শরৎকাল মানেই বাঙালির হৃদয়ে এক বিশেষ আনন্দ বয়ে আনে দুর্গাপূজা। প্রবাসের মাটিতেও এই আনন্দ থেকে পিছিয়ে নেই লন্ডনের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়। প্রতি বছরের মতো এবারও উৎসবের আমেজে সাজানো হয়েছে লন্ডনের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ।
দুর্গাপূজাকে ঘিরে লন্ডনে শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পূজা ও অঞ্জলি, সন্ধ্যায় আরতি, নাটক, গান, নৃত্য ও কুইজ প্রতিযোগিতা প্রবাসী বাঙালিদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রবাসী বাঙালিরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে খোঁজখবর নেন, পুরোনো সম্পর্ক নবায়ন করেন এবং নতুন বন্ধুত্বের সূচনা হয়। শিশু-কিশোরদের জন্যও থাকে আলাদা বিনোদনের ব্যবস্থা।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যজুড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি দুর্গাপূজা মণ্ডপে শারদীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শুধু লন্ডনেই রয়েছে একাধিক পূজা মণ্ডপ, যার মধ্যে কিছু আয়োজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। ইউকে-তে মোট প্রায় ১০ লাখ হিন্দু বসবাস করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এসেছেন বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবং এ সকল প্রবাসীরাই এই উৎসবের অন্যতম প্রধান আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী।
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় বরং এটি হয়ে উঠেছে প্রবাসী বাঙালিদের জন্য মিলনমেলা—যেখানে একসঙ্গে হাসি, গান, নাচ আর আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়। পূর্ব লন্ডনের ইস্টহ্যামের সাউদএন্ড রোডে সর্বজনীন বাবা লোকনাথ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত পূজা উৎসবটি ছিল বেশ বর্ণাঢ্যময়।

ইস্টহ্যাম স্টেশন থেকে পূজা মণ্ডপ পর্যন্ত লাল শাড়ি পরা নারী এবং হলুদ পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরা পুরুষদের বর্ণিল চলাচল ছিল চোখে পড়ার মত। রং-বেরঙের পোশাক পরিহিত বাচ্চাদের উপস্থিতি উদযাপনটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রতিমা ও পূজারির রং মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠে। পূজা মণ্ডপ ছাড়িয়েও আশপাশের রাস্তাজুড়ে ছিল তাদের পদচারণা ও আলাপ চারিতা।
বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতি-অপরিচিত, নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধ বনিতা এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে এ যেন এক সৌহার্দ্যের মহা মিলনমেলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রসাদ গ্রহণ করতে দেখা যায়।

শেষে বলা যায়, লন্ডনের দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রবাসের মাটিতে নতুন রূপে পরিচয় করিয়ে দেয়। সনাতন ধর্মের মানুষ ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে যোগ দেন এবং উপভোগ করেন বাঙালি ঐতিহ্যের সৌন্দর্য। পূজার শেষে বিজয়ার আনন্দে সবাই মেতে ওঠেন একে অপরকে ‘শুভ বিজয়া ও দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে।
এমআরএম/জিকেএস
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – jagofeature@gmail.com
এডমিন 













