১০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ইত্যাদির’র মানুষ: বিনোদনের ছলে নৈতিকতার পাঠ দেন যিনি

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • 8

বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসে কিছু নাম সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যায়—তাদের উপস্থিতি শুধু পর্দায় নয়, মানুষের অন্তরে থেকে যায়। সেই নামগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই আছেন হানিফ সংকেত। আজ (২৩ অক্টোবর) এই প্রজ্ঞাবান উপস্থাপক, নাট্যকার, নির্মাতার জন্মদিন। চার দশক ধরে তিনি শুধু একটিমাত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন—বিনোদন মানেই হাসি নয়, বরং এক গভীর দায়িত্ববোধ।‘ইত্যাদি’ নামটি আজ একটি প্রজন্ম নয়, একাধিক প্রজন্মের আবেগের ঠিকানা।

সন্তান হানিফ সংকেতের বেড়ে ওঠা ছিল সাধারণ পরিবারের ঘেরাটোপে, কিন্তু তার ভাবনা কখনো সাধারণ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি, অভিনয় আর মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসাই তাকে নিয়ে আসে নাট্যজগতে, এরপর টেলিভিশনের বিশাল পরিসরে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন টেলিভিশনে বিনোদনের মানে ছিল কেবল গান-নাচ বা নাটক, তখন তিনি নিয়ে এলেন অন্যরকম কিছু—‘ইত্যাদি’, যেখানে হাসির আড়ালে ছিল সমাজের প্রতিচ্ছবি, কৌতুকের ভেতরে ছিল শিক্ষা, আর প্রতিটি পর্বেই ছিল দেশপ্রেমের বার্তা। ‘ইত্যাদি’ শুধু একটি টিভি অনুষ্ঠান নয়—এটি এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, শহর থেকে সীমান্ত পর্যন্ত, হানিফ সংকেত খুঁজে বের করেছেন সাধারণ মানুষের গল্প। তার চোখে দেশ মানে মানুষ, আর মানুষের গল্পই তার অনুপ্রেরণা।

‘ইত্যাদি’তে অনুষ্ঠানে যেমন থাকে হাস্যরস, তেমনি থাকে গভীর বার্তা। দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার বা পরিবেশ দূষণের মতো বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন এমনভাবে, যা দর্শককে আনন্দ দেয়, আবার ভাবতেও শেখায়। তার এক জনপ্রিয় উক্তি— ‘মানুষকে শেখানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তাকে হাসানো। হাসির মধ্য দিয়েই মন খোলা যায়।’ এই এক লাইনেই যেন তার দর্শন।

হানিফ সংকেতের পরিমিত, স্পষ্ট ও শালীন উপস্থাপন ভঙ্গি তাকে আলাদা করেছে সবার কাছ থেকে। তিনি কখনো উত্তেজনায় ভেসে যান না, কখনো নিজেকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনেন না। তার প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি কৌতুক, প্রতিটি নোট—পরিকল্পিত, অর্থবহ এবং দায়িত্বশীল।

jagonews24

‘ইত্যাদি’তে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, লোকসংগীত ও সাধারণ মানুষের প্রতিভা তুলে ধরার যে ধারাবাহিকতা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা বাংলাদেশে অনন্য উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন—বিনোদন হতে পারে শিক্ষার মাধ্যম, আর জনপ্রিয়তাও হতে পারে দায়িত্ববোধের হাতিয়ার।

এই দীর্ঘ পথচলায় হানিফ সংকেতের চারপাশে কখনো তীব্র প্রচারণা ছিল না, ছিল না আলোচনার ঝলকানি।
তিনি ছিলেন নিজের ছন্দে, নিজের নিয়মে, নিজের সময়ের মানুষ। কাজই তার পরিচয়—এটাই তাকে আলাদা করেছে বহু ‘তারকার’ ভিড় থেকে।

তিনি যতটা জনপ্রিয়, তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধার। কারণ তার জনপ্রিয়তা কোনো রঙিন বিজ্ঞাপন বা নাটকীয় বাক্য থেকে আসেনি—এসেছে মানুষের হৃদয় থেকে। যে দেশে টেলিভিশন অনুষ্ঠান এক পর্বের পর হারিয়ে যায়, সেখানে ‘ইত্যাদি’ টিকে আছে চার দশক ধরে, নির্ভুল মানে, নিরবচ্ছিন্ন আকর্ষণে।

আরও পড়ুন
যে কারণে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন হানিফ সংকেত 
ইত্যাদির অনুষ্ঠানে কী হয়েছিল, জানালেন হানিফ সংকেত 

