০৮:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাইক আর ফলোয়ার নির্ভর সুখের বিপরীত চিত্র

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
  • 14

বর্তমান সময়ের জীবন যেন ক্রমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভারে বেঁকে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত চলছে লাইক, রিয়্যাকশন ও ফলোয়ারের দৌড়। কে কতটা জনপ্রিয়, কার পোস্টে বেশি রিয়্যাক্ট এসব হিসাব এখন অনেকের কাছে সুখ, আত্মতৃপ্তি আর আত্মসম্মানের নতুন মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে।

একটি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার পর প্রত্যাশিত লাইক না পেলে মনের ভেতর তৈরি হয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা। দেখা দেয় অস্বস্তি আর আত্মসম্মানবোধে টানাপোড়ন। অন্যের জীবনের ফিল্টার করা আনন্দের ঝলক দেখে নিজের বাস্তব জীবনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে তৈরি হয় হীনমন্যতা। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে এনেছে অফুরন্ত সুবিধা, যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কিন্তু একই সঙ্গে এই সংযোগ অনেক সময় বাস্তবে তৈরি করছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। অনলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাকটিভ থাকা এখন অনেকের কাছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, মন খুলে কথা বলার মতো বিষয়গুলো ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন কিংবা নিজের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে নোটিফিকেশন আর নিউজফিড।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোনের অস্বাভাবিক ওঠানামা ঘটে, যা এক ধরনের ডিজিটাল আসক্তি তৈরি করে। এর প্রভাবে মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, উদ্বেগ, হতাশা বা বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ পোস্টে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ লাইক বাড়াতে গিয়ে কৃত্রিমভাবে ‘পারফেক্ট’ জীবন দেখানোর চেষ্টা করছেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। এতে নিজের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, যা ধীরে ধীরে মানসিক চাপ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়।

আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংখ্যায় নয়, বরং নিজের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোয়।

নিজেকে মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া, বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও সময়কে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের পছন্দের অফলাইন কাজে মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি। এগুলো মানসিক ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়ে। এসব ছোট ছোট অভ্যাস আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং নিজের অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করতে পারে।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সেটিকে বাদ দেওয়ার বদলে সচেতনভাবে ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মেডিটেশন অ্যাপ, অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপ, ইতিবাচক কনটেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনার টুলস এসবই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রযুক্তিকে শত্রু না বানিয়ে সহচর হিসেবে গ্রহণ করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

লাইক ও ফলোয়ারে সুখের হিসাব না কষে, নিজের ভেতরের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে গেলে প্রথমেই দরকার নিজের প্রতি প্রতিশ্রুতি ‘আমার সুখ আমার হাতে, সংখ্যার হাতে নয়।’ কৃত্রিম জনপ্রিয়তার ফাঁদে না পড়ে, বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও আত্মমূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া হোক আমাদের নতুন মানসিক সুস্থতার পথ।

আরও পড়ুন
অন্য কেউ আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে না তো?
ওয়েবসাইটে ঢুকলেই কুকিজ আসে, অনুমতি দিয়ে বিপদে পড়তে পারেন

সূত্র: কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল, পিএমসি, ম্যাকলিন হসপিটাল, ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটি

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

লাইক আর ফলোয়ার নির্ভর সুখের বিপরীত চিত্র

আপডেট সময়ঃ ০৬:০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

বর্তমান সময়ের জীবন যেন ক্রমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভারে বেঁকে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত চলছে লাইক, রিয়্যাকশন ও ফলোয়ারের দৌড়। কে কতটা জনপ্রিয়, কার পোস্টে বেশি রিয়্যাক্ট এসব হিসাব এখন অনেকের কাছে সুখ, আত্মতৃপ্তি আর আত্মসম্মানের নতুন মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে।

একটি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার পর প্রত্যাশিত লাইক না পেলে মনের ভেতর তৈরি হয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা। দেখা দেয় অস্বস্তি আর আত্মসম্মানবোধে টানাপোড়ন। অন্যের জীবনের ফিল্টার করা আনন্দের ঝলক দেখে নিজের বাস্তব জীবনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে তৈরি হয় হীনমন্যতা। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে এনেছে অফুরন্ত সুবিধা, যোগাযোগের পথ খুলে দিয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কিন্তু একই সঙ্গে এই সংযোগ অনেক সময় বাস্তবে তৈরি করছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। অনলাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যাকটিভ থাকা এখন অনেকের কাছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো, মন খুলে কথা বলার মতো বিষয়গুলো ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন কিংবা নিজের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জায়গা দখল করে নিচ্ছে নোটিফিকেশন আর নিউজফিড।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোনের অস্বাভাবিক ওঠানামা ঘটে, যা এক ধরনের ডিজিটাল আসক্তি তৈরি করে। এর প্রভাবে মনোযোগ কমে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, উদ্বেগ, হতাশা বা বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ পোস্টে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ লাইক বাড়াতে গিয়ে কৃত্রিমভাবে ‘পারফেক্ট’ জীবন দেখানোর চেষ্টা করছেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। এতে নিজের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, যা ধীরে ধীরে মানসিক চাপ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়।

আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মানসিক সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সংখ্যায় নয়, বরং নিজের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোয়।

নিজেকে মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া, বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও সময়কে প্রাধান্য দেওয়া, নিজের পছন্দের অফলাইন কাজে মনোযোগী হওয়া ইত্যাদি। এগুলো মানসিক ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি হয়ে পড়ে। এসব ছোট ছোট অভ্যাস আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং নিজের অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করতে পারে।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সেটিকে বাদ দেওয়ার বদলে সচেতনভাবে ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। মেডিটেশন অ্যাপ, অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপ, ইতিবাচক কনটেন্ট বা সময় ব্যবস্থাপনার টুলস এসবই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রযুক্তিকে শত্রু না বানিয়ে সহচর হিসেবে গ্রহণ করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

লাইক ও ফলোয়ারে সুখের হিসাব না কষে, নিজের ভেতরের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষা করতে গেলে প্রথমেই দরকার নিজের প্রতি প্রতিশ্রুতি ‘আমার সুখ আমার হাতে, সংখ্যার হাতে নয়।’ কৃত্রিম জনপ্রিয়তার ফাঁদে না পড়ে, বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও আত্মমূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া হোক আমাদের নতুন মানসিক সুস্থতার পথ।

আরও পড়ুন
অন্য কেউ আপনার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছে না তো?
ওয়েবসাইটে ঢুকলেই কুকিজ আসে, অনুমতি দিয়ে বিপদে পড়তে পারেন

সূত্র: কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল, পিএমসি, ম্যাকলিন হসপিটাল, ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটি

কেএসকে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।