১০:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • 9

নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা। ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ায় বের হয়ে আছে রড। কক্ষের অবস্থা অপরিষ্কার আর স্যাঁতসেঁতে। কক্ষের বড় জায়গা দখল করে রেখেছে ভাঙা বেঞ্চ-চেয়ার। এর মাঝেই চলছে পাঠদান।

এমন বেহাল দশা শরীয়তপুর সদরের দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসার। মাদরাসারটির একটি চারতলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। নয় মাস মেয়াদি কাজে দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। ফলে জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম। পর্যাপ্ত কক্ষের অভাবে একটি কক্ষের মাঝে টিনের বেড়া দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এতে একদিকে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

নতুন ভবন নির্মাণের সময় মাদরাসাটিতে আলিম পর্যায়ে থাকা অনেকে সেই ভবনে ক্লাসের স্বপ্ন দেখলেও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সুযোগ মেলেনি। তিন বছরে অনেক শিক্ষার্থী জীর্ণ কক্ষেই শেষ করেছেন শ্রেণিকার্যক্রম। দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

‘এই রুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। ক্লাসরুম ভাঙাচোরা, দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। রুমের মধ্যে দুর্গন্ধ। তবে পাশেই আমাদের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সেটির কাজ এখন বন্ধ। আমরা চাই, নতুন ভবনের কাজ শেষ করে আমাদের নতুন ক্লাসরুম দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন:
কাজে লাগে না ‘হাত ধোয়া’বেসিন, কলে আসে না পানি
গাইবান্ধায় ‘তথ্য গোপনে’ ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স

এদিকে ভবনের কাজ পুনরায় চালু করতে বারংবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন এই দপ্তরটির কর্মকর্তারা।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৪৬ সালে সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দাদপুর এলাকায় দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসা নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মাদরাসায় ১৯ জন শিক্ষক ও পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মাদরাসাটি টিনশেডে শুরু হলেও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দুটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন দুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে একটিতে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাদরাসার তিনতলা সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে মাদরাসাটির কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স জাহানারা রিসোর্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময়সীমা ২৭০ দিন বেঁধে দেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করে গত বছরের আগস্ট থেকে পুরোপুরি কাজ বন্ধ রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শুধু মৌখিকভাবে কাজ শুরুর আশ্বাস দেয়। তবে এরপরও তারা আর কাজে ফেরেনি।
বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হলেও তাদের কথাও কর্ণপাত করছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে নতুন ভবন না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। অন্যদিকে সন্তানদের মাদরাসায় পাঠিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন অভিভাবকরাও।

ইয়াসির আরাফাত নামের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, এই রুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। ক্লাসরুম ভাঙাচোরা, দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। রুমের মধ্যে দুর্গন্ধ। তবে পাশেই আমাদের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সেটির কাজ এখন বন্ধ। আমরা চাই, নতুন ভবনের কাজ শেষ করে আমাদের নতুন ক্লাসরুম দেওয়া হোক।

‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারকে বেশ কয়েকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কাজ করেনি। ফের তারা শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে। দ্রুত সন্তোষজনক কাজ না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উম্মে হাবিবা নামের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, আলিম দুটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ। সেটি টিনের বেড়া দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তবে একপাশে ক্লাস চললে শব্দের কারণে আরেক পাশের শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। এমনকি একটি পাশে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হলেও আরেক পাশে ব্যবস্থা নেই। খুব কষ্টে ক্লাস করতে হয়।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

হাবিব খান নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমরা সন্তানদের মাদরাসায় দিয়ে বাসায় চিন্তায় থাকি। কেননা ওদের পুরাতন ভবনে ক্লাস করতে হয়, যেখানে পলেস্তারা খসে পড়ে। আমরা চাই নতুন ভবনের কাজ দ্রুত চালু করা হোক।

আরও পড়ুন:
ভূমি জটিলতায় ভোগান্তি কাটে না শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে
ছাত্ররা বিদেশমুখী ছাত্রীরা বিবাহিত, পাস করেনি কলেজের কেউ

শ্রেণিকক্ষের অভাবে ক্লাস নিতে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষকরা। আর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন না হওয়ায় কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির আরবি প্রভাষক আশরাফ হোসাইন বলেন, জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। যেকোনো মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া ভবন না থাকায় দিনদিন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন ভবনটির কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

পুরাতন ভবনে নেই শিক্ষার পরিবেশ। দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ চালু করার দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। এ ব্যাপারে দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি প্রাচীন মাদরাসা। নতুন ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমি ইঞ্জিনিয়ারকে একাধিকবার জানিয়েছি, তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর অবস্থা নেই। শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

কাজ চালুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে পিজি ক্যাশ করে বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-ইমরান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারকে বেশ কয়েকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কাজ করেনি। ফের তারা শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে। দ্রুত সন্তোষজনক কাজ না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা। ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ায় বের হয়ে আছে রড। কক্ষের অবস্থা অপরিষ্কার আর স্যাঁতসেঁতে। কক্ষের বড় জায়গা দখল করে রেখেছে ভাঙা বেঞ্চ-চেয়ার। এর মাঝেই চলছে পাঠদান।

