বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ২০০১-০৬ অর্থবছরে তিনি সর্বমোট ২০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন। এটাই ছিল উনার জীবনে শেষ উন্নয়নমূলক ব্যয়।
দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের যাতে উন্নয়ন হয় সেই কথা মাথায় রেখেই খালেদা জিয়া এই অর্থ অনুমোদন করেছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি কর্মসংস্থানে বিশেষ নজর দিয়ে ছিলেন। প্রায় ৮৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন ও ভ্যাট আইনও তিনি পাস করেছিলেন। যার ওপর দিয়ে দেশ স্বনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে।
উন্নয়ন সহযোগীদের সাহায্যনির্ভরতা থেকে অর্থনীতিকে বের করতে বাণিজ্য উদারীকরণ করেছেন বেগম জিয়া। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে চালু করেন ভ্যাট আইন। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেন। সব মিলিয়ে বেগম খালেদা জিয়া অর্থনীতির প্রথম সংস্কার করেন। সেটির সুফলও পেয়েছে দেশ।
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নয়ন দর্শন এগিয়ে নিয়ে গেছেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে মুক্ত বাজার সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রবর্তক হিসেবে সমধিক পরিচিত।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জীবনের শেষ সময়ে দরিদ্র মানুষের জন্য ছোট ছোট প্রকল্প নিয়েছিলেন যাতে দারিদ্র্য বিমোচন হয়। সেই জন্যই পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ১৩৬ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ খাতেও বিশেষ নজর দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে মোট তিন হাজার ৩৮২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন। এছাড়া শিক্ষায় দুই হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণে দুই হাজার ১১০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন। সড়ক অবকাঠামো যোগাযোগ খাতেও বিশেষ নজর দিয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ দুই হাজার ১২৫ কোটি টাকা সড়ক উন্নয়ন খাতে অনুমোদন করেছিলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের পথচলা খালেদা জিয়ার হাত ধরে
ক্ষমতার শেষ সময়ে শিক্ষায় দুই হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন বেগম জিয়া। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে স্থাপিত হয়। প্রকল্পের উদ্বোধন তিনি করেছিলেন।
নির্বাচিত বেসরকারি কলেজগুলোর একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ঢাকা মহানগরীতে পাঁচটি ও অন্যান্য পাঁচটি বিভাগীয় শহরে পাঁচটিসহ মোট ১০টি নির্ধারিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধমিক শ্রেণি চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি, রেসিডেন্সিয়াল কলেজিয়েট স্কুল, ফুলতলা (আর.সি.এস.পি), খুলনা-এর উন্নয়ন প্রকল্প, জয়পুরহাটে একটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ স্থাপন, ফিমেল সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রজেক্ট (এফইএসপি) (৩য় পর্যায়) বেগম খালেদা জিয়া উদ্বোধন করেছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলায় একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি, জার্মান সাহায্যপুষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্ট, বরিশাল ব্রজমোহন (বি.এম) বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পথচলা বেগম জিয়ার হাত ধরে। শহরের কর্মজীবি শিশুদের জন্য মৌলিক শিক্ষা প্রকল্পও তিনি নিয়েছিলেন।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করেন খালেদা জিয়া
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক সময় নাম ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের সম্প্রসারিত অংশের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও মেজনাইন তলা ভবন তিনি নির্মাণ করেন। এছাড়া অবকাঠামো খাতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের সেড বিহীন যাত্রী প্লাটফরমে প্লাটফরম সেড নির্মাণ, আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর, টাঙ্গাইল সড়ক উন্নয়ন, লালমাই-বড়ুরা-জগৎপুর ভায়া ঝলম-আড্ডা সড়ক উন্নয়ন, গৌরীপুর-কচুয়া-হাজীগঞ্জ সড়কটির কচুয়া-হাজীগঞ্জ অংশের সড়ক উন্নয়ন, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ, রাজাচাপিতলা-রামচন্দ্রপুর-পাঁচকিত্তা সড়ক উন্নয়ন, জনগুরুত্বপূর্ণ জেলা সড়ক উন্নয়ন, ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়ক (নারায়ণগঞ্জ অংশ), ক্যাপটেন লিক সড়ক উন্নয়ন, জিয়ানগর বলেশ্বর নদীর ওপর সেতু নির্মাণ (সংযোগ সড়কসহ), সুনামগঞ্জ-কাচিরগাতি-বিশ্বম্ভপুর সড়ক নির্মাণ, পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাংগা সড়ক উন্নয়ন বেগম জিয়ার হাত ধরে।
এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া সিলেট সেকশনের ১২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলিংক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, ঢাকা-মোংলা ও চট্টগ্রাম-মোংলা নৌ-পথদ্বয়ের সংযোগ রক্ষাকারী গাবখান খাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রশস্তকরণ ও নাব্যতা উন্নয়ন, উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের রুপকার ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর ওপর (ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী) মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লাকসাম-নোয়াখালী সেকশনের পুনর্বাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৬৫টি (৫৬টি এমজি ও ৯টি বিজি) লোকোমোটিভ পুনর্বাসন, বৈদ্যের বাজার-সোনারগাঁও- মোগড়াপাড়া-কাইকারটেক নবীগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন, নেত্রকোনা-মদন (আটপাড়া সংযোগসহ) সড়ক উন্নয়ন, রহমতপুর-বাবুগঞ্জ-মুলাদী-হিজলা সড়ক উন্নয়ন, সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প-২, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সাহায্যপুষ্ট জরুরি বন্যা ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন প্রকল্প, পাটুরিয়া-ফেরিঘাটসহ লঞ্চ টার্মিনাল সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বন্যা, ২০০৪ এ ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সেস, ব্যাংক ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহের পুনর্বাসন, বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া স্টেশন, লোকো সেড, ইয়ার্ডসহ সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রিমডেলিং,বাংলাদেশ রেলওয়ের মাইজগাঁও ও শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন রিমডেলিং ও পুনর্বাসন, যাত্রী সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে জিয়া বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে সেকশনকে ইলেকট্রিক ট্রাকশনসহ দ্বৈত গেজে রূপান্তরের লক্ষ্যে সমীক্ষা,জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবনের সম্প্রসারিত অংশে ২য়, ৩য় ও মেজনাইন তলা নির্মাণ করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
এমওএস/এমএমএআর/এমএস
এডমিন 













