০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র: গভর্নর

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 20

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন গভর্নর।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়ানো জরুরি। সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চল বিপুল সম্ভাবনাময়। তবে সেই সম্ভাবনার পূর্ণ বাস্তবায়নে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এসএমই ও কৃষি ঋণের প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অব্যবহৃত অর্থ চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশনা দেন গভর্নর। একই সঙ্গে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জোরদারে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেন চালুর ওপরও গুরুত্ব দেন গভর্নর।

আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সহজতর করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দ্রুত আরটিজিএস চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রথম ক্যাশলেস জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন গভর্নর। পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় নিয়ে কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন। সেখানে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক রূপান্তর, ব্লু-ইকোনমি, সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই শিল্পনগর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কৃষি, সিএমএসএমই ও রপ্তানি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরা হয়।

সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মীর হোসেন সোহেল, অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবিদা মোস্তফা। তিনি নারীদের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, সফট ঋণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দেন।

এ সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, সরকারি দপ্তর, ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান, নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমআরএএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

অস্ত্রধারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র: গভর্নর

আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, ভারী শিল্প, জ্বালানি অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন গভর্নর।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ের মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি বাড়ানো জরুরি। সমুদ্র, পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চল বিপুল সম্ভাবনাময়। তবে সেই সম্ভাবনার পূর্ণ বাস্তবায়নে আর্থিক খাতের সুদৃঢ় ভূমিকা অপরিহার্য।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো উৎপাদনমুখী খাতে পর্যাপ্ত ও স্বল্পমূল্যের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এসএমই ও কৃষি ঋণের প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অব্যবহৃত অর্থ চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপযুক্ত গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করার নির্দেশনা দেন গভর্নর। একই সঙ্গে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জোরদারে প্রতিটি ব্যাংককে অন্তত একটি বিদ্যালয়ে আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন তিনি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস লেনদেন চালুর ওপরও গুরুত্ব দেন গভর্নর।

আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সহজতর করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক লেনদেনের জন্য দ্রুত আরটিজিএস চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।

সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রথম ক্যাশলেস জেলা হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের হাতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন গভর্নর। পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকায় নারী এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।

সভায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করণীয় নিয়ে কনসেপ্ট পেপার উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল আমিন। সেখানে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক রূপান্তর, ব্লু-ইকোনমি, সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মীরসরাই শিল্পনগর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কৃষি, সিএমএসএমই ও রপ্তানি খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরা হয়।

সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মীর হোসেন সোহেল, অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবিদা মোস্তফা। তিনি নারীদের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, সফট ঋণ এবং আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দেন।

এ সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, সরকারি দপ্তর, ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধান, নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমআরএএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।