০২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • 11

আর মাত্র দুই বছর পর শতবর্ষ পূর্ণ করবে দিনাজপুর শহরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রতন কুমার রায়। এসে দেখেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপস্থিতি কোনোটিই সন্তোষজনক নয়। এরপর শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন, সবার সহযোগিতা চান, সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে শুরু করেন পরিবর্তনের উদ্যোগ।

প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেন কোনো শিক্ষার্থী যেন অর্থের অভাবে ঝরে না পড়ে। শিক্ষকদের সহযোগিতা ও নিজের প্রচেষ্টায় তিনি তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা সহস্রাধিক।

এক এক করে গড়ে তোলেন বিতর্ক দল, ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, দাবা, সাংস্কৃতিক দল, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ‘দুই টাকার ব্যাংক’।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

এখন স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠানে সারদেশ্বরীর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে স্বরচিত কবিতা, আবৃত্তি ও রচনা উপস্থাপনায় তারা দারুণ সাড়া ফেলেছে। জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সঙ্গীতও পরিবেশিত হয়।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ

সবকিছু যখন সঠিক পথে চলছিল, তখন সামনে আসে বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের মতো সামাজিক সমস্যা। তা ঠেকাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করেন ২৫ সদস্যের প্রতিরোধ কমিটি। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরি করেন তিনি। ফলাফল বাল্যবিয়ে ও ঝরে পড়া নেমে আসে প্রায় শূন্যে।

আরও পড়ুন
বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ 
শিক্ষক আমার পথচলার অনুপ্রেরণা 
একই মামলার দুই আসামি: এক শিক্ষক পেলেন পদ, অন্যজনের ছুটি স্থগিত 

সৌন্দর্যবর্ধন ও দেশপ্রেম জাগরণ

রতন কুমার রায়ের মতে, বিদ্যালয় মনোমতো না হলে পাঠেও মন বসবে না। তাই তিনি সাজিয়ে তোলেন বিদ্যালয় চত্বর একই বেদিতে তৈরি করেন স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, বাংলাদেশের মানচিত্র ও বিদ্যালয়ের লোগো। গড়ে তোলেন শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ। সব ধারণাই এসেছে তাঁর নিজের মাথা থেকে।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে আমাদের স্কুল শুধু শিক্ষার্থী সংখ্যায় নয়, খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। তিনি টিমওয়ার্কে বিশ্বাস করেন এবং আমাদের সঙ্গে নতুন নতুন ধারণা শেয়ার করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত।

মিনি স্টেডিয়াম চত্বর

প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে মিনি ক্রীড়া স্টেডিয়াম চত্বর। জায়গা স্বল্পতার কারণে এক মাঠেই ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল ও দাবার গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। মাঠের লাল, নীল, সবুজ ও সাদা দাগ দেখে খেলোয়াড়রা বুঝতে পারে কোন দাগ কোন খেলার জন্য।

দুই টাকার ব্যাংক

শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ‘দুই টাকার ব্যাংক’। শিক্ষার্থীরা গর্বের সঙ্গে নিজেদের পরিচয় দেয়- আমি দুই টাকার ব্যাংকের গভর্নর, আমি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, আমি ক্যাশিয়ার।

প্রতি মাসে তারা জমা করে অন্তত দুই টাকা। বছরে একজন শিক্ষার্থী ন্যূনতম ২৬ টাকা সঞ্চয় করে, যার মধ্যে ২ টাকা ব্যাংক চার্জ কেটে বাকি টাকা সে চাইলে তুলে নিতে পারে। এই অর্থ থেকে তৈরি হয় কল্যাণ ফান্ড, যা দিয়ে অভাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় ক্যালকুলেটর, বই, খাতা, ব্যাগ, জুতা, মোজা, স্কেলসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

করোনাকালে এই ব্যাংকের তহবিল থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনা রয়েছে দেশের সব বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে।

এক বেদিতেই জাতীয় প্রতীক

জায়গা স্বল্পতার কারণে ও শিক্ষার্থীদের জাতীয় প্রতীক সম্পর্কে ধারণা দিতে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক বেদিতে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, বাংলাদেশের মানচিত্র ও বিদ্যালয়ের লোগো যা ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ

