০৬:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হজরত সুমাইয়ার (রা.) দৃঢ় ইমান ও শাহাদাত

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
  • 1

নবিজি (সা.) যখন মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন বনু হাশেম ছাড়া কোরায়শের অন্যান্য শাখা গোত্রের সর্দাররা নবিজি (সা.) ও নতুন ধর্ম ইসলামকে নিজেদের নেতৃত্বের জন্য হুমকি বিবেচনা করতে শুরু করে। তারা মনে করতো, বনু হাশেমের একজন ব্যক্তিকে মানুষ নবি হিসেবে মেনে নিলে তাকেই নেতা মেনে নিতে হবে এবং বনু হাশেমের প্রভাব বেড়ে যাবে, অন্য গোত্রগুলোর প্রভাব কমে যাবে।

ফলে তারা বিভিন্নভাবে ইসলামের প্রচার প্রসারে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। নবিজি (সা.) ও ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে। নবিজিকে (সা.) কবি ও পাগল বলে প্রচার করে, উন্মাদ ও জিনগ্রস্থ বলে অপবাদ দেয়। নবিজি (সা.) ও ইসলামগ্রহণকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করে। পাশাপাশি নবিজিসহ (সা.) ইসলাম গ্রহণকারীরা মুশরিকদের হামলা ও নির্যাতনেরও শিকার হন। বিশেষত মক্কায় সামাজিকভাবে দুর্বল ও প্রভাব প্রতিপত্তিহীন কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চলতো।

এই নির্যাতন শুধু মুসলিম পুরুষদের ওপর চলেনি, মুসলিম নারীরাও ইসলাম গ্রহণের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। যেমন—সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত, ফাতেমা বিনতে খাত্তাব, লাবিবা (বনু মুআম্মিলের দাসী), জুনাইরা রুমিয়্যা, নাহদিয়্যা ও তার মেয়ে, উম্মু ‘উবাইস, হামামা (উম্মে বিলাল) এবং আরও অনেক নারী সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তাদের মধ্যে আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মা সুমাইয়ার (রা.) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যিনি ইসলামের ওপর অটল থেকে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন মুসলমানদের মধ্যে প্রথম শহীদ।

সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.) ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। বলা হয় বলা হয় তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী সপ্তম ব্যক্তি। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, প্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণকারী সাত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু বকর, বিলাল, খাব্বাব, সুহাইব, আম্মার এবং তার মা সুমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।

মক্কায় সুমাইয়ার (রা.) পরিবার ছিল বনু মাখজুমের আশ্রিত। যখন সুমাইয়া (রা.), তার স্বামী ইয়াসির, তাদের ছেলে আম্মার এবং ভাই আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন আবু জাহল ও তার গোত্র বানু মাখজুমের মুশরিকরা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাকের সূত্রে লেখেন, বনু মাখজুম আম্মার ইবনে ইয়াসির ও তার বাবা-মাকে রৌদ্রতপ্ত দুপুরে বের করে আনত এবং মক্কার উত্তপ্ত বালুতে ফেলে রাখতো। একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের করুণ অবস্থা দেখে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো, হে ইয়াসিরের পরিবার! তোমাদের প্রতিশ্রুত ঠিকানা হলো জান্নাত! (সীরাতে ইবনে হিশাম)

হজরত সুমাইয়াকে (রা.) হত্যা করেছিল আবু জাহল। একদিন আবু জাহল যখন তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল, তিনি আবু জাহলকে কঠিন কথা বলেন। আবু জাহল ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা বর্শা তাঁর যৌনাঙ্গে বিদ্ধ করে দেয় এবং তিনি স্বামী ও সন্তানের সামনে শাহাদাতবরণ করেন।

বদর যুদ্ধের দিন আবু জাহল নিহত হলে রাসুল (সা.) আম্মারকে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের হত্যাকারীকে হত্যা করেছেন। (আল-ইসাবাহ ফি তামইযিস-সাহাবাহ)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

