ঝালকাঠি শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকায় রাইসা নামের চার বছর বয়সি এক শিশুকে অমানুষিকভাবে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার বাবা ও সৎমার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শনিবার (৪ অক্টোবর) শিশুটির নানা আব্দুস সত্তার হাওলাদার বাদী হয়ে বাবা রাকিব হোসেন ও সৎমা কলি আক্তারকে আসামি করে ঝালকাঠি সদর থানায় অভিযোগ করেন।
এর আগে গত বুধবার (১ অক্টোবর) বাবা রাকিব হোসেনের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মেডিকেল প্রতিবেদনে শারীরিক নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। রাইসার মাথার ডানপাশে আঘাত ও হাড় ভেঙে গেছে বলে মেডিকেল পরীক্ষায় বলা হয়।
জানা যায়, রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত শিশু রাইসার নানার পরিবার ঝালকাঠি থানায় অবস্থান করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বিষয়টি সালিশে মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দেওয়া ছাড়পত্রে উল্লেখ রয়েছে, শিশুটিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তার ডান দিকের অক্সিপিটাল হাড়ে ভাঙন শনাক্ত হয়েছে ও সেখানে রক্তজমাট রয়েছে।
শিশুটির নানার অভিযোগ, রাইসাকে তার বাবা রাকিব হোসেন ও সৎমা কলি নির্মমভাবে নির্যাতন করেছেন। এখন বাবার নাম শুনলেই শিশুটি আতঙ্কে কেঁপে ওঠে।
শিশুটির খালা শাহনাজ বেগম জানান, ২০২০ সালে আমার ছোট বোন সুমাইয়া আক্তার ও রাকিব হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুমাইয়া আক্তার মারা যায়। তখন রাইসার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এরপর থেকে রাইসা খালা শাহানাজের কাছেই বড় হচ্ছে এবং খালাকে ‘মা’ বলে ডাকে। কিন্তু বিষয়টি কখনোই মেনে নিতে পারেনি রাইসার বাবা রাকিব। সে মাঝে মাঝে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যেত। কিছুদিন পর আবার খালার কাছে দিয়ে যেত।
এক প্রতিবেশী বলেন, রাকিবের দ্বিতীয় স্ত্রী কলি আক্তার রাইসাকে ঘরে রাখতে চাইতেন না। এ নিয়ে রাকিব-কলির মধ্যে কথাকাটাকাটিও হতো। খালার বাসায় কথা বলার সময় রাইসা নিজেও জানায়, তার বাবা তাকে মেরেছে।
খালা শাহনাজের অভিযোগ, বুধবার রাকিব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি মিলে রাইসাকে মারধর করে। এতে শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। পরে রাইসার খালা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে প্রথমে রাকিব ফোন ধরেনি। পরে জানান, মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়েছেন। হাসপাতালে গিয়ে খালা দেখতে পান, রাইসার চোখে রক্ত জমে আছে ও মাথা-চোখ ফুলে গেছে। এরপর রাকিব শিশুটিকে খালার কাছেই রাখেন।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাইসা খালার বাড়িতেই ছিল। পরে শনিবার খালা শাহনাজ শিশুটিকে নিয়ে সাংবাদিকদের ও সদর থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে খোঁজ নেয় ও রাইসাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাইসার নানি কহিনুর বেগম বলেন, আমার নাতনিকে এমনভাবে মেরেছে যে, সে ৬ দিন হয়েছে এখনো ব্যথায় ছটফট করে। চোখে রক্ত জমে ফুলে গেছে। ছোট্ট মেয়েটা এখনো ভয় পায়, বাবার নাম শুনলে কাঁপে। আমি চাই, রাকিব ও কলির বিচার হোক।
অভিযোগের বিষয়ে রাইসার বাবা রাকিব হোসেন বলেন, রাইসা খালাকে ‘মা’ বলে ডাকায় আমি কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু তাকে মারধর করিনি। সে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ধানসিঁড়ি পরিবহনে বাস কনডাক্টর হিসেবে কাজ করি। আমার মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ওর খালার কাছে রেখে এসে পেশাগত কাজে পরিবহনের সঙ্গে খুলনা এসেছি। এখানে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি আমি আমার মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত করেছি।
তবে রাইসার নানা আব্দুস সত্তার হাওলাদার বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর এটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থানায় বসে ছিলাম। তারা (থানার কর্মকর্তা) আমার সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা করার পরামর্শ দিয়েছে। আমি আদালতে বিচার চাইবো।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের একটি টিমসহ আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলেছি সবার সঙ্গে। মেয়েটি বাথরুমে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হয়েছে। এজন্যই তার কপালে দাগ ও চোখের নিচে কালো হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মো. আতিকুর রহমান/এমএন/এএসএম
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।
এডমিন 













