সৃজনে, চিন্তায়, মননে ও প্রজ্ঞায় ধ্রুবতারা হয়ে পাঠকের হৃদয় আলোকিত করেছেন অধ্যাপক যতীন সরকার। তিনি ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য, দর্শন, লৌকিক ঐতিহ্য নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা বাংলা ভাষায় উপহার দিয়েছেন। তাঁর প্রাঞ্জল লেখা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, রসবোধ, জীবনবোধ—সব কিছুই অসাধারণ।
অধ্যাপক যতীন সরকারের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর। বইয়ের নাম ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’। এরপর প্রকাশিত হয়েছে অর্ধশতাধিক বই। বইসমূহ গভীর মননশীলতা ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহন করে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে—‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন’, ‘মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’, ‘নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘আমাদের চিন্তাচর্চার দিক-দিগন্ত’, ‘রাজনীতি ও দুর্নীতি বিষয়ক কথাবার্তা’, ‘ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ’, ‘পাকিস্তানের ভূত দর্শন’, ‘ভাষা সংস্কৃতি উৎস নিয়ে ভাবনা চিন্তা’, ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’, ‘সত্য যে কঠিন’, ‘আমার রবীন্দ্র অবলোকন’, ‘কালের কপোল তলে’, ‘প্রান্তিক ভাবনা পুঞ্জ’, ‘ব্যাকরণের ভয় অকারণ’ প্রভৃতি।
পাশাপাশি শিশুদের জন্য ব্যাকরণগ্রন্থ রচনা করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণগ্রন্থের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে রচনা করেন ‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’, ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’।
তাঁর সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে ‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’ বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা। এমনকি ‘যতীন সরকার রচনাসমগ্র’ নামে ৬টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
বাঙালির বুদ্ধির মুক্তি ও চেতনার বিকাশে সমর্পিত এ চিন্তাবিদ পাকিস্তানের ইতিহাস রচনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন’ অনবদ্য সংযোজন। ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য, লৌকিক ঐতিহ্য বিষয়ে নিয়ে তাঁর লেখাগুলো সচেতন পাঠকের নজর কেড়েছে।
তাঁর লেখালেখি শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন ও ধর্মের বিস্তৃত জগতেও অবাধ বিচরণ ছিল। গত পাঁচ দশকে তাঁর রচনা দেশের সমাজ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। চিন্তার স্পষ্টতায়, বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণতায়, বক্তব্যের ঋজুতায় ও জীবন দর্শনের বলিষ্ঠতায় প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে অমূল্য সম্পদ।
এসইউ/জিকেএস