০৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেরপুরে নিষিদ্ধ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছে সয়লাব

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:১৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 17

প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারক আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান সৃজন এবং এর চারা ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সাম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন- ১ শাখার এক গেজেট প্রকাশ করে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সরকারি এই নির্দেশনা অমান্য করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেদারসে চলছে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ক্রয়-বিক্রয়।

এদিকে, নতুন করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব নিষিদ্ধ গাছের বাগান সৃজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ইতিপূর্বে উপজেলার বিভিন্ন নার্সারীর মালিককে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রণোদনা দিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন ও চারা বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নার্সারীগুলো এখনো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কৃষি বিভাগের নিশ্চুপ ভূমিকার কারণেই নিষিদ্ধ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে নার্সারীগুলো।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এসব গাছের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে নার্সারীর মালিক ও জনসাধারণকে সচেতন করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৭৬ হাজার আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি নার্সারীকে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার এর নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। আমরা এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অনেক আগে থেকেই সচেতন করে আসছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব গাছের চারা যত্রতত্র ক্রয়-বিক্রয় ও রোপণ এখনো বন্ধ হচ্ছে না। প্রণোদনা পেয়েও নার্সারীগুলোতে এখনো নিষিদ্ধ গাছের চারা কেন উৎপাদন করছে? এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

বাজারে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রেতা ও নার্সারীর মালিকদের ভাষ্যমতে, আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বিক্রি করা নিষিদ্ধ হয়েছে তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না। তাই এসব গাছের চারা বিক্রি করছেন তারা।

সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনের কঠোর নজরদারী আর সামাজিক সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে পরিবেশের ক্ষতিকারক এই গাছের বাগান সৃজন।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে নালিতাবাড়ী কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নার্সারীকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব গাছ পরিবেশের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা বোঝাতে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি অফিস। এরপরও কোথাও আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ বা ক্রয়-বিক্রয় করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘সরকারিভাবে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়নসমূহে এ নিয়ে মাইকিং করেছি। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে, বিশেষ করে পৌর বাজারসমূহে যারা নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা বিক্রি করতো তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কেউ এসব গাছের চারা বিক্রি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

বাঁধন/সিইচা/সাএ

ট্যাগঃ

শেরপুরে নিষিদ্ধ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছে সয়লাব

আপডেট সময়ঃ ০৫:১৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকারক আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান সৃজন এবং এর চারা ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সাম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন- ১ শাখার এক গেজেট প্রকাশ করে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সরকারি এই নির্দেশনা অমান্য করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেদারসে চলছে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ক্রয়-বিক্রয়।

এদিকে, নতুন করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব নিষিদ্ধ গাছের বাগান সৃজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ইতিপূর্বে উপজেলার বিভিন্ন নার্সারীর মালিককে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রণোদনা দিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন ও চারা বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নার্সারীগুলো এখনো তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কৃষি বিভাগের নিশ্চুপ ভূমিকার কারণেই নিষিদ্ধ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে নার্সারীগুলো।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এসব গাছের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে নার্সারীর মালিক ও জনসাধারণকে সচেতন করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৭৬ হাজার আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি নার্সারীকে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার এর নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। আমরা এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অনেক আগে থেকেই সচেতন করে আসছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব গাছের চারা যত্রতত্র ক্রয়-বিক্রয় ও রোপণ এখনো বন্ধ হচ্ছে না। প্রণোদনা পেয়েও নার্সারীগুলোতে এখনো নিষিদ্ধ গাছের চারা কেন উৎপাদন করছে? এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

বাজারে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রেতা ও নার্সারীর মালিকদের ভাষ্যমতে, আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বিক্রি করা নিষিদ্ধ হয়েছে তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না। তাই এসব গাছের চারা বিক্রি করছেন তারা।

সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনের কঠোর নজরদারী আর সামাজিক সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে পরিবেশের ক্ষতিকারক এই গাছের বাগান সৃজন।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে নালিতাবাড়ী কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নার্সারীকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব গাছ পরিবেশের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা বোঝাতে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি অফিস। এরপরও কোথাও আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ বা ক্রয়-বিক্রয় করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘সরকারিভাবে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়নসমূহে এ নিয়ে মাইকিং করেছি। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে, বিশেষ করে পৌর বাজারসমূহে যারা নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা বিক্রি করতো তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কেউ এসব গাছের চারা বিক্রি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

বাঁধন/সিইচা/সাএ