বিদ্যালয়ে রয়েছে শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ। শাপলা কর্নারে সারা বছরই লাল শাপলা ফোটে; ভবিষ্যতে শামুক-ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পরিকল্পনাও আছে। কবিতা কর্নারে শিক্ষার্থীরা নিজেদের লেখা কবিতা টাঙিয়ে রাখে। মুক্তমঞ্চে বছরজুড়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ

উচ্চমাধ্যমিকে উঠে শিক্ষার্থীরা যেন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যে দেওয়া হয় হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ। সহকারী শিক্ষক শাহানাজ পারভীন এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ‘দুই টাকার ব্যাংক’ থেকে শিক্ষার্থীদের উপকরণ কেনার সহায়তা দেওয়া হয়। তারা তৈরি পণ্য জমা দিলে সেই ব্যাংকের টাকা থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি পণ্য বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে, যার চাহিদাও বেড়েছে বলে জানান শাহানাজ পারভীন।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

এতসব সাফল্যের পরও রতন কুমার রায় চিন্তিত বাল্যবিয়ে এখনো পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রথম যখন এই উদ্যোগ শুরু করি, অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। কারণ আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবসময় পাশে থেকেছেন। এখনো খবর পেলে আমরা শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাই, অভিভাবকদের বোঝাই। কেউ কেউ শোনেন, কেউ গোপনে বিয়ে দিয়ে দেন। এমনও ঘটেছে আমাদের উপস্থিতিতে প্যান্ডেল খুলে বিয়ে বন্ধ করেছে পরিবার, পরে গোপনে আবার বিয়ে দিয়েছে।

রতন কুমার রায় বলেন, জীবনে কী পেলাম বা পেলাম না, তা বড় কথা নয়। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ দেখলেই ভালো লাগে। সবচেয়ে আনন্দ হয় যখন কোনো অভিভাবক বলেন, ‘স্যার, আপনার জন্য আমার মেয়েটা আজ কলেজে পড়ছে।’ এজন্য আমি কৃতজ্ঞ আমার সহকর্মী শিক্ষকদের প্রতি তারাই আমাকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

আর মাত্র দুই বছর পর শতবর্ষ পূর্ণ করবে দিনাজপুর শহরের সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন রতন কুমার রায়। এসে দেখেন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপস্থিতি কোনোটিই সন্তোষজনক নয়। এরপর শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন, সবার সহযোগিতা চান, সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে শুরু করেন পরিবর্তনের উদ্যোগ।

প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেন কোনো শিক্ষার্থী যেন অর্থের অভাবে ঝরে না পড়ে। শিক্ষকদের সহযোগিতা ও নিজের প্রচেষ্টায় তিনি তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা সহস্রাধিক।

এক এক করে গড়ে তোলেন বিতর্ক দল, ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, দাবা, সাংস্কৃতিক দল, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ‘দুই টাকার ব্যাংক’।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

এখন স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠানে সারদেশ্বরীর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে স্বরচিত কবিতা, আবৃত্তি ও রচনা উপস্থাপনায় তারা দারুণ সাড়া ফেলেছে। জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সঙ্গীতও পরিবেশিত হয়।

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ

সবকিছু যখন সঠিক পথে চলছিল, তখন সামনে আসে বাল্যবিয়ে, যৌন নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের মতো সামাজিক সমস্যা। তা ঠেকাতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করেন ২৫ সদস্যের প্রতিরোধ কমিটি। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা তৈরি করেন তিনি। ফলাফল বাল্যবিয়ে ও ঝরে পড়া নেমে আসে প্রায় শূন্যে।

আরও পড়ুন
বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ 
শিক্ষক আমার পথচলার অনুপ্রেরণা 
একই মামলার দুই আসামি: এক শিক্ষক পেলেন পদ, অন্যজনের ছুটি স্থগিত 

সৌন্দর্যবর্ধন ও দেশপ্রেম জাগরণ

রতন কুমার রায়ের মতে, বিদ্যালয় মনোমতো না হলে পাঠেও মন বসবে না। তাই তিনি সাজিয়ে তোলেন বিদ্যালয় চত্বর একই বেদিতে তৈরি করেন স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, বাংলাদেশের মানচিত্র ও বিদ্যালয়ের লোগো। গড়ে তোলেন শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ। সব ধারণাই এসেছে তাঁর নিজের মাথা থেকে।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে আমাদের স্কুল শুধু শিক্ষার্থী সংখ্যায় নয়, খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। তিনি টিমওয়ার্কে বিশ্বাস করেন এবং আমাদের সঙ্গে নতুন নতুন ধারণা শেয়ার করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত।

