেটিং ইনকামের ভিত্তিতেই পি/ই গণনার সুপারিশ করেছি, যাতে কৃত্রিমভাবে শেয়ারমূল্য বাড়ানো না যায়।’

মিউচুয়াল ফান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক ফান্ড প্রকৃত সম্পদমূল্যের তুলনায় ওভারপ্রাইসড। কিছু ফান্ড অঘোষিতভাবে বিদেশে অর্থপাচার করেছে, যেমন এলআর গ্লোবালের ঘটনার মতো। এজন্য আমরা কাস্টোডিয়ান, ট্রাস্টি ও অ্যাসেট ম্যানেজারদের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে এমন অর্থ পাচাররোধ করা যায়।’

আইপিও সংক্রান্ত সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি— অনেক নামসর্বস্ব ও অযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। তারা কৃত্রিমভাবে আর্থিক বিবরণী সাজিয়ে বাজারে আসে এবং জনগণের অর্থ নিয়ে চলে যায়। এজন্য আমরা অডিটর, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের জবাবদিহি বাড়ানোর সুপারিশ দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের জন্য আমরা ‘ফিট অ্যান্ড প্রোপার’ তালিকা করার প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের করপোরেট গভর্নেন্স, কোম্পানি আইন ও ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। পাশাপাশি তাদের যথাযথ পারিশ্রমিকও দিতে হবে— যাতে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিরা দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন।’

গভর্নেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো গভর্নেন্স ফেইলিউর। তাই আমরা রিওয়ার্ড ও পানিশমেন্ট— উভয় দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি শক্তিশালী গভর্নেন্স কাঠামো প্রস্তাব করেছি।’

আইটি অটোমেশন প্রসঙ্গে মো. আল-আমিন বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যাতে বাজারের প্রতিটি তথ্য রিয়েল টাইমে পাওয়া যায়, যাতে বিনিয়োগকারীরা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

আমাদের কমিটির কাজ মাত্র সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া পর্যন্ত সীমিত ছিল। আমরা বাজার পরিচালনায় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। ৩০ জুনের পর থেকে আমাদের সঙ্গে বিএসইসির কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্কও নেই। আমাদের কাজ ছিল ট্রান্সপারেন্টভাবে সুপারিশ দেওয়া— বাজার পরিচালনা নয়।’

শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক সংস্কার কমিশন হয়েছে, কিন্তু সবগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছি— প্রতিটি মিটিং, আলোচনা ও সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাজারকে একটি টেকসই ও সুশাসিত কাঠামো উপহার দেওয়া।’

ইএআর/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।