চট্টগ্রাম নগরীতে কেনাকাটার জন্য অন্যতম ভরসার স্থান রিয়াজউদ্দিন বাজার। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি দেড়শ বছরের পুরোনো। এই বাজারে শাক-সবজি থেকে শুরু করে লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোনও মেলে। খুচরার পাশাপাশি চলে পাইকারি বেচাকেনা। বিভিন্ন পণ্যের দামও তুলনামূলক কম। বাজারটির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার নানান দিক নিয়ে চার পর্বের ধারাবাহিকের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
চট্টগ্রামের পুরোনো শহরের প্রাণকেন্দ্র রিয়াজউদ্দিন বাজার। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ বাজারে ভিড় লেগে থাকে। এখানকার দোকানপাটে পণ্যের এমন বৈচিত্র্য রয়েছে যে, ক্রেতা চাইলে একসঙ্গে মাছ-মাংস, সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, দেশি-বিদেশি সিগারেট, প্রসাধন সামগ্রী, পোশাক ও লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোনও কিনে নিতে পারেন।
শহরের অন্যতম পুরোনো ও ব্যস্ত এই বাজারে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে নিত্যপণ্যের ভিড়। মাছ, মাংস, সবজি, মসলা থেকে শুরু করে চাল-ডাল-সবকিছুরই আলাদা সারি। সকালবেলায় তাজা মাছ আর মাংস কিনতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে বেশি। দুপুরের পর ভিড় বাড়তে থাকে ইলেকট্রনিকস আর মোবাইল দোকানে।
এই বাজারে কোনো কিছুই অপ্রাপ্য নেই। সবই মেলে তুলনামূলক কম দামে। সকালবেলার টাটকা মাছ-মাংস থেকে শুরু করে লাখ টাকার আধুনিক স্মার্টফোনও পাওয়া যায় একই জায়গায়
কাপড়, মোবাইল ফোন, জুতা, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ কয়েকশ পণ্যের দোকান রয়েছে এ বাজারে। পাইকারি ও খুচরা এ বাজারটিতে শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, রয়েছে আধুনিক শোরুমও। লাখ টাকার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিজিটাল সামগ্রী মিলবে এ বাজারে। দৈনন্দিন কেনাকাটা আর আধুনিক প্রযুক্তিপণ্যের মিশেলে গড়ে উঠেছে দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই রিয়াজউদ্দিন বাজার।
প্রতিদিন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, এমনকি আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ ছুটে আসে এখানে। কারণ, এই বাজারে কোনো কিছুই অপ্রাপ্য নেই। সবই মেলে তুলনামূলক কম দামে। সকালবেলার টাটকা মাছ-মাংস থেকে শুরু করে লাখ টাকার আধুনিক স্মার্টফোনও পাওয়া যায় একই জায়গায়।
কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে পণ্য কিনতে আসেন এই বাজারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, বাজারটিতে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়
ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রিয়াজউদ্দিন বাজার। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। একদিকে খুচরা ক্রেতা, অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলেই গড়ে তুলেছেন জমজমাট এ বাজার।
সকালে টাটকা বাজার
ভোরের সূর্য পুব আকাশে উঁকি দেওয়ার আগেই রিয়াজউদ্দিন বাজারের গলিগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে মাছ-মাংস আর সবজি বিক্রেতাদের হাঁকডাকে। একপাশে রূপচাঁদা, ইলিশ, কোরাল থরে থরে সাজানো অন্যপাশে গরু, খাসি, মুরগি কাটছেন কসাইরা। সবজি ও ফলের দোকানগুলোতেও সমান ভিড়। প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা পরিবারের জন্য খাদ্যপণ্য কিনতে এই বাজারে আসেন।
বাজার করতে আসা কাইয়ুম নামের একজন ক্রেতা জানান, এখানে এলে সবকিছু একসঙ্গে কেনা যায়। দামও তুলনামূলক কিছুটা কম। আমি প্রায় সময়ই এখান থেকে বাজার করি।
অতিরিক্ত ভিড়, অপরিচ্ছন্নতা এবং দাম ওঠানামা নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষ রয়েছে। আবার দোকান মালিকদেরও অভিযোগ আছে যে, পর্যাপ্ত পার্কিং ও আধুনিক অবকাঠামোর অভাবে তারা ব্যবসায়িকভাবে নানান সমস্যায় পড়েন
দুপুরের পর পাল্টায় দৃশ্যপট
রিয়াজউদ্দিন বাজারের সকালটা কাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনায়। দুপুরের পর দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। তখন পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন, কসমেটিকস ও গৃহস্থালি পণ্যের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। বিকেল নাগাদ পুরো বাজার হয়ে ওঠে যেন এক ‘মিনি শহর’।
বিশেষত সকালের পর রাত পর্যন্ত মোবাইল ফোনের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকে। সর্বাধুনিক স্মার্টফোনের পাশাপাশি এখানে মেলে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে সস্তা ফোনও।

বাজারের একজন দোকানদার জানিয়েছেন, এই বাজারে মাত্র কয়েক হাজার টাকা দামের ফোন যেমন আছে, তেমনই লাখ টাকার ব্র্যান্ডেড সেটও আছে। যার যেমন সামর্থ্য সে অনুযায়ী কেনেন।
পাইকারি বেচাকেনার প্রাণকেন্দ্র
রিয়াজউদ্দিন বাজার শুধু খুচরা ক্রেতাদের জন্য নয়, পাইকারি ব্যবসারও অন্যতম কেন্দ্র। চট্টগ্রামের বাইরে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে পণ্য কিনতে আসেন এই বাজারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, বাজারটিতে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়।

মানুষ আর বাজারের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
শুধু পণ্য বেচাকেনার জন্যই নয়, রিয়াজউদ্দিন বাজার মূলত চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থী থেকে চাকরিজীবী, গৃহিণী থেকে ব্যবসায়ী—সবার কোনো না কোনো প্রয়োজন মেটায় এ বাজার।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বাজারে পাওয়া যায় না এমন জিনিস কমই আছে।

আছে কিছু অসুবিধাও
যতই জমজমাট হোক, শতবর্ষী এ বাজার নিয়ে অভিযোগও কম নেই। অতিরিক্ত ভিড়, যানজট, অপরিচ্ছন্নতা এবং দাম ওঠানামা নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষ রয়েছে। আবার দোকান মালিকদেরও অভিযোগ আছে যে, পর্যাপ্ত পার্কিং ও আধুনিক অবকাঠামোর অভাবে তারা ব্যবসায়িকভাবে নানান সমস্যায় পড়েন।
সব অভিযোগ-অসুবিধা সত্ত্বেও রিয়াজউদ্দিন বাজার চট্টগ্রামের মানুষের নিত্যদিনের ভরসা। প্রাণবন্ত পরিবেশ আর পণ্যের বৈচিত্র্য বাজারটি আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।
এমআরএএইচ/এমকেআর/এমএফএ/জিকেএস
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।
এডমিন 