মিনি স্টেডিয়াম চত্বর

প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে মিনি ক্রীড়া স্টেডিয়াম চত্বর। জায়গা স্বল্পতার কারণে এক মাঠেই ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল ও দাবার গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। মাঠের লাল, নীল, সবুজ ও সাদা দাগ দেখে খেলোয়াড়রা বুঝতে পারে কোন দাগ কোন খেলার জন্য।

দুই টাকার ব্যাংক

শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে চালু হয়েছে ‘দুই টাকার ব্যাংক’। শিক্ষার্থীরা গর্বের সঙ্গে নিজেদের পরিচয় দেয়- আমি দুই টাকার ব্যাংকের গভর্নর, আমি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, আমি ক্যাশিয়ার।

প্রতি মাসে তারা জমা করে অন্তত দুই টাকা। বছরে একজন শিক্ষার্থী ন্যূনতম ২৬ টাকা সঞ্চয় করে, যার মধ্যে ২ টাকা ব্যাংক চার্জ কেটে বাকি টাকা সে চাইলে তুলে নিতে পারে। এই অর্থ থেকে তৈরি হয় কল্যাণ ফান্ড, যা দিয়ে অভাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় ক্যালকুলেটর, বই, খাতা, ব্যাগ, জুতা, মোজা, স্কেলসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

করোনাকালে এই ব্যাংকের তহবিল থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনা রয়েছে দেশের সব বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে।

এক বেদিতেই জাতীয় প্রতীক

জায়গা স্বল্পতার কারণে ও শিক্ষার্থীদের জাতীয় প্রতীক সম্পর্কে ধারণা দিতে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক বেদিতে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, বাংলাদেশের মানচিত্র ও বিদ্যালয়ের লোগো যা ইতোমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।

শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ

বিদ্যালয়ে রয়েছে শাপলা কর্নার, কবিতা কর্নার ও মুক্তমঞ্চ। শাপলা কর্নারে সারা বছরই লাল শাপলা ফোটে; ভবিষ্যতে শামুক-ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পরিকল্পনাও আছে। কবিতা কর্নারে শিক্ষার্থীরা নিজেদের লেখা কবিতা টাঙিয়ে রাখে। মুক্তমঞ্চে বছরজুড়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ

উচ্চমাধ্যমিকে উঠে শিক্ষার্থীরা যেন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে, সেই লক্ষ্যে দেওয়া হয় হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ। সহকারী শিক্ষক শাহানাজ পারভীন এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ‘দুই টাকার ব্যাংক’ থেকে শিক্ষার্থীদের উপকরণ কেনার সহায়তা দেওয়া হয়। তারা তৈরি পণ্য জমা দিলে সেই ব্যাংকের টাকা থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি পণ্য বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে, যার চাহিদাও বেড়েছে বলে জানান শাহানাজ পারভীন।

বিদ্যালয় ও ছাত্রীদের জীবন একসঙ্গে গড়ে চলেছেন শিক্ষক রতন কুমার

এতসব সাফল্যের পরও রতন কুমার রায় চিন্তিত বাল্যবিয়ে এখনো পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রথম যখন এই উদ্যোগ শুরু করি, অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। কারণ আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবসময় পাশে থেকেছেন। এখনো খবর পেলে আমরা শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাই, অভিভাবকদের বোঝাই। কেউ কেউ শোনেন, কেউ গোপনে বিয়ে দিয়ে দেন। এমনও ঘটেছে আমাদের উপস্থিতিতে প্যান্ডেল খুলে বিয়ে বন্ধ করেছে পরিবার, পরে গোপনে আবার বিয়ে দিয়েছে।

রতন কুমার রায় বলেন, জীবনে কী পেলাম বা পেলাম না, তা বড় কথা নয়। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ দেখলেই ভালো লাগে। সবচেয়ে আনন্দ হয় যখন কোনো অভিভাবক বলেন, ‘স্যার, আপনার জন্য আমার মেয়েটা আজ কলেজে পড়ছে।’ এজন্য আমি কৃতজ্ঞ আমার সহকর্মী শিক্ষকদের প্রতি তারাই আমাকে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।