কবিতা কেন লেখেন—প্রশ্নটি করার আগে বলুন, কবিতা কেন পড়েন? যদি বলেন, কবিতা পড়ি না কখনো। তাহলে চরম মিথ্যার প্রলোভনে নিজেও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কবিতা পড়া ও লেখা সবটাই আত্মিক। এসব উপলব্ধির টিউনিং। সাত আসমান যে শূন্যে লটকিয়ে রেখেছেন (কেউ) সেটি আর কিছু নয়—শুধু কবিতায়। নদী বয়ে যাচ্ছে, সমুদ্র ঢেউ বুকে নিয়ে গর্জে উঠছে—সব কবিতার ইশারা।
এ উপলব্ধি হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা। আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণ বুঝিয়ে ওঠা বা কাউকে বুঝিয়ে দেওয়া সহজ নয়, তাই অনেকে পাণ্ডিত্যের শেষ গল্পে লেখেন—কবিতার কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কবিতা হচ্ছে মারফতের খেলা। অর্থাৎ মায়ের পথ দিয়ে এসেছেন অথচ দেখেননি তবে বিশ্বাস ভক্তি শ্রদ্ধায় সর্বোপরি আধ্যাত্মিক সরলতার সূত্রে মায়ের টান উপলব্ধি করেন। আধ্যাত্মিকতাকে অস্বীকার করে কবিতা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বা পাণ্ডিত্য দেখানো চরম বোকামি। কেউ যদি সত্যিকারের বোকা হয়ে থাকেন, তাকে বোঝানোর কিছু নেই—কবিতা তো নিজেকেই যাচাই করা।
তাই দুনিয়ার অনেকে পাগল বলবেন, এটাই সত্যিকারের স্বীকৃতি একজন কবির কাছে। হয়তো কারো কবিতা আমার ভালো লাগছে, সেটি আরেকজনের ভালো লাগছে না। এই ভালো লাগাটা চাপিয়ে দেওয়া যায় না। তবে যেটুক বুঝি, কবিতা নিয়ে খেলতে পারাটার মধ্যে কবির বাহাদুরি কিংবা দক্ষতা বলতে পারেন। আবার অনেক কবি আছেন, নিজের ভাবটা বলে দেওয়ার মধ্যে কবিতা বলে দেন।
এমন একজন কবি শাহনাজ পারভীন মিতা। সহজ-সরলে সহজাত উপলব্ধির কবিতায় অন্তরাত্মার বুঝ দেওয়ার কবিতা লেখেন। আঙ্গিক, স্বর কিংবা নিজের কবিতা নিয়ে ভাঙা-গড়ার দিকে যান না। নিজের বলাটুকু বলে দিতে পারলেই হয়তো কবি তৃপ্ত হন। আদতে কবিতা যখন কবিকে পেয়ে বসে, যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়; সেটি বেশ বেগতিক। ইলহাম কিংবা জ্ঞান বলেন গায়েবি শক্তির বদৌলতে, সেটি নিয়ে ধৈর্য সহ্যে নিজস্ব ধারায় খেলতে পারাই অনন্য দক্ষতা।
শাহনাজ পারভীন মিতা নিজের ভেতরকার আর্তি ঝরিয়ে দেন সাবলীল চমকেই। নির্ভেজাল আকুতিভরা বোধবিজ্ঞান শাহনাজ পারভীন মিতার কবিতা। শব্দ নিয়ে বাড়াবাড়িও নেই আবার কল্পনারও অত দ্বারস্থ হন না। স্পন্দিত ছন্দে রিদমিক দোলন শাহনাজ পারভীন মিতার কবিতা। কবির রক্তে বহমান প্রাকৃতিক ছন্দ—
কবিতা তুমি কি লিখনির রীতি
কেবলই শব্দ ছন্দের গীতি!
বর্ণে দ্বন্দ্বে মনের তেপান্তরে
কাব্যের ঢেউ হৃদয় বীণার ঝংকারে।
কবিতা তুমি মনের গভীর অনুভূতি
পাখির গানে সুরের বর্ণীল প্রজাপতি,
কখনও উত্তাল ঢেউ গভীর সমুদ্রজল
মনের মাঝে খুঁজে ফেরা নিস্তব্ধ অতল।
(শব্দ ছন্দের কাব্য; পৃ-২০)
খ.
কখনও কি প্রেমে পড়েছো নিজের
নিজের মাঝে খুঁজেছো কি পদ্মার ঢেউ!
বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলের গভীরে
যেখানে চুপি চুপি তোমায় ডাকছে কেউ।
(আত্মপ্রেমে নিমগ্ন তুমি; পৃ-২৪)
গ.
তুমি জানতে জলে বড় ভয়
বড় ভয় আমার সবসময়,
তাই তো কত ইচ্ছা মনের ভিতর
সাঁতরে পার হওয়া হলো না বলেশ্বর।
(ডোবা ভাসা গাঙচিল সুখ; পৃ-৩৯)
০২.
শাহনাজ পারভীন মিতা কবিতায় ভাষার সৌন্দর্য চেতনা উদ্দীপিত করে; সবকিছু প্রেম দিয়ে জয় করার মনোবাসনা। এমনকি ইঙ্গিতেও প্রেমের কথায় সুরারোপিত; চিত্রিত ভাবকল্পে অত বাঁক পেরিয়ে গিয়ে কবিতা লেখেন না। উপমার সারল্যে কবিতাকে গড়ে তোলেন বিশিষ্ট রূপরেখায়। শাহনাজ পারভীন মিতার কবিতার বই ‘প্রাপ্তির সন্ধানে অনন্তে’ পাঠ পরবর্তী উপরোক্ত কথাসব লেখা—
শীতে বিরহে কাতর বিষণ্ণ হলুদ বসন্ত
উষ্ণতার সন্ধানে দীর্ঘ রাত্রির একাকিত্ব,
কত রাত জাগা চাঁদ নিভৃতে শুধু কাঁদে
তুমি বাড়াও হাত, জোছনা সুর সাধে।
(নিঃসঙ্গ পাইনের সারি; পৃ-৬৪)
খ.
প্রেম তুমি এসো ওই গোধূলি বিকেলে
সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় নীলিমার নীলে
বিষণ্ণ সন্ধ্যার স্বর্ণালী সাঁঝের মায়ায়
তুমি এসো একাকী গহন গোপন কায়ায়।
(প্রেম তুমি এসো; পৃ-৫৪)
গ.
শুষে নাও প্রিয় চুম্বনে চুম্বনে
একটা রাতজাগা ভোর আর নয়,
শুষে নাও এই জমা দীর্ঘশ্বাস
বেশি কিছু চাওয়া নয়,….
(বেশি চাওয়ার থাকে না ভালোবাসায়; পৃ-৪৭)
শাহনাজ পারভীন মিতার কবিতায় নিবিড়ে টেনে নেওয়ার আকুতি থাকে। অন্ত্যমিলের সহজাত টিউন পাঠক হৃদয়কে বিমোহিত করে। কবিতায় আপন করে নেওয়ার এই সাধনা শাহনাজ পারভীন মিতাকে পরমানন্দের দিকে নিয়ে যাবে সুনিশ্চিত।
বই: প্রাপ্তির সন্ধানে অনন্তে
কবি: শাহনাজ পারভীন মিতা
প্রকাশনী: এবং মানুষ প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: আল নোমান
মূল্য: ২০০ টাকা।
এসইউ/জিকেএস
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।