০১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শামসুর রাহমানের অগ্রন্থিত কবিতা

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • 15

যদি
ইচ্ছে
হয়
যেতে
পারি
আদিম
অরণ্যে,
যেখানে
অন্ধকারে
মূল্যবান
রত্নের
মতো
জ্বলে
পাশব
চোখ,
আর
ভালুকের
কশ
বেয়ে
গড়িয়ে
পড়ে
টাটকা
মধুর
ধারা।

যদি
ইচ্ছে
হয়
যেতে
পারি
ভয়াল
জঙ্গলে,
যেখানে
আগুন
রঙের
বাঘের
মুখে
নরম
হরিণ
ক্লান্ত
হয়ে
আস্তে
আস্তে,
ক্রমাগত
ক্লান্ত
হয়ে
চলে
যায়
সময়ের
সীমার
বাইরে।
অথবা
যেতে
পারি
সেই
ঢেউ-বিক্ষুব্ধ
প্রবাল
দ্বীপে,
যেখানে
দুঃসাহসী
নাবিকের
হাড়
শোনে
স্তব্ধ
আকাশের
নক্ষত্রের
গান।

বালিহাঁসের
ছায়া-মসৃণ
ঢেউ
মেখে
নিতে
পারি
বুকে,
কিংবা
কোনো
সাঁওতালি
পথের
বাঁকে
মহুয়া-মাতাল
অপরাহ্ণে
পাহাড়ি
ঝরনার
কাচ-স্বচ্ছ,
নুড়ি-গড়ানো
জল
তুলে
নিতে
পারি
আঁজলা
ভরে,
যদি
ইচ্ছে
হয়।

আলস্যের
মদে
বুঁদ
হয়ে
অনেকক্ষণ
শুয়ে
থাকতে
পারি
কোনো
শান্ত
উপত্যকায়,
যেখানে
অনেক
পাখি
এসে
নামবে,
যেমন
নদীর
তীরে
স্নানার্থিনী
মেয়েরা
ভিড়
জমায়,
মুখর
হয়
গল্পে।
ওরা
ভয়
পাবে
না
আমাকে
দেখে,
আমার
আশেপাশেই
চলাফেরা
করবে
অনায়াস
ছন্দে,
জীবনের
লাবণ্যে
মসৃণ।

তারপর
যদি
নির্মল
চাঁদ
ওঠে
সেখানে
নির্মেঘ
আকাশে,
আমার
মনে
পড়বে
কোনো
প্রাচীন
কবিতার
কথা,
যা
ঠিক
স্মরণে
নেই,
অথচ
গুঞ্জরিত
হয়ে
ওঠে
রোমাঞ্চিত
ধমনিতে।

কিন্তু
আমি
যাইনে
সেখানে,
থাকি
শহরে,
আমার
শহরে।
ঊর্ধ্বশ্বাস
ট্রাফিকের
ব্যস্ততায়
বিজ্ঞাপনের
মতো
ঝলমলিয়ে
ওঠা
হাসি
শিরায়
আনে
আশ্চর্য
শিহরণ,
মনে
হয়
যেন
ঢক
করে
গিলে
ফেলেছি
এক
ঢোঁক
ঝাঁজালো
মদ।
আর
প্রহরে
প্রহরে
অজস্র
ধাতব
শব্দ
স্মরণ
করিয়ে
দেয়
ভ্রমরের
গুঞ্জন।

আমার
ছোট
খুপরিতে
ভোর
আসে
ব্যালেরিনার
মতো
নিপুণ
বিন্যাসে।
চড়ুইটা
জানালা
থেকে
নেমে
আসে
টেবিলে,
যেখানটায়
চৌকো
রোদ
স্থির,
তারপর
ঠোকরাতে
শুরু
করে
বাসি
রুটির
টুকরো
কিংবা
ফলের
খোসা।
আমি
মৃত
কবিদের
প্রাণবন্ত
অক্ষরে
ডুবে
থাকি,
বেলা
গড়িয়ে
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 গড়িয়ে
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 গড়িয়ে
অবেলায়
এসে
হুমড়ি
খেয়ে
পড়ে।

