১২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে কালো হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক লাল কেল্লা

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 12

ভারতের রাজধানী দিল্লির ভয়াবহ বায়ু দূষণের কারণে ঐতিহাসিক লাল কেল্লার প্রাচীরে কালো আস্তরণ জমতে শুরু করেছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।

ভারত ও ইতালির গবেষকদের যৌথভাবে পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, লাল বালিপাথরে নির্মিত কেল্লার গায়ে দূষণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এই কালচে স্তর তৈরি হচ্ছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে যা দুর্লভ নকশা ও খোদাইয়ে ক্ষয় ডেকে আনতে পারে।

এই গবেষণাটি লাল কেল্লার ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা দিল্লি শীতকালে বায়ুর মান আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যা প্রায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়।

দীর্ঘদিন ধরেই সংরক্ষণবিদরা দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন, বিশেষ করে দিল্লি ও উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যে।

২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, দূষণের কারণে আগ্রার তাজমহলের সাদা মার্বেল হলুদ ও সবুজাভ বাদামি হয়ে গেছে এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত লাল কেল্লা দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৯৪৭ সালের ১৬ আগস্ট, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীরা এখান থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আসছেন।

গবেষকরা প্রথমে দিল্লির বাতাসের গুণমান পর্যবেক্ষণ করেন। পরে লাল কেল্লার বিভিন্ন প্রাচীর থেকে কালো আস্তরণ সংগ্রহ করে তার রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করেন।

তারা দেখতে পান, বাতাসে থাকা পিএম২ ও পিএম১০ বস্তুকণার কারণে এই আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন জমে থেকে এই কণা দেয়ালে বর্ণ পরিবর্তন, বিবর্ণতা, ফাটল ও ক্ষয় সৃষ্টি করছে।

গবেষকরা আরও জানান, কেল্লার গম্বুজ, খিলান ও সূক্ষ্ম খোদাই করা পাথরের উপরেও ক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে।

কালো আস্তরণের গঠন একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া—শুরুতে এটি পাতলা স্তরে জমে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে সরানো সম্ভব। তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে তা গভীরভাবে প্রাচীরে ঢুকে পড়ে এবং অপসারণ কঠিন হয়ে যায়।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, লাল কেল্লাকে রক্ষা করতে সময়োপযোগী সংরক্ষণ কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় স্টোন সিল্যান্ট বা পাথর সংরক্ষক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই আস্তরণ গঠনের হার কমানো যায়।

এ গবেষণা দিল্লির বাতাসে বিষাক্ততার সরাসরি প্রভাব হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, জাতীয় ঐতিহ্যও মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে।

সূত্র: বিবিসি

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

যে কারণে কালো হয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক লাল কেল্লা

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের রাজধানী দিল্লির ভয়াবহ বায়ু দূষণের কারণে ঐতিহাসিক লাল কেল্লার প্রাচীরে কালো আস্তরণ জমতে শুরু করেছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।

ভারত ও ইতালির গবেষকদের যৌথভাবে পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, লাল বালিপাথরে নির্মিত কেল্লার গায়ে দূষণ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এই কালচে স্তর তৈরি হচ্ছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে যা দুর্লভ নকশা ও খোদাইয়ে ক্ষয় ডেকে আনতে পারে।

এই গবেষণাটি লাল কেল্লার ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।

বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা দিল্লি শীতকালে বায়ুর মান আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যা প্রায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়।

দীর্ঘদিন ধরেই সংরক্ষণবিদরা দূষণের কারণে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন, বিশেষ করে দিল্লি ও উত্তর ভারতের কিছু রাজ্যে।

২০১৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, দূষণের কারণে আগ্রার তাজমহলের সাদা মার্বেল হলুদ ও সবুজাভ বাদামি হয়ে গেছে এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে জরুরি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মিত লাল কেল্লা দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৯৪৭ সালের ১৬ আগস্ট, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীরা এখান থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আসছেন।

গবেষকরা প্রথমে দিল্লির বাতাসের গুণমান পর্যবেক্ষণ করেন। পরে লাল কেল্লার বিভিন্ন প্রাচীর থেকে কালো আস্তরণ সংগ্রহ করে তার রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করেন।

তারা দেখতে পান, বাতাসে থাকা পিএম২ ও পিএম১০ বস্তুকণার কারণে এই আস্তরণ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন জমে থেকে এই কণা দেয়ালে বর্ণ পরিবর্তন, বিবর্ণতা, ফাটল ও ক্ষয় সৃষ্টি করছে।

গবেষকরা আরও জানান, কেল্লার গম্বুজ, খিলান ও সূক্ষ্ম খোদাই করা পাথরের উপরেও ক্ষয় লক্ষ্য করা গেছে।

কালো আস্তরণের গঠন একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া—শুরুতে এটি পাতলা স্তরে জমে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে সরানো সম্ভব। তবে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে তা গভীরভাবে প্রাচীরে ঢুকে পড়ে এবং অপসারণ কঠিন হয়ে যায়।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, লাল কেল্লাকে রক্ষা করতে সময়োপযোগী সংরক্ষণ কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় স্টোন সিল্যান্ট বা পাথর সংরক্ষক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই আস্তরণ গঠনের হার কমানো যায়।

এ গবেষণা দিল্লির বাতাসে বিষাক্ততার সরাসরি প্রভাব হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, জাতীয় ঐতিহ্যও মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে।

সূত্র: বিবিসি

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।