০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রেমিকার কাছে মহান সাজতে নাসা থেকে চাঁদের পাথর চুরি

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • 31

প্রেমিকার মন পেতে প্রেমিকের আকাশের চাঁদ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নতুন নয়। এক্ষেত্রে সাধারণত রূপক অর্থেই ব্যবহৃত হয় চাঁদ। তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের (নাসা) সাবেক শিক্ষানবিশ বিজ্ঞানী থাড রবার্টস যা করেছেন, তা কোনো থ্রিলার মুভির চেয়ে কম নয়

রবার্টস চেয়েছিলেন, তার প্রেমিকা বুঝুক তিনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। এমনকি, তিনি প্রেমিকার সঙ্গে চাঁদের মাটিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই ফ্যান্টাসি বাস্তবায়িত করতে রীতিমতো কাণ্ড বাঁধিয়ে বসেছিলেন রবার্টস। মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের সদর দপ্তরে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনিতে থাকা চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন  তিনি, যা সেই সময় সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে।

নাসায় চাঁদের পাথর চুরির এই ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ২৩ বছর আগে, ২০০২ সালে। ২৪ বছর বয়সী থাড রবার্টস, তার প্রেমিকা টিফানি ফাউলারসহ মোট চার জন এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। নাসার ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরত রবার্টসের উদ্দেশ্য ছিল, প্রেমিকার সঙ্গে চাঁদের মাটিতে মিলিত হওয়া সেই ফ্যান্টাসি পূরণের লক্ষ্যে নাসার সিকিউরিটি ক্যামেরা হ্যাক করেন তিনি।

নাসার কর্মীদের জন্য ব্যাজ তৈরি করে বিশেষ ধরনের নিয়োপ্রিন বডিস্যুট (সাঁতারের জন্য ব্যবহৃত পোশাক) পরে মিশনে নামেন তারা। এই অপরাধে সফলও হন। নাসার ল্যাব থেকে চুরি যায় ৭ দশমিক ৭ কেজি ওজনের একাধিক পাথর। যার প্রতি গ্রামের বাজার মূল্য ১০০০ থেকে ৫০০০ ডলার।

তবে সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। এই পাথর বিক্রির জন্য বেলজিয়ামের একজন ক্রেতাকে ঠিক করা হয়। ওই শিল্পপতি পাথরগুলি কিনতে চাইলেও কোনোভাবে তার সন্দেহ হওয়ায় তিনি এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই বাধে বিপত্তি। এমন ভয়াবহ তথ্য সামনে আসার পর গোপন অপারেশন শুরু করে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ।

ওই পাথর কেনার টোপ দিয়ে যোগাযোগ করা হয় অপরাধীদের সঙ্গে। শেষে এফবিআইয়ের জালে ধরা পড়ে পুরো চক্রটি। পরবর্তী সময়ে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্টস জানিয়েছিলেন, এই কান্ড তিনি করেছিলেন প্রেমিকাকে খুশি করতে। চাঁদের মাটিতে শারিরীক সম্পর্কের ফ্যান্টাসি পূরণ করতে।

২০১২ সালে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবার্টস বলেন, সহজভাবে বললে, আমি এটা করেছি ভালোবাসার জন্য। আমি চেয়েছিলাম কেউ বুঝুক, আমি কতটা যত্ন করি। সেই প্রতীকী বিষয়টি আমাদের জন্য ছিল, যাতে মনে হয় আমরা এমন কিছু করছি যা আগে কেউ করেনি।

২০০২ সালে গ্রেফতারের পর রবার্টসকে ৮ বছরের ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, ২০০৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার বান্ধবী ফাউলার ও আরেক সহযোগী শে সাউরকে ১৫০ ঘন্টা সমাজসেবা, ১৮০ দিনের গৃহবন্দী ও ৯০০০ ডলারের বেশি জরিমানা করা হয়। চতুর্থ অপরাধী, গর্ডন ম্যাকওয়ার্টারকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জেলে থাকাকালীন, রবার্টস ‘আইনস্টাইন’স ইনটুইশন’ নামে ৭০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় পদার্থবিদ হিসেবে কর্মরত। ২০১১ সালে রবার্টসের এই কীর্তির উপর বেন ম্যাজরিক নামে এক লেখক ‘সেক্স অন দ্য মুন’ নামে একটি বইও লেখেন

