০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচারক বদলির কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০২:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • 18

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি তথা অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এমন মত প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের সই করা বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারকদের বদলি ও পদায়নের কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সুস্পষ্টভাবে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) তৈরি করবে এবং যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় ওই কমিটিতে তার অংশগ্রহণ বিচারকদের প্রভাবিত এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে।

বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, তারা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন যে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য গঠিত কমিটিতে বিচারপতি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি তথা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত। বিচারকদের বদলি ও পদায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সংবিধানের এ বিধানের পরিপন্থি। প্রস্তাবিত কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের অন্তর্ভুক্তি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত এবং ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মূলনীতি পরিপন্থি।

আরও বলা হয়, বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও শৃঙ্খলাবিষয়ক অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ভারত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর যেকোনো সভ্য দেশে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো নজির নেই। এ ধরনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে বলে অ্যাসোসিয়েশনের আশঙ্কা।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের এ সংগঠন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান অংশীজন হিসেবে এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশ মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর পূর্বে অ্যাসোসিয়েশনের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি, যা একটি আইন পাসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাবিরোধী। বিচারকদের বদলি ও পদায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের মতামত উপেক্ষা করা অগ্রহণযোগ্য এবং বিচার বিভাগের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞার পরিচায়ক।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৈপ্লবিক জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রধান বিচারপতির ঐতিহাসিক রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বদ্ধপরিকর। অ্যাসোসিয়েশন শুরু থেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচারকদের মর্যাদা ও স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার।

অ্যাসোসিয়েশন অনতিবিলম্বে প্রস্তাবিত কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখার বিধান সংশোধন করে শুধু বিচারপতি এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের রাখার জোর দাবি জানায়। সেই সঙ্গে উল্লেখ করে, পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নামে বিচারকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত কখনোই তারা মেনে নেবেন না।

এফএইচ/একিউএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

বিচারক বদলির কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

আপডেট সময়ঃ ১২:০২:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি তথা অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এমন মত প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের সই করা বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারকদের বদলি ও পদায়নের কমিটিতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সুস্পষ্টভাবে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) তৈরি করবে এবং যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় ওই কমিটিতে তার অংশগ্রহণ বিচারকদের প্রভাবিত এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করবে।

বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, তারা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন যে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়া আইনে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য গঠিত কমিটিতে বিচারপতি ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগের প্রতিনিধি তথা অ্যাটর্নি জেনারেলকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মূলনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত। বিচারকদের বদলি ও পদায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সংবিধানের এ বিধানের পরিপন্থি। প্রস্তাবিত কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের অন্তর্ভুক্তি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত এবং ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মূলনীতি পরিপন্থি।

আরও বলা হয়, বিচারকদের বদলি, পদায়ন ও শৃঙ্খলাবিষয়ক অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ভারত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর যেকোনো সভ্য দেশে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো নজির নেই। এ ধরনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে বলে অ্যাসোসিয়েশনের আশঙ্কা।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের এ সংগঠন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান অংশীজন হিসেবে এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশ মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর পূর্বে অ্যাসোসিয়েশনের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি, যা একটি আইন পাসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাবিরোধী। বিচারকদের বদলি ও পদায়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের মতামত উপেক্ষা করা অগ্রহণযোগ্য এবং বিচার বিভাগের স্বার্থের প্রতি অবজ্ঞার পরিচায়ক।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বৈপ্লবিক জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রধান বিচারপতির ঐতিহাসিক রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বদ্ধপরিকর। অ্যাসোসিয়েশন শুরু থেকেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বিচারকদের মর্যাদা ও স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার।

অ্যাসোসিয়েশন অনতিবিলম্বে প্রস্তাবিত কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখার বিধান সংশোধন করে শুধু বিচারপতি এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের রাখার জোর দাবি জানায়। সেই সঙ্গে উল্লেখ করে, পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নামে বিচারকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত কখনোই তারা মেনে নেবেন না।

এফএইচ/একিউএফ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।