০৮:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 22

দেশের আর্থিক খাতে দীর্ঘদিনের সংকট মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড।

রোববার (৩০ নভেম্বর) গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী—যা ব্যর্থ ব্যাংক ও এনবিএফআইকে একীভূত, পুনর্গঠন বা লিকুইডেট করার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো।

বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা ৯টি এনবিএফআই হচ্ছে—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

এই ৯টি প্রতিষ্ঠান মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এর দায় বহন করছে। যার পরিমাণ গত বছরের শেষে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

আমানতকারীদের অগ্রাধিকার
বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে পরিপক্ব আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই প্রথম লক্ষ্য। সরকার মৌখিকভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এই ৯ প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, আর ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে আছে—পিপলস লিজিং ১,৪০৫ কোটি টাকা, আবিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।

৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা—অর্থাৎ সব সম্পদ বিক্রি করলেও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে কিছুই থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল নজরদারি, সম্পর্কিত দলকে ঋণ, জমে থাকা ঋণ পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতা, কৃত্রিমভাবে সম্পদ বেশি দেখানো—এসব কারণে বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।

এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ চিহ্নিত করে; সেখান থেকেই ৯টিকে বন্ধের তালিকায় আনা হয়।

ঝুলছে ১১ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য
যাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’কে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের ইতিহাসে একীভূত হওয়া সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করছে।

ইএআর/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

আপডেট সময়ঃ ১২:০২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের আর্থিক খাতে দীর্ঘদিনের সংকট মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও সমস্যাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড।

রোববার (৩০ নভেম্বর) গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হবে সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী—যা ব্যর্থ ব্যাংক ও এনবিএফআইকে একীভূত, পুনর্গঠন বা লিকুইডেট করার প্রথম পূর্ণাঙ্গ কাঠামো।

বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা ৯টি এনবিএফআই হচ্ছে—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আবিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

এই ৯টি প্রতিষ্ঠান মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এর দায় বহন করছে। যার পরিমাণ গত বছরের শেষে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

আমানতকারীদের অগ্রাধিকার
বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে পরিপক্ব আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই প্রথম লক্ষ্য। সরকার মৌখিকভাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, এই ৯ প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত। এর মধ্যে ব্যক্তিগত আমানত ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, আর ব্যাংক ও করপোরেট আমানত ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।

ব্যক্তিগত আমানতের মধ্যে সর্বোচ্চ আটকে আছে—পিপলস লিজিং ১,৪০৫ কোটি টাকা, আবিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি ও এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।

৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা—অর্থাৎ সব সম্পদ বিক্রি করলেও শেয়ারহোল্ডারদের হাতে কিছুই থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্বল নজরদারি, সম্পর্কিত দলকে ঋণ, জমে থাকা ঋণ পুনরুদ্ধারের ব্যর্থতা, কৃত্রিমভাবে সম্পদ বেশি দেখানো—এসব কারণে বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।

এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ এনবিএফআইকে ‘রেড ক্যাটাগরিতে’ চিহ্নিত করে; সেখান থেকেই ৯টিকে বন্ধের তালিকায় আনা হয়।

ঝুলছে ১১ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য
যাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’কে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি দেশের ইতিহাসে একীভূত হওয়া সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করছে।

ইএআর/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।