হজরত সুমাইয়ার (রা.) দৃঢ় ইমান ও শাহাদাত

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

নবিজি (সা.) যখন মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন বনু হাশেম ছাড়া কোরায়শের অন্যান্য শাখা গোত্রের সর্দাররা নবিজি (সা.) ও নতুন ধর্ম ইসলামকে নিজেদের নেতৃত্বের জন্য হুমকি বিবেচনা করতে শুরু করে। তারা মনে করতো, বনু হাশেমের একজন ব্যক্তিকে মানুষ নবি হিসেবে মেনে নিলে তাকেই নেতা মেনে নিতে হবে এবং বনু হাশেমের প্রভাব বেড়ে যাবে, অন্য গোত্রগুলোর প্রভাব কমে যাবে।

ফলে তারা বিভিন্নভাবে ইসলামের প্রচার প্রসারে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। নবিজি (সা.) ও ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে। নবিজিকে (সা.) কবি ও পাগল বলে প্রচার করে, উন্মাদ ও জিনগ্রস্থ বলে অপবাদ দেয়। নবিজি (সা.) ও ইসলামগ্রহণকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করে। পাশাপাশি নবিজিসহ (সা.) ইসলাম গ্রহণকারীরা মুশরিকদের হামলা ও নির্যাতনেরও শিকার হন। বিশেষত মক্কায় সামাজিকভাবে দুর্বল ও প্রভাব প্রতিপত্তিহীন কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চলতো।

এই নির্যাতন শুধু মুসলিম পুরুষদের ওপর চলেনি, মুসলিম নারীরাও ইসলাম গ্রহণের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। যেমন—সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত, ফাতেমা বিনতে খাত্তাব, লাবিবা (বনু মুআম্মিলের দাসী), জুনাইরা রুমিয়্যা, নাহদিয়্যা ও তার মেয়ে, উম্মু ‘উবাইস, হামামা (উম্মে বিলাল) এবং আরও অনেক নারী সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তাদের মধ্যে আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মা সুমাইয়ার (রা.) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যিনি ইসলামের ওপর অটল থেকে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি ছিলেন মুসলমানদের মধ্যে প্রথম শহীদ।

সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.) ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। বলা হয় বলা হয় তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী সপ্তম ব্যক্তি। মুজাহিদ (রহ.) বলেন, প্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণকারী সাত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আবু বকর, বিলাল, খাব্বাব, সুহাইব, আম্মার এবং তার মা সুমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)।

মক্কায় সুমাইয়ার (রা.) পরিবার ছিল বনু মাখজুমের আশ্রিত। যখন সুমাইয়া (রা.), তার স্বামী ইয়াসির, তাদের ছেলে আম্মার এবং ভাই আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন আবু জাহল ও তার গোত্র বানু মাখজুমের মুশরিকরা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাকের সূত্রে লেখেন, বনু মাখজুম আম্মার ইবনে ইয়াসির ও তার বাবা-মাকে রৌদ্রতপ্ত দুপুরে বের করে আনত এবং মক্কার উত্তপ্ত বালুতে ফেলে রাখতো। একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের করুণ অবস্থা দেখে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো, হে ইয়াসিরের পরিবার! তোমাদের প্রতিশ্রুত ঠিকানা হলো জান্নাত! (সীরাতে ইবনে হিশাম)

হজরত সুমাইয়াকে (রা.) হত্যা করেছিল আবু জাহল। একদিন আবু জাহল যখন তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছিল, তিনি আবু জাহলকে কঠিন কথা বলেন। আবু জাহল ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা বর্শা তাঁর যৌনাঙ্গে বিদ্ধ করে দেয় এবং তিনি স্বামী ও সন্তানের সামনে শাহাদাতবরণ করেন।

বদর যুদ্ধের দিন আবু জাহল নিহত হলে রাসুল (সা.) আম্মারকে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের হত্যাকারীকে হত্যা করেছেন। (আল-ইসাবাহ ফি তামইযিস-সাহাবাহ)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।