০৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আবর্জনায় ভরা ডোবা-নালা, দুর্গন্ধ-মশায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • 133

গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডোবা-নালাগুলো আবর্জনায় ভরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেখানে বিস্তার ঘটছে মশা-মাছির। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পৌরসভা যেন মশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। পৌরবাসী চরম দুর্ভোগে পোহালেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলেও গত প্রায় ১৫ বছরে পৌর শহরের ডোবা-নালা পরিষ্কারে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে পৌর এলাকার নানা স্থানে ময়লা-আবর্জনায় আটকে থাকা পানি পচে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর মাঝেই আবাস গেড়েছ মশা।

পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী, তুমলিয়া, আড়িখোলা, দুর্বাটি, বাঙ্গালহাওলা, দেওয়ালেরটেক, দড়িসোম, মুনশুরপুর, বালীগাঁও, খঞ্জনা, ভাদগাতী, বড়নগর, চৌড়া, ঘোনাপাড়া, মূলগাঁও, উত্তরগাঁও, চরপাড়া, দেওপাড়া ও চৈতারপাড়া এসব এলাকাজুড়ে ডোবা-নালায় জমে থাকা পঁচা পানি ও আবর্জনার কারণে একদিকে যেমন সৃষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি রাতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট মানুষ।

আড়িখোলা এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন আকন্দ জানান, ডোবা-নালায় এত ময়লা জমে আছে অথচ পরিষ্কারে কেউ উদ্যোগ নেয় না। এখানে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে, মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো দায়।

দড়িসোম গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, শুধু ডোবা-নালা নয়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়েছে মশার উপদ্রব। খেয়াঘাট সংলগ্ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি এখন মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা যায় কালীগঞ্জের প্রধান ডাকঘরেও। সেখানেও সামান্য বৃষ্টিতেই চারপাশে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন, আর সেই পানিতেই নির্বিঘ্নে বাড়ছে মশা। এতে শহরের স্বাস্থ্য ও জনসুরক্ষার ঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ।

আবর্জনায় ভরা ডোবা-নালা, দুর্গন্ধ-মশায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী

পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, পৌর ভবনের আশপাশেই যখন বৃষ্টির পানি জমে মশা জন্ম নিচ্ছে, তখন আমরা সাধারণ মানুষ আর কী করব? পৌরসভাই যদি উদাহরণ না হয়, তাহলে দায় যাবে কোথায়?

ভাদার্ত্তী গ্রামের শহিদুল সরকার বলেন, মশা নিধনের ওষুধ ছিটালেও তেমন কাজ হচ্ছে না। ময়লা না সরালে মশা জন্মাবেই।

মূলগাঁওয়ের বাসিন্দা নাইম মিয়ার মতে, মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা মুশকিল। ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে দিলে কিছুটা উপকার হতো।

এদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের কার্যক্রম শুরু হলেও তা মশার প্রকোপ ঠেকাতে যথেষ্ট নয় বলে দাবি স্থানীয়দের।

মশা নিধন ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পৌরবাসীর। তারা শুধু ফগার মেশিন নয়, টেকসই সমাধান হিসেবে নিয়মিত ডোবা-নালা পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের দাবি করেন।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, মশা নিধনে এরই মধ্যে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই ডোবা-নালাও পরিষ্কার করা হবে।

এদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, পৌর এলাকার পরিত্যক্ত জলাশয় ও ডোবা-নালা পরিদর্শন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আব্দুর রহমান আরমান/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

আবর্জনায় ভরা ডোবা-নালা, দুর্গন্ধ-মশায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী

আপডেট সময়ঃ ০৬:০০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডোবা-নালাগুলো আবর্জনায় ভরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেখানে বিস্তার ঘটছে মশা-মাছির। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি পৌরসভা যেন মশার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। পৌরবাসী চরম দুর্ভোগে পোহালেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হলেও গত প্রায় ১৫ বছরে পৌর শহরের ডোবা-নালা পরিষ্কারে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে পৌর এলাকার নানা স্থানে ময়লা-আবর্জনায় আটকে থাকা পানি পচে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর মাঝেই আবাস গেড়েছ মশা।

পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী, তুমলিয়া, আড়িখোলা, দুর্বাটি, বাঙ্গালহাওলা, দেওয়ালেরটেক, দড়িসোম, মুনশুরপুর, বালীগাঁও, খঞ্জনা, ভাদগাতী, বড়নগর, চৌড়া, ঘোনাপাড়া, মূলগাঁও, উত্তরগাঁও, চরপাড়া, দেওপাড়া ও চৈতারপাড়া এসব এলাকাজুড়ে ডোবা-নালায় জমে থাকা পঁচা পানি ও আবর্জনার কারণে একদিকে যেমন সৃষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, তেমনি রাতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট মানুষ।

আড়িখোলা এলাকার বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন আকন্দ জানান, ডোবা-নালায় এত ময়লা জমে আছে অথচ পরিষ্কারে কেউ উদ্যোগ নেয় না। এখানে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে, মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমানো দায়।

দড়িসোম গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আল আমিন বলেন, শুধু ডোবা-নালা নয়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়েছে মশার উপদ্রব। খেয়াঘাট সংলগ্ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি এখন মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা যায় কালীগঞ্জের প্রধান ডাকঘরেও। সেখানেও সামান্য বৃষ্টিতেই চারপাশে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন, আর সেই পানিতেই নির্বিঘ্নে বাড়ছে মশা। এতে শহরের স্বাস্থ্য ও জনসুরক্ষার ঝুঁকি বাড়ছে কয়েকগুণ।

আবর্জনায় ভরা ডোবা-নালা, দুর্গন্ধ-মশায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী

পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, পৌর ভবনের আশপাশেই যখন বৃষ্টির পানি জমে মশা জন্ম নিচ্ছে, তখন আমরা সাধারণ মানুষ আর কী করব? পৌরসভাই যদি উদাহরণ না হয়, তাহলে দায় যাবে কোথায়?

ভাদার্ত্তী গ্রামের শহিদুল সরকার বলেন, মশা নিধনের ওষুধ ছিটালেও তেমন কাজ হচ্ছে না। ময়লা না সরালে মশা জন্মাবেই।

মূলগাঁওয়ের বাসিন্দা নাইম মিয়ার মতে, মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা মুশকিল। ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে দিলে কিছুটা উপকার হতো।

এদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের কার্যক্রম শুরু হলেও তা মশার প্রকোপ ঠেকাতে যথেষ্ট নয় বলে দাবি স্থানীয়দের।

মশা নিধন ও প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পৌরবাসীর। তারা শুধু ফগার মেশিন নয়, টেকসই সমাধান হিসেবে নিয়মিত ডোবা-নালা পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণের দাবি করেন।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পিএনও) শ্যামল কুমার দত্ত বলেন, মশা নিধনে এরই মধ্যে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই ডোবা-নালাও পরিষ্কার করা হবে।

এদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, পৌর এলাকার পরিত্যক্ত জলাশয় ও ডোবা-নালা পরিদর্শন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করা হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আব্দুর রহমান আরমান/এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।