এমন বেহাল দশা শরীয়তপুর সদরের দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসার। মাদরাসারটির একটি চারতলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। নয় মাস মেয়াদি কাজে দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার। ফলে জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম। পর্যাপ্ত কক্ষের অভাবে একটি কক্ষের মাঝে টিনের বেড়া দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। এতে একদিকে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

নতুন ভবন নির্মাণের সময় মাদরাসাটিতে আলিম পর্যায়ে থাকা অনেকে সেই ভবনে ক্লাসের স্বপ্ন দেখলেও সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় সেই সুযোগ মেলেনি। তিন বছরে অনেক শিক্ষার্থী জীর্ণ কক্ষেই শেষ করেছেন শ্রেণিকার্যক্রম। দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

‘এই রুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। ক্লাসরুম ভাঙাচোরা, দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। রুমের মধ্যে দুর্গন্ধ। তবে পাশেই আমাদের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সেটির কাজ এখন বন্ধ। আমরা চাই, নতুন ভবনের কাজ শেষ করে আমাদের নতুন ক্লাসরুম দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন:
কাজে লাগে না ‘হাত ধোয়া’বেসিন, কলে আসে না পানি
গাইবান্ধায় ‘তথ্য গোপনে’ ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স

এদিকে ভবনের কাজ পুনরায় চালু করতে বারংবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন এই দপ্তরটির কর্মকর্তারা।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৪৬ সালে সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দাদপুর এলাকায় দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসা নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মাদরাসায় ১৯ জন শিক্ষক ও পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মাদরাসাটি টিনশেডে শুরু হলেও পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দুটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন দুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে একটিতে সম্পূর্ণভাবে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাদরাসার তিনতলা সম্প্রসারণের অনুমোদন দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে মাদরাসাটির কাজের দায়িত্ব পায় মেসার্স জাহানারা রিসোর্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময়সীমা ২৭০ দিন বেঁধে দেওয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ না করে গত বছরের আগস্ট থেকে পুরোপুরি কাজ বন্ধ রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শুধু মৌখিকভাবে কাজ শুরুর আশ্বাস দেয়। তবে এরপরও তারা আর কাজে ফেরেনি।
বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হলেও তাদের কথাও কর্ণপাত করছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে নতুন ভবন না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। অন্যদিকে সন্তানদের মাদরাসায় পাঠিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন অভিভাবকরাও।

ইয়াসির আরাফাত নামের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, এই রুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। ক্লাসরুম ভাঙাচোরা, দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। রুমের মধ্যে দুর্গন্ধ। তবে পাশেই আমাদের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সেটির কাজ এখন বন্ধ। আমরা চাই, নতুন ভবনের কাজ শেষ করে আমাদের নতুন ক্লাসরুম দেওয়া হোক।

‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারকে বেশ কয়েকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কাজ করেনি। ফের তারা শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে। দ্রুত সন্তোষজনক কাজ না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উম্মে হাবিবা নামের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, আলিম দুটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ। সেটি টিনের বেড়া দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তবে একপাশে ক্লাস চললে শব্দের কারণে আরেক পাশের শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। এমনকি একটি পাশে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হলেও আরেক পাশে ব্যবস্থা নেই। খুব কষ্টে ক্লাস করতে হয়।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

হাবিব খান নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমরা সন্তানদের মাদরাসায় দিয়ে বাসায় চিন্তায় থাকি। কেননা ওদের পুরাতন ভবনে ক্লাস করতে হয়, যেখানে পলেস্তারা খসে পড়ে। আমরা চাই নতুন ভবনের কাজ দ্রুত চালু করা হোক।

আরও পড়ুন:
ভূমি জটিলতায় ভোগান্তি কাটে না শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে
ছাত্ররা বিদেশমুখী ছাত্রীরা বিবাহিত, পাস করেনি কলেজের কেউ

শ্রেণিকক্ষের অভাবে ক্লাস নিতে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষকরা। আর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন না হওয়ায় কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির আরবি প্রভাষক আশরাফ হোসাইন বলেন, জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। যেকোনো মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এছাড়া ভবন না থাকায় দিনদিন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়ে গেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন ভবনটির কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেষ হয়, নতুন ভবনের কাজ শেষ হয় না

পুরাতন ভবনে নেই শিক্ষার পরিবেশ। দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ চালু করার দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। এ ব্যাপারে দাদপুর ভাষানচর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি প্রাচীন মাদরাসা। নতুন ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমি ইঞ্জিনিয়ারকে একাধিকবার জানিয়েছি, তবে এতে কোনো লাভ হয়নি। পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর অবস্থা নেই। শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

কাজ চালুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে পিজি ক্যাশ করে বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-ইমরান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারকে বেশ কয়েকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কাজ করেনি। ফের তারা শিগগিরই কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে। দ্রুত সন্তোষজনক কাজ না দেখাতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।