০৮:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকে আক্ষেপ করে নির্বাচন-রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা বিএনপি নেতার

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 1

মাগুরা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি জানান, দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস, রাজনৈতিক অবহেলা ও পরিবারের চরম ভোগান্তির কারণে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। সক্রিয় রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। জীবনের বাকি সময় পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কাজী সালিমুল হক কামাল তার স্ট্যাটাসে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় তাকে। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ শরীরে তিনি ২২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির দিন নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও আবেগ তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

তিনি জানান, মুক্তির পর গত ১৬ মাসে মাত্র চারবার মাগুরায় আসেন ও প্রতিবারই নেতাকর্মীদের চোখে ভালোবাসার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বেদনা দেখেছেন। গত ১৬ বছর ধরে মাগুরার ত্যাগী নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির পতাকা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।

তিনি দাবি করেন, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান ও দুইজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তৃণমূলের সেই মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

কাজী সালিমুল হক কামাল আরও বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসনের চেষ্টা দলকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় ধর্মভীরু ভোটারদের একটি অংশ জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ফিরলে দলের অবস্থান কী হবে, সেটিই ছিল তৃণমূলের প্রধান দুশ্চিন্তা।

স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, তৃণমূলই দলের প্রাণ। হাজার হাজার ত্যাগী কর্মীকে উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে দল শক্তিশালী না হয়ে ভেতর থেকে ক্ষয়ে যায়। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তার দায়ভার দলকেই নিতে হবে।

তিনি জানান, নেতাকর্মীদের চাপে পড়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দলের বর্তমান অনড় অবস্থান দেখে তিনি বুঝেছেন, তৃণমূলের যুক্তি ও আবেগের কোনো মূল্য নেই।

সবশেষে পরিবারের একান্ত অনুরোধের কথা উল্লেখ করে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নিচ্ছেন।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যেন তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করেন।

শালিখা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সালিমুল হক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামীকাল বৈঠক আহ্বান করেছি। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দীর্ঘদিন নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আমরা বিএনপি করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউ নই।

মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

রাশিয়ার ভয়ে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান সুইজারল্যান্ড সেনাপ্রধানের

ফেসবুকে আক্ষেপ করে নির্বাচন-রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা বিএনপি নেতার

আপডেট সময়ঃ ১২:০১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

মাগুরা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি জানান, দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস, রাজনৈতিক অবহেলা ও পরিবারের চরম ভোগান্তির কারণে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। সক্রিয় রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। জীবনের বাকি সময় পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কাজী সালিমুল হক কামাল তার স্ট্যাটাসে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় তাকে। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ শরীরে তিনি ২২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির দিন নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও আবেগ তাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

তিনি জানান, মুক্তির পর গত ১৬ মাসে মাত্র চারবার মাগুরায় আসেন ও প্রতিবারই নেতাকর্মীদের চোখে ভালোবাসার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বেদনা দেখেছেন। গত ১৬ বছর ধরে মাগুরার ত্যাগী নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির পতাকা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্ট্যাটাসে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার ফল।

তিনি দাবি করেন, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান ও দুইজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তৃণমূলের সেই মতামতকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

কাজী সালিমুল হক কামাল আরও বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসনের চেষ্টা দলকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় ধর্মভীরু ভোটারদের একটি অংশ জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ফিরলে দলের অবস্থান কী হবে, সেটিই ছিল তৃণমূলের প্রধান দুশ্চিন্তা।

স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, তৃণমূলই দলের প্রাণ। হাজার হাজার ত্যাগী কর্মীকে উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে দল শক্তিশালী না হয়ে ভেতর থেকে ক্ষয়ে যায়। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তার দায়ভার দলকেই নিতে হবে।

তিনি জানান, নেতাকর্মীদের চাপে পড়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দলের বর্তমান অনড় অবস্থান দেখে তিনি বুঝেছেন, তৃণমূলের যুক্তি ও আবেগের কোনো মূল্য নেই।

সবশেষে পরিবারের একান্ত অনুরোধের কথা উল্লেখ করে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নিচ্ছেন।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যেন তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করেন।

শালিখা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আনিসুর রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সালিমুল হক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে আগামীকাল বৈঠক আহ্বান করেছি। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে দীর্ঘদিন নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আমরা বিএনপি করি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউ নই।

মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল/এমএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।