০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে সামাজিক মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোদী-মাস্কের নীরব লড়াই

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • 1

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাতারা শহরের পুলিশ একটি পুরোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পোস্টটি এক বছর আগের একটি স্বল্প পরিচিত অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একজন ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকে অপ্রয়োজনীয় বা অকার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সাতারার পুলিশ পরিদর্শক জিতেন্দ্র শাহানে সেই পোস্টটি নিয়ে এক্স (পূর্বে টুইটার) কর্তৃপক্ষকে পাঠানো একটি গোপনীয় নোটিশে লিখেন, এই পোস্ট ও বিষয়বস্তু গুরুতর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণ হতে পারে।

এই পোস্টটি এখনো অনলাইনে রয়েছে। এটি সেই কয়েকশো পোস্টের একটি, যেগুলোর উল্লেখ করে এক্স চলতি বছরের মার্চে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে মাস্কের কোম্পানিটি। এই লড়াই সামনে এলো এমন সময়ে, যখন মাস্ক তার টেসলা ও স্টারলিংক কোম্পানিগুলো ভারতে সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০২৩ সাল থেকে ভারত ইন্টারনেট নজরদারি কঠোর করেছে। এখন অনেক বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা সরাসরি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারেন। এই উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালু করা হয় সহযোগ একটি সরকারি ওয়েবসাইট

এক্সের অভিযোগ, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ ও দেশটির সংবিধানবিরোধী। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা দমন করার ক্ষমতা দেয়

ভারত সরকারের বক্তব্য, তারা অনৈতিক কনটেন্ট মোকাবিলা ও অনলাইন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার দাবি করে, মেটা ও গুগলসহ অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছে। তবে মেটা ও গুগল এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ইলন মাস্ক নিজেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরমপন্থী বলে দাবি করেন তিনি এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সঙ্গে কনটেন্ট মুছে ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। তবে ভারতের মতো বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী রয়েছে, এমন দেশে তিনি এই প্রথম আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।

২০২৩ সালে মাস্ক বলেছিলেন, ভারত বিশ্বের যেকোনো বড় দেশের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ও প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে সেখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

তাকানো যাক গোপন লড়াইয়ের দিকে

রয়টার্স ২৫০০ পৃষ্ঠার গোপন আদালতীয় নথি ও সাতজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, কীভাবে একটি গোপনীয় ও জটিল কনটেন্ট মুছে ফেলার ব্যবস্থা কাজ করে, কীভাবে কর্মকর্তারা এক্সে প্রকাশিত বিষয়বস্তু নিয়ে ক্ষুব্ধ হন ও কী ধরণের বিষয় সেন্সর করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই নির্দেশনাগুলোর কিছু সত্যিকার ভুল তথ্য ও গুজব দমন করার জন্য ছিল, তবে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল নয়াদিল্লিতে কুম্ভমেলার যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণহাণির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ মুছে ফেলার নির্দেশ এমনকি, প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র বা স্থানীয় নেতাদের কটাক্ষ করে তৈরি কার্টুন সরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।

ভারতের আইটি মন্ত্রণালয় আদালতে থাকা বিষয় হওয়ায় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। এক্সও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরাও নজরদারিতে

বিজেপিরই একজন সদস্য, আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী মার্চে এক্সে একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করেন। তাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে মহাকাশচারীর পোশাকে দেখানো হয়। রাজ্য পুলিশ এটিকে সর্বজনীন নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টিকারী উল্লেখ করে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়

বাগচী রয়টার্সকে জানান, এটি ছিল হালকা মেজাজের একটি পোস্ট। তিনি জানতেনই না কোনো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পোস্টটি এখনো অনলাইনে রয়েছে।

সহযোগ ওয়েবসাইট, এক্সের ভাষায় সেন্সরশিপ পোর্টাল

আগে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আইটি মন্ত্রণালয়ই স্পর্শকাতর বা হুমকি সৃষ্টি হয়, এমন কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারতো। ২০২৩ সালে মোদীর সরকার নতুন নির্দেশ জারি করে। এখন দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থা এমনকি, পুলিশও যে কোনো আইন লঙ্ঘনকারী কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারে।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সহযোগ নামের সরকারি পোর্টালটি চালু হয়। তখন বলা হয়, এটি সরকারি কর্মকর্তা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে সহায়ক হবে।

এক্স এই পোর্টালে যোগ দেয়নি। তারা এটিকে আখ্যা দেয় সেন্সরশিপ পোর্টাল হিসেবে ও আদালতে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, অনেক নির্দেশই সরকারের সমালোচনার ওপর সেন্সর চাপানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে।