রাতে
খড়খড়িটা
খুলে
দেখি
বুড়ো
রাজমিস্ত্রির
চোখের
মতো
ছানি-পড়া
আকাশে
জ্যামিতিক
চাঁদ
শোনে
তারার
কথকতা।
সেই
মুহূর্তে
রহমত
ব্যাপারীর
রক্ষিতা
হয়তো
তার
ক্লান্ত
যৌবনটাকে
কুঁচকে-যাওয়া
পোশাকের
মতো
এলিয়ে
দিয়েছে
রাত্রির
আলনায়।

কখনো
দেখি,
রাত্রির
ফুটপাতের
ধারে
এসে
জমে
সারি
সারি
উজ্জ্বল-মসৃণ
মোটর,
যেমন
গাঢ়
সবুজ
ডালে
ভিড়
করে
পাখির
ঝাঁক
সহজ
অভ্যাসে—তৈরি
হয়
আমার
ভালো
লাগা
মুহূর্ত।

স্বপ্ন
দেখি
এই
শহর,
আমার
শহর
অমূল্য
ধাতুর
এক
উজ্জ্বল
আধারে
প্রোথিত:
এমনকি
সবুজ
পাতার
গাছ—সে-ও
অপ্রাপনীয়
ধাতুর
স্পর্শে
রূপান্তরিত।
আমার
সত্তার
নদী
মেলাই
সে
আধারে,
গোলাপের
মতো
পূর্ণতায়

শহর
প্রস্ফুটিত
হয়
হৃদয়ে
আমার।

নিরাশার
নিরুদ্ধ
অন্ধকারে
আশার
উল্কির
মতো
জ্বলে
শহর,
 
 
 
 
আমার
শহর,
 
 
 
 
 
 
 
 প্রদীপ্ত
শহর।।

ট্যাগঃ

শামসুর রাহমানের অগ্রন্থিত কবিতা

আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

যদি
ইচ্ছে
হয়
যেতে
পারি
আদিম
অরণ্যে,
যেখানে
অন্ধকারে
মূল্যবান
রত্নের
মতো
জ্বলে
পাশব
চোখ,
আর
ভালুকের
কশ
বেয়ে
গড়িয়ে
পড়ে
টাটকা
মধুর
ধারা।

যদি
ইচ্ছে
হয়
যেতে
পারি
ভয়াল
জঙ্গলে,
যেখানে
আগুন
রঙের
বাঘের
মুখে
নরম
হরিণ
ক্লান্ত
হয়ে
আস্তে
আস্তে,
ক্রমাগত
ক্লান্ত
হয়ে
চলে
যায়
সময়ের
সীমার
বাইরে।
অথবা
যেতে
পারি
সেই
ঢেউ-বিক্ষুব্ধ
প্রবাল
দ্বীপে,
যেখানে
দুঃসাহসী
নাবিকের
হাড়
শোনে
স্তব্ধ
আকাশের
নক্ষত্রের
গান।

বালিহাঁসের
ছায়া-মসৃণ
ঢেউ
মেখে
নিতে
পারি
বুকে,
কিংবা
কোনো
সাঁওতালি
পথের
বাঁকে
মহুয়া-মাতাল
অপরাহ্ণে
পাহাড়ি
ঝরনার
কাচ-স্বচ্ছ,
নুড়ি-গড়ানো
জল
তুলে
নিতে
পারি
আঁজলা
ভরে,
যদি
ইচ্ছে
হয়।

আলস্যের
মদে
বুঁদ
হয়ে
অনেকক্ষণ
শুয়ে
থাকতে
পারি
কোনো
শান্ত
উপত্যকায়,
যেখানে
অনেক
পাখি
এসে
নামবে,
যেমন
নদীর
তীরে
স্নানার্থিনী
মেয়েরা
ভিড়
জমায়,
মুখর
হয়
গল্পে।
ওরা
ভয়
পাবে
না
আমাকে
দেখে,
আমার
আশেপাশেই
চলাফেরা
করবে
অনায়াস
ছন্দে,
জীবনের
লাবণ্যে
মসৃণ।

