০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • 58

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ছিলেন ফিকহ বা ইসলামি আইনশাস্ত্রের প্রধান চার ইমামের অন্যতম। তার প্রবর্তিত ফিকহি মাজহাব ‘হানাফি মাজহাব’ নামে প্রসিদ্ধ যা আজও মুসলিম বিশ্বের বৃহৎ অংশের অনুসৃত মাজহাব।

ইমাম আবু হানিফার মূল নাম ছিল নুমান। তার বাবার নাম ছিল সাবেত, দাদার নাম যুতী। তিনি ছিলেন পারসিক বংশোদ্ভূত। তার দাদা হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতকালে ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন ৮০ হিজরিতে (৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) ইরাকের কুফা নগরীতে। সম্ভবত তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার জন্ম হয়েছিল নবিজির (সা.) ওফাতের প্রায় সত্তর বছর পর। বেশিরভাগ সাহাবি তত দিনে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও এক দুইজন সাহাবি বেঁচে ছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শৈশবে আনাস ইবনে মালিককে (রা.) দেখার সুৃযেগ পেয়েছিলেন।

ইমাম আবু হানিফার (রহ.) বাবা ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী এবং ধর্মপরায়ণ মানুষ। ইমাম আবু হানিফাও (রহ.) ব্যবসায়ী ছিলেন। জীবনের শুরুতে বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যবসার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন, মাঝে মাঝে আলেমদের পরিচালিত জ্ঞানচর্চার মজলিসগুলোতে যেতেন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত তাবেঈ আলেম ইমাম শা’বির (রহ.) উৎসাহে তিনি জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করেন।

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)ছবি: সংগৃহীত

আবু হানিফা (রহ.) বলেন, একদিন ইমাম শা’বি (রহ.) আমাকে ডেকে বললেন, তুমি কোন আলেমদের মজলিসে যাও? আমি বললাম, আমি তো ব্যবসার কাজে বাজারেই বেশি সময় কাটাই। আলেমদের মজলিসে কম যাই। তিনি বললেন, তুমি জ্ঞান চর্চা করো, আলেমদের সঙ্গে বসো, আমি তোমার মধ্যে মেধা ও সতেজ চিন্তা দেখেছি। তার উৎসাহেই আমি ব্যবসা ছেড়ে জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করি।

শিক্ষাজীবনের প্রথম দিকে তিনি আকিদা, কালামশাস্ত্র ও তাওহিদ নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অল্প সময়েই এসব বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে তিনি ফিকহশাস্ত্রের দিকে মনোযোগ দেন এবং কুফার বিখ্যাত ফকিহ হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমানের (রহ.) শিষ্য হন। তার শিষ্যত্বে থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহকেই নিজের মূল অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রায় ১৮ বছর হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমানের (রহ.) সান্নিধ্যে থেকে তিনি ফিকহ অধ্যয়ন করেন।

হজরত হাম্মাদের (রহ.) মৃত্যুর পর ৪০ বছর বয়সে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুফার মসজিদে ফিকহের মজলিস পরিচালনা শুরু করেন। তার মজলিসে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওই সময়ের বড় বড় মুহাদ্দিস ও ফকিহরাও অংশগ্রহণ করতেন।

ইমাম আবু হানিফার বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন, আবু ইউসুফ (রহ.), মুহাম্মদ ইবনে হাসান (রহ.), ইমাম হাসান ইবনে যিয়াদ (রহ.), আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.), হাফস ইবনে গিয়াস (রহ.), ফুজায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.) প্রমুখ।

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)মসজিদে ইমামে আজম। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ১৫০ হিজরির (৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসে ইন্তেকাল করেন। কেউ কেউ তার মৃত্যুর বছর ১৫১ বা ১৫৩ হিজরিও বলেছেন, তবে নির্ভরযোগ্য মত হলো ১৫০ হিজরি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর। তাকে বাগদাদের খায়যারান কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুর ২২৫ বছর পর ৩৭৫ হিজরিতে তার কবরের পাশে ‘মসজিদে ইমাম আজম’ নামে একটি মসজিদ নির্মিত হয়। আজও সেই মসজিদ টিকে আছে। তার কবরের পার্শবর্তী এলাকা পরিচিত ‘আজমিয়্যা’ নামে—যা তার উপাধি ‘ইমামে আজম’ (অর্থাৎ মহান ইমাম বা পথপ্রদর্শক) থেকে উদ্ভূত।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

সজলকে ধরে রাখে রনি, পরে গুলির শব্দ পাই

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)

আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ছিলেন ফিকহ বা ইসলামি আইনশাস্ত্রের প্রধান চার ইমামের অন্যতম। তার প্রবর্তিত ফিকহি মাজহাব ‘হানাফি মাজহাব’ নামে প্রসিদ্ধ যা আজও মুসলিম বিশ্বের বৃহৎ অংশের অনুসৃত মাজহাব।

ইমাম আবু হানিফার মূল নাম ছিল নুমান। তার বাবার নাম ছিল সাবেত, দাদার নাম যুতী। তিনি ছিলেন পারসিক বংশোদ্ভূত। তার দাদা হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতকালে ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন ৮০ হিজরিতে (৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) ইরাকের কুফা নগরীতে। সম্ভবত তিনি ছিলেন তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার জন্ম হয়েছিল নবিজির (সা.) ওফাতের প্রায় সত্তর বছর পর। বেশিরভাগ সাহাবি তত দিনে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও এক দুইজন সাহাবি বেঁচে ছিলেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শৈশবে আনাস ইবনে মালিককে (রা.) দেখার সুৃযেগ পেয়েছিলেন।

ইমাম আবু হানিফার (রহ.) বাবা ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী এবং ধর্মপরায়ণ মানুষ। ইমাম আবু হানিফাও (রহ.) ব্যবসায়ী ছিলেন। জীবনের শুরুতে বেশিরভাগ সময় তিনি ব্যবসার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন, মাঝে মাঝে আলেমদের পরিচালিত জ্ঞানচর্চার মজলিসগুলোতে যেতেন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত তাবেঈ আলেম ইমাম শা’বির (রহ.) উৎসাহে তিনি জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করেন।

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)ছবি: সংগৃহীত

আবু হানিফা (রহ.) বলেন, একদিন ইমাম শা’বি (রহ.) আমাকে ডেকে বললেন, তুমি কোন আলেমদের মজলিসে যাও? আমি বললাম, আমি তো ব্যবসার কাজে বাজারেই বেশি সময় কাটাই। আলেমদের মজলিসে কম যাই। তিনি বললেন, তুমি জ্ঞান চর্চা করো, আলেমদের সঙ্গে বসো, আমি তোমার মধ্যে মেধা ও সতেজ চিন্তা দেখেছি। তার উৎসাহেই আমি ব্যবসা ছেড়ে জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করি।

শিক্ষাজীবনের প্রথম দিকে তিনি আকিদা, কালামশাস্ত্র ও তাওহিদ নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অল্প সময়েই এসব বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে তিনি ফিকহশাস্ত্রের দিকে মনোযোগ দেন এবং কুফার বিখ্যাত ফকিহ হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমানের (রহ.) শিষ্য হন। তার শিষ্যত্বে থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহকেই নিজের মূল অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রায় ১৮ বছর হাম্মাদ ইবনে আবি সুলাইমানের (রহ.) সান্নিধ্যে থেকে তিনি ফিকহ অধ্যয়ন করেন।

হজরত হাম্মাদের (রহ.) মৃত্যুর পর ৪০ বছর বয়সে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুফার মসজিদে ফিকহের মজলিস পরিচালনা শুরু করেন। তার মজলিসে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ওই সময়ের বড় বড় মুহাদ্দিস ও ফকিহরাও অংশগ্রহণ করতেন।

ইমাম আবু হানিফার বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন, আবু ইউসুফ (রহ.), মুহাম্মদ ইবনে হাসান (রহ.), ইমাম হাসান ইবনে যিয়াদ (রহ.), আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.), হাফস ইবনে গিয়াস (রহ.), ফুজায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.) প্রমুখ।

ফিকহশাস্ত্রের ‘ইমামে আজম’ আবু হানিফা (রহ.)মসজিদে ইমামে আজম। ছবি: উইকিপিডিয়া

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ১৫০ হিজরির (৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসে ইন্তেকাল করেন। কেউ কেউ তার মৃত্যুর বছর ১৫১ বা ১৫৩ হিজরিও বলেছেন, তবে নির্ভরযোগ্য মত হলো ১৫০ হিজরি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭০ বছর। তাকে বাগদাদের খায়যারান কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তার মৃত্যুর ২২৫ বছর পর ৩৭৫ হিজরিতে তার কবরের পাশে ‘মসজিদে ইমাম আজম’ নামে একটি মসজিদ নির্মিত হয়। আজও সেই মসজিদ টিকে আছে। তার কবরের পার্শবর্তী এলাকা পরিচিত ‘আজমিয়্যা’ নামে—যা তার উপাধি ‘ইমামে আজম’ (অর্থাৎ মহান ইমাম বা পথপ্রদর্শক) থেকে উদ্ভূত।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।