আদালতের নথিতে যা রয়েছে

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের সংস্থাগুলো এক্সকে প্রায় ১৪০০ পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নির্দেশ এসেছে সাইবারক্রাইম সমন্বয় কেন্দ্র থেকে, যারা সহযোগ ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে। এই সংস্থা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন মোদীর ঘনিষ্ঠ সহকারী ভারতের কেন্দ্রীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

সরকার আদালতে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এক্সকে অবৈধ কনটেন্ট হোস্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এতে বলা হয়, এক্স প্ল্যাটফর্মটি ঘৃণা ও বিভাজন ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।

যেমন জানুয়ারিতে সাইবার ইউনিট এক্সকে তিনটি পোস্ট সরাতে বলে, যাতে জয় শাহকে (অমিত শাহের পুত্র ও আইসিসির চেয়ারম্যান) বিকিনিপরা এক নারীর সঙ্গে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। দুটি পোস্ট এখনো অনলাইনে রয়েছে।

সাংবাদিকতা ও ব্যঙ্গচিত্রকেও লক্ষবস্তু করছে ভারত সরকার

আদালতে এক্স জানায়, ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ছিল এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন, যাতে দিল্লির রেলস্টেশনে পদদলিত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিল। পোস্টগুলো এখনো অনলাইনে রয়েছে।

এপ্রিল মাসে চেন্নাই পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ব্যঙ্গচিত্র মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে একটি লাল রঙের ডাইনোসরকে মুদ্রাস্ফীতি নামে অভিহিত করা হয়েছিল। সেই ডাইনোসরের সঙ্গে মোদী ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছিল। আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে বন্যার প্রস্তুতি না থাকায় সরকারকে কটাক্ষ করা হয়েছিল।

চেন্নাইয়ের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার বি. গীতা জানান, এক্স অনেক সময়ই তাদের নির্দেশ মানে না। তিনি বলেন, এক্স আমাদের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। যেটা অন্য দেশে গ্রহণযোগ্য, তা ভারতে অগ্রহণযোগ্য হতেই পারে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ

ট্যাগঃ

ভারতে সামাজিক মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোদী-মাস্কের নীরব লড়াই

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৯:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাতারা শহরের পুলিশ একটি পুরোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। পোস্টটি এক বছর আগের একটি স্বল্প পরিচিত অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একজন ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকে অপ্রয়োজনীয় বা অকার্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সাতারার পুলিশ পরিদর্শক জিতেন্দ্র শাহানে সেই পোস্টটি নিয়ে এক্স (পূর্বে টুইটার) কর্তৃপক্ষকে পাঠানো একটি গোপনীয় নোটিশে লিখেন, এই পোস্ট ও বিষয়বস্তু গুরুতর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার কারণ হতে পারে।

এই পোস্টটি এখনো অনলাইনে রয়েছে। এটি সেই কয়েকশো পোস্টের একটি, যেগুলোর উল্লেখ করে এক্স চলতি বছরের মার্চে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে মাস্কের কোম্পানিটি। এই লড়াই সামনে এলো এমন সময়ে, যখন মাস্ক তার টেসলা ও স্টারলিংক কোম্পানিগুলো ভারতে সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

২০২৩ সাল থেকে ভারত ইন্টারনেট নজরদারি কঠোর করেছে। এখন অনেক বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা সরাসরি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারেন। এই উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালু করা হয় সহযোগ একটি সরকারি ওয়েবসাইট

এক্সের অভিযোগ, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ অবৈধ ও দেশটির সংবিধানবিরোধী। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা দমন করার ক্ষমতা দেয়

ভারত সরকারের বক্তব্য, তারা অনৈতিক কনটেন্ট মোকাবিলা ও অনলাইন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার দাবি করে, মেটা ও গুগলসহ অন্যান্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছে। তবে মেটা ও গুগল এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ইলন মাস্ক নিজেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরমপন্থী বলে দাবি করেন তিনি এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সঙ্গে কনটেন্ট মুছে ফেলা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। তবে ভারতের মতো বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী রয়েছে, এমন দেশে তিনি এই প্রথম আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।

২০২৩ সালে মাস্ক বলেছিলেন, ভারত বিশ্বের যেকোনো বড় দেশের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ও প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে সেখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