তারপর
যদি
নির্মল
চাঁদ
ওঠে
সেখানে
নির্মেঘ
আকাশে,
আমার
মনে
পড়বে
কোনো
প্রাচীন
কবিতার
কথা,
যা
ঠিক
স্মরণে
নেই,
অথচ
গুঞ্জরিত
হয়ে
ওঠে
রোমাঞ্চিত
ধমনিতে।

কিন্তু
আমি
যাইনে
সেখানে,
থাকি
শহরে,
আমার
শহরে।
ঊর্ধ্বশ্বাস
ট্রাফিকের
ব্যস্ততায়
বিজ্ঞাপনের
মতো
ঝলমলিয়ে
ওঠা
হাসি
শিরায়
আনে
আশ্চর্য
শিহরণ,
মনে
হয়
যেন
ঢক
করে
গিলে
ফেলেছি
এক
ঢোঁক
ঝাঁজালো
মদ।
আর
প্রহরে
প্রহরে
অজস্র
ধাতব
শব্দ
স্মরণ
করিয়ে
দেয়
ভ্রমরের
গুঞ্জন।

আমার
ছোট
খুপরিতে
ভোর
আসে
ব্যালেরিনার
মতো
নিপুণ
বিন্যাসে।
চড়ুইটা
জানালা
থেকে
নেমে
আসে
টেবিলে,
যেখানটায়
চৌকো
রোদ
স্থির,
তারপর
ঠোকরাতে
শুরু
করে
বাসি
রুটির
টুকরো
কিংবা
ফলের
খোসা।
আমি
মৃত
কবিদের
প্রাণবন্ত
অক্ষরে
ডুবে
থাকি,
বেলা
গড়িয়ে
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 গড়িয়ে
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 গড়িয়ে
অবেলায়
এসে
হুমড়ি
খেয়ে
পড়ে।

রাতে
খড়খড়িটা
খুলে
দেখি
বুড়ো
রাজমিস্ত্রির
চোখের
মতো
ছানি-পড়া
আকাশে
জ্যামিতিক
চাঁদ
শোনে
তারার
কথকতা।
সেই
মুহূর্তে
রহমত
ব্যাপারীর
রক্ষিতা
হয়তো
তার
ক্লান্ত
যৌবনটাকে
কুঁচকে-যাওয়া
পোশাকের
মতো
এলিয়ে
দিয়েছে
রাত্রির
আলনায়।

কখনো
দেখি,
রাত্রির
ফুটপাতের
ধারে
এসে
জমে
সারি
সারি
উজ্জ্বল-মসৃণ
মোটর,
যেমন
গাঢ়
সবুজ
ডালে
ভিড়
করে
পাখির
ঝাঁক
সহজ
অভ্যাসে—তৈরি
হয়
আমার
ভালো
লাগা
মুহূর্ত।

স্বপ্ন
দেখি
এই
শহর,
আমার
শহর
অমূল্য
ধাতুর
এক
উজ্জ্বল
আধারে
প্রোথিত:
এমনকি
সবুজ
পাতার
গাছ—সে-ও
অপ্রাপনীয়
ধাতুর
স্পর্শে
রূপান্তরিত।
আমার
সত্তার
নদী
মেলাই
সে
আধারে,
গোলাপের
মতো
পূর্ণতায়

শহর
প্রস্ফুটিত
হয়
হৃদয়ে
আমার।

নিরাশার
নিরুদ্ধ
অন্ধকারে
আশার
উল্কির
মতো
জ্বলে
শহর,
 
 
 
 
আমার
শহর,
 
 
 
 
 
 
 
 প্রদীপ্ত
শহর।।