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় খবর

প্রেমিকার কাছে মহান সাজতে নাসা থেকে চাঁদের পাথর চুরি

আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

প্রেমিকার মন পেতে প্রেমিকের আকাশের চাঁদ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নতুন নয়। এক্ষেত্রে সাধারণত রূপক অর্থেই ব্যবহৃত হয় চাঁদ। তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের (নাসা) সাবেক শিক্ষানবিশ বিজ্ঞানী থাড রবার্টস যা করেছেন, তা কোনো থ্রিলার মুভির চেয়ে কম নয়

রবার্টস চেয়েছিলেন, তার প্রেমিকা বুঝুক তিনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। এমনকি, তিনি প্রেমিকার সঙ্গে চাঁদের মাটিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই ফ্যান্টাসি বাস্তবায়িত করতে রীতিমতো কাণ্ড বাঁধিয়ে বসেছিলেন রবার্টস। মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের সদর দপ্তরে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনিতে থাকা চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন  তিনি, যা সেই সময় সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বে।

নাসায় চাঁদের পাথর চুরির এই ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ২৩ বছর আগে, ২০০২ সালে। ২৪ বছর বয়সী থাড রবার্টস, তার প্রেমিকা টিফানি ফাউলারসহ মোট চার জন এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। নাসার ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরত রবার্টসের উদ্দেশ্য ছিল, প্রেমিকার সঙ্গে চাঁদের মাটিতে মিলিত হওয়া সেই ফ্যান্টাসি পূরণের লক্ষ্যে নাসার সিকিউরিটি ক্যামেরা হ্যাক করেন তিনি।

নাসার কর্মীদের জন্য ব্যাজ তৈরি করে বিশেষ ধরনের নিয়োপ্রিন বডিস্যুট (সাঁতারের জন্য ব্যবহৃত পোশাক) পরে মিশনে নামেন তারা। এই অপরাধে সফলও হন। নাসার ল্যাব থেকে চুরি যায় ৭ দশমিক ৭ কেজি ওজনের একাধিক পাথর। যার প্রতি গ্রামের বাজার মূল্য ১০০০ থেকে ৫০০০ ডলার।

তবে সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। এই পাথর বিক্রির জন্য বেলজিয়ামের একজন ক্রেতাকে ঠিক করা হয়। ওই শিল্পপতি পাথরগুলি কিনতে চাইলেও কোনোভাবে তার সন্দেহ হওয়ায় তিনি এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই বাধে বিপত্তি। এমন ভয়াবহ তথ্য সামনে আসার পর গোপন অপারেশন শুরু করে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ।

ওই পাথর কেনার টোপ দিয়ে যোগাযোগ করা হয় অপরাধীদের সঙ্গে। শেষে এফবিআইয়ের জালে ধরা পড়ে পুরো চক্রটি। পরবর্তী সময়ে এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্টস জানিয়েছিলেন, এই কান্ড তিনি করেছিলেন প্রেমিকাকে খুশি করতে। চাঁদের মাটিতে শারিরীক সম্পর্কের ফ্যান্টাসি পূরণ করতে।

২০১২ সালে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবার্টস বলেন, সহজভাবে বললে, আমি এটা করেছি ভালোবাসার জন্য। আমি চেয়েছিলাম কেউ বুঝুক, আমি কতটা যত্ন করি। সেই প্রতীকী বিষয়টি আমাদের জন্য ছিল, যাতে মনে হয় আমরা এমন কিছু করছি যা আগে কেউ করেনি।

২০০২ সালে গ্রেফতারের পর রবার্টসকে ৮ বছরের ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, ২০০৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার বান্ধবী ফাউলার ও আরেক সহযোগী শে সাউরকে ১৫০ ঘন্টা সমাজসেবা, ১৮০ দিনের গৃহবন্দী ও ৯০০০ ডলারের বেশি জরিমানা করা হয়। চতুর্থ অপরাধী, গর্ডন ম্যাকওয়ার্টারকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জেলে থাকাকালীন, রবার্টস ‘আইনস্টাইন’স ইনটুইশন’ নামে ৭০০ পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় পদার্থবিদ হিসেবে কর্মরত। ২০১১ সালে রবার্টসের এই কীর্তির উপর বেন ম্যাজরিক নামে এক লেখক ‘সেক্স অন দ্য মুন’ নামে একটি বইও লেখেন

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।