আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ বছর বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যা সারা দেশের কৃষকদের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এখানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় ধান। কৃষকরা ধানের বীজতলা তৈরি করে মাঠে নিজেদের স্বপ্ন বুনেছিলেন, কিন্তু প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ বীজতলা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এবার দেশে হাজার হাজার হেক্টর জমির বীজ নষ্ট হয়েছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে। একবার বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার পর কৃষকরা পুনরায় বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করেছেন। তবে যেভাবে বৃষ্টি অব্যাহত আছে, তাতে তারা এখনো শঙ্কিত।
চৈত্রের শুরুতে হঠাৎ বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি নামায় আবহাওয়াবিদেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ, আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সাধারণত মার্চ মাসে সারা দেশে গড়পড়তায় ৫২.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। চলতি মাসের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে সংস্থাটি স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলেছিল, কিন্তু এবার তা উল্টো হতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এটি ঘটছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এবার শুধু ফেনী জেলাতেই ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আর সারা দেশ মিলিয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ে বৃষ্টির সঙ্গে সাধারণত যে দমকা হাওয়া থাকে, এবার তা-ও ছিল না। বরং বর্ষার মতো মেঘ কালো করে অঝোরধারায় বৃষ্টি ঝরেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হঠাৎ নামা এ ভারী বৃষ্টির কারণ অনুসন্ধানে একটি বিশেষ সভা করেছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে এটি পুবালি বাতাসের প্রভাবে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে বৈশ্বিক আবহাওয়ার অন্যতম প্রভাবক ‘মেডেন জুলিয়ান অসিলেশন’ বা এমজেও চক্র কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। ওই এমজেও বৈশ্বিক আবহাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগরে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। এটি যে এলাকায় সক্রিয় হয়, সেখানে বৃষ্টি বেড়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে তা আরব সাগর দিয়ে ভারত মহাসাগর হয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরে চলে আসে। এতে এক সপ্তাহ ধরে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়। এসব কারণেই মূলত বাংলাদেশে এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এবার বৃষ্টি বেড়েছে ১১.৩ শতাংশ।