তাকানো যাক গোপন লড়াইয়ের দিকে

রয়টার্স ২৫০০ পৃষ্ঠার গোপন আদালতীয় নথি ও সাতজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, কীভাবে একটি গোপনীয় ও জটিল কনটেন্ট মুছে ফেলার ব্যবস্থা কাজ করে, কীভাবে কর্মকর্তারা এক্সে প্রকাশিত বিষয়বস্তু নিয়ে ক্ষুব্ধ হন ও কী ধরণের বিষয় সেন্সর করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এই নির্দেশনাগুলোর কিছু সত্যিকার ভুল তথ্য ও গুজব দমন করার জন্য ছিল, তবে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনাগুলোর মধ্যে ছিল নয়াদিল্লিতে কুম্ভমেলার যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণহাণির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ মুছে ফেলার নির্দেশ এমনকি, প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র বা স্থানীয় নেতাদের কটাক্ষ করে তৈরি কার্টুন সরানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।

ভারতের আইটি মন্ত্রণালয় আদালতে থাকা বিষয় হওয়ায় মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। এক্সও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরাও নজরদারিতে

বিজেপিরই একজন সদস্য, আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী মার্চে এক্সে একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করেন। তাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে মহাকাশচারীর পোশাকে দেখানো হয়। রাজ্য পুলিশ এটিকে সর্বজনীন নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টিকারী উল্লেখ করে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়

বাগচী রয়টার্সকে জানান, এটি ছিল হালকা মেজাজের একটি পোস্ট। তিনি জানতেনই না কোনো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পোস্টটি এখনো অনলাইনে রয়েছে।

সহযোগ ওয়েবসাইট, এক্সের ভাষায় সেন্সরশিপ পোর্টাল

আগে কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আইটি মন্ত্রণালয়ই স্পর্শকাতর বা হুমকি সৃষ্টি হয়, এমন কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারতো। ২০২৩ সালে মোদীর সরকার নতুন নির্দেশ জারি করে। এখন দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সংস্থা এমনকি, পুলিশও যে কোনো আইন লঙ্ঘনকারী কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিতে পারে।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সহযোগ নামের সরকারি পোর্টালটি চালু হয়। তখন বলা হয়, এটি সরকারি কর্মকর্তা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে সহায়ক হবে।

এক্স এই পোর্টালে যোগ দেয়নি। তারা এটিকে আখ্যা দেয় সেন্সরশিপ পোর্টাল হিসেবে ও আদালতে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তাদের অভিযোগ, অনেক নির্দেশই সরকারের সমালোচনার ওপর সেন্সর চাপানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে।

আদালতের নথিতে যা রয়েছে

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ের সংস্থাগুলো এক্সকে প্রায় ১৪০০ পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নির্দেশ এসেছে সাইবারক্রাইম সমন্বয় কেন্দ্র থেকে, যারা সহযোগ ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে। এই সংস্থা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন মোদীর ঘনিষ্ঠ সহকারী ভারতের কেন্দ্রীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

সরকার আদালতে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এক্সকে অবৈধ কনটেন্ট হোস্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এতে বলা হয়, এক্স প্ল্যাটফর্মটি ঘৃণা ও বিভাজন ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।

যেমন জানুয়ারিতে সাইবার ইউনিট এক্সকে তিনটি পোস্ট সরাতে বলে, যাতে জয় শাহকে (অমিত শাহের পুত্র ও আইসিসির চেয়ারম্যান) বিকিনিপরা এক নারীর সঙ্গে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। দুটি পোস্ট এখনো অনলাইনে রয়েছে।

সাংবাদিকতা ও ব্যঙ্গচিত্রকেও লক্ষবস্তু করছে ভারত সরকার

আদালতে এক্স জানায়, ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় সংবাদমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ছিল এনডিটিভির একটি প্রতিবেদন, যাতে দিল্লির রেলস্টেশনে পদদলিত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিল। পোস্টগুলো এখনো অনলাইনে রয়েছে।

এপ্রিল মাসে চেন্নাই পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ব্যঙ্গচিত্র মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে একটি লাল রঙের ডাইনোসরকে মুদ্রাস্ফীতি নামে অভিহিত করা হয়েছিল। সেই ডাইনোসরের সঙ্গে মোদী ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছিল। আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে বন্যার প্রস্তুতি না থাকায় সরকারকে কটাক্ষ করা হয়েছিল।

চেন্নাইয়ের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার বি. গীতা জানান, এক্স অনেক সময়ই তাদের নির্দেশ মানে না। তিনি বলেন, এক্স আমাদের সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা পুরোপুরি বুঝতে পারে না। যেটা অন্য দেশে গ্রহণযোগ্য, তা ভারতে অগ্রহণযোগ্য হতেই পারে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএএইচ