ইসমাইল হোসাইন রাসেল, নিউইয়র্ক থেকে
শেষ হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন। বড় বহর নিয়ে এবারের অধিবেশনে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরসঙ্গীদের মধ্যে উপদেষ্টাদের পাশাপাশি ছিলেন তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয়জন নেতা। এর মধ্যে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তবে নিউইয়র্ক সফরে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে এই তরুণ রাজনীতিবিদের। বিমানবন্দরে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন আখতার হোসেন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ইতিবাচক বলছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেই জাগো নিউজের কাছে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এনসিপির এই নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসমাইল হোসাইন রাসেল।
জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্র সফরের শুরুতেই বিমানবন্দরে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। সে বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।
আখতার হোসেন: আমরা নিউইয়র্কে আসার পরেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের এই হামলার পরও আমরা নিউইয়র্ক শহরে চলেছি, ফিরেছি। এনসিপি, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সফরে আসেন, তাদের নেতাকর্মীদের (নিউইয়র্কের) সঙ্গে সাক্ষাতের একটি পরিবেশ তৈরি হয়। এখানেও বিভিন্ন মিটিং হয়েছে, সেগুলোতে আমরা গিয়েছি। সরকারের অবস্থানগুলো আমরা জানার চেষ্টা করেছি। সেখানে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা হয়েছে।
আরও পড়ুন
নিউইয়র্কে আখতারকে ডিম নিক্ষেপ করলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় ডাকসুর নিন্দা
বিমানবন্দরে আখতার-জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের
জাগো নিউজ: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আপনিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে যে দৃঢ় রাজনীতির সহাবস্থান রয়েছে সেটির নজির স্থাপন করতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
আখতার হোসেন: বাংলাদেশে এর আগের কোনো সরকার বিরোধী কাউকে সঙ্গে করে জাতিসংঘে এসেছেন- এমন নজির আমরা দেখি না। সেই জায়গায় অন্তর্বর্তী সরকার যে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের সরকার, এটা যে শুধু বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলের সরকার না; এটা যে সব দলের সম্মতির মধ্যদিয়ে গঠিত সরকার যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করে, সেটা বোঝাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের প্রতিনিধি হিসেবে তিনটি দলকে সফরে মনোনীত করেছে। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য একটা উপকারী দিক তৈরি করেছে। আমাদের মধ্যে মতের অমিল থাকতে পারে, আমাদের আলাদা রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে যে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আমরা সবাই এক, আমরা যে আমাদের মধ্যকার রাজনৈতিক আলোচনাগুলোর বাইরে গিয়েও বাংলাদেশ প্রশ্নে এক হতে পারি এবং সেখানে সবাইকে ধারণ করার মতো মানসিকতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্ত করেছেন, সেটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি।

জাগো নিউজ: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন পরিস্থিতি, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে উত্তরণ এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের যে অবদান, দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক মিটিংগুলোতে বলেছেন। আপনি একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
আখতার হোসেন: প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশে যেন কখনো কোনো স্বৈরশাসন ফিরে না আসে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে বাংলাদেশের মানুষের ওপর জুলুম চাপিয়ে দিতে না পারে- এমন একটা শাসন ব্যবস্থার কথা বলেছেন। মূলত সংস্কারের যে বিষয়গুলোর মধ্যদিয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে অগ্রসর হতে চাই তার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন, যেটা অবশ্যই ইতিবাচক। একই সঙ্গে বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই নির্বাচনের বিষয়ে তিনি তার দৃঢ় বক্তব্য পেশ করেছেন। আমরা মনে করি রাষ্ট্রপ্রধান (সরকারপ্রধান) হিসেবে তার এই বক্তব্য অবশ্যই যুক্তিসংগত।
এই এনসিপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধিকাংশই এখন তরুণ, সেই তরুণরাই ২৪ এর অভ্যুত্থানকে সফল করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের গল্প প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই তরুণরা যেন কর্মদক্ষ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে অগ্রসর করতে পারেন সেই বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসন নিয়ে যে ধরনের রেস্ট্রিকশনের বিষয়গুলো থাকে সে জায়গাটিতে তিনি ওপেন হওয়ার কথা বলেছেন। জনশক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হলে তাদের যে দেশ গ্রহণ করবে তারাও উপকৃত হবে। সেই বার্তাটি তিনি এখানে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। আমরা মনে করি তরুণদের, বাংলাদেশের জনশক্তিকে তিনি দেশের মধ্যে এবং দেশের বাইরেও এক্সপ্লোর করার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন সেটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক।
আরও পড়ুন
এবার আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদের দেশের বাড়িতে ডিম নিক্ষেপ
জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী আসলে কতজন?
জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার শতাধিক সফরসঙ্গী, হতাশা প্রকাশ টিআইবির
জাগো নিউজ: এবারের সফরে কী ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন হলো?
আখতার হোসেন: জাতিসংঘের সফরে রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করা নতুন একটি বিষয়। এটিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পক্ষগুলো বাংলাদেশ প্রশ্নে যে এক সেটির একটি বিশ্ব মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছে এই সফরের মধ্যদিয়ে। এবারের সফরের অনেকগুলো বিষয় প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশের রোহিঙ্গারা যে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন সে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ থেকে যে টাকাগুলো পাচার হয়েছে সেগুলো ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের ২৪’র অভ্যুত্থানের কথা তিনি বলেছেন। তরুণদের কথা বলেছেন। সবমিলিয়ে গোটা বাংলাদেশকে তিনি তার বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সেটা খুব অসাধারণ ছিল।
জাগো নিউজ: এনসিপি নিবন্ধন পাচ্ছে, এই নিবন্ধনের জার্নিটা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
আখতার হোসেন: রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করায় নিবন্ধন পাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বিদেশে বসে আমি খবরটি পেয়েছি। অবশ্যই অত্যন্ত আনন্দের খবর। দলের সব পর্যায়ের নেতাদের প্রচেষ্টার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। নতুন একটি দল গঠন করে নিবন্ধনপ্রাপ্তির যাত্রাটা কঠিন হলেও সেটি সম্ভব হয়েছে।

জাগো নিউজ: আপনারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আপনাদের প্রতীক হিসেবে শাপলাকে প্রচার করছেন, কিন্তু সেই প্রতীক প্রাপ্তিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেই জটিলতা কীভাবে নিরসন হবে?
আখতার হোসেন: আমরা শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় শাপলা প্রতীক চেয়েছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটি নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের অবস্থানে অটল। এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাই চাই আমরা।
জাগো নিউজ: ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন। বড় দলগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটভিত্তিক ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন প্রস্তুতি আপনারাও নিচ্ছেন কি না এবং আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী?
আখতার হোসেন: আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে ভোটের আয়োজন করার কথা। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে কথা বলেছেন, সেটি ইতিবাচকভাবে দেখি। আর জোটভিত্তিক নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনের একটি সংস্কৃতি। নির্বাচনের আরও কিছু সময় বাকি আছে। সুতরাং জোট আর আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়া বিষয়গুলো দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আইএইচআর/ইএ/এমএস
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।
এডমিন 