দেশপ্রেম, মানবপ্রেম আর দায়িত্ববোধ-হানিফ সংকেতের প্রতিটি কাজের কেন্দ্রে আছে দেশ। তার উপস্থাপনায় বারবার ফিরে আসে মাটি, ভাষা, মানুষের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প।
তিনি মনে করেন—একটি দেশকে ভালোবাসা মানে তার মানুষকে ভালোবাসা। তাই ‘ইত্যাতি’র প্রতিটি পর্বে আমরা দেখা যায় সেই মাটির গন্ধ, সেই সত্যিকারের বাংলাদেশ।

এফএমএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

‘ইত্যাদির’র মানুষ: বিনোদনের ছলে নৈতিকতার পাঠ দেন যিনি

আপডেট সময়ঃ ১২:০৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসে কিছু নাম সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যায়—তাদের উপস্থিতি শুধু পর্দায় নয়, মানুষের অন্তরে থেকে যায়। সেই নামগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতেই আছেন হানিফ সংকেত। আজ (২৩ অক্টোবর) এই প্রজ্ঞাবান উপস্থাপক, নাট্যকার, নির্মাতার জন্মদিন। চার দশক ধরে তিনি শুধু একটিমাত্র অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন—বিনোদন মানেই হাসি নয়, বরং এক গভীর দায়িত্ববোধ।‘ইত্যাদি’ নামটি আজ একটি প্রজন্ম নয়, একাধিক প্রজন্মের আবেগের ঠিকানা।

সন্তান হানিফ সংকেতের বেড়ে ওঠা ছিল সাধারণ পরিবারের ঘেরাটোপে, কিন্তু তার ভাবনা কখনো সাধারণ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি, অভিনয় আর মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসাই তাকে নিয়ে আসে নাট্যজগতে, এরপর টেলিভিশনের বিশাল পরিসরে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন টেলিভিশনে বিনোদনের মানে ছিল কেবল গান-নাচ বা নাটক, তখন তিনি নিয়ে এলেন অন্যরকম কিছু—‘ইত্যাদি’, যেখানে হাসির আড়ালে ছিল সমাজের প্রতিচ্ছবি, কৌতুকের ভেতরে ছিল শিক্ষা, আর প্রতিটি পর্বেই ছিল দেশপ্রেমের বার্তা। ‘ইত্যাদি’ শুধু একটি টিভি অনুষ্ঠান নয়—এটি এক ধরনের সামাজিক আন্দোলন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, শহর থেকে সীমান্ত পর্যন্ত, হানিফ সংকেত খুঁজে বের করেছেন সাধারণ মানুষের গল্প। তার চোখে দেশ মানে মানুষ, আর মানুষের গল্পই তার অনুপ্রেরণা।

‘ইত্যাদি’তে অনুষ্ঠানে যেমন থাকে হাস্যরস, তেমনি থাকে গভীর বার্তা। দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার বা পরিবেশ দূষণের মতো বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেন এমনভাবে, যা দর্শককে আনন্দ দেয়, আবার ভাবতেও শেখায়। তার এক জনপ্রিয় উক্তি— ‘মানুষকে শেখানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তাকে হাসানো। হাসির মধ্য দিয়েই মন খোলা যায়।’ এই এক লাইনেই যেন তার দর্শন।

হানিফ সংকেতের পরিমিত, স্পষ্ট ও শালীন উপস্থাপন ভঙ্গি তাকে আলাদা করেছে সবার কাছ থেকে। তিনি কখনো উত্তেজনায় ভেসে যান না, কখনো নিজেকে কেন্দ্রবিন্দুতে আনেন না। তার প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি কৌতুক, প্রতিটি নোট—পরিকল্পিত, অর্থবহ এবং দায়িত্বশীল।

jagonews24

‘ইত্যাদি’তে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, লোকসংগীত ও সাধারণ মানুষের প্রতিভা তুলে ধরার যে ধারাবাহিকতা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা বাংলাদেশে অনন্য উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন—বিনোদন হতে পারে শিক্ষার মাধ্যম, আর জনপ্রিয়তাও হতে পারে দায়িত্ববোধের হাতিয়ার।

এই দীর্ঘ পথচলায় হানিফ সংকেতের চারপাশে কখনো তীব্র প্রচারণা ছিল না, ছিল না আলোচনার ঝলকানি।
তিনি ছিলেন নিজের ছন্দে, নিজের নিয়মে, নিজের সময়ের মানুষ। কাজই তার পরিচয়—এটাই তাকে আলাদা করেছে বহু ‘তারকার’ ভিড় থেকে।

তিনি যতটা জনপ্রিয়, তার চেয়ে বেশি শ্রদ্ধার। কারণ তার জনপ্রিয়তা কোনো রঙিন বিজ্ঞাপন বা নাটকীয় বাক্য থেকে আসেনি—এসেছে মানুষের হৃদয় থেকে। যে দেশে টেলিভিশন অনুষ্ঠান এক পর্বের পর হারিয়ে যায়, সেখানে ‘ইত্যাদি’ টিকে আছে চার দশক ধরে, নির্ভুল মানে, নিরবচ্ছিন্ন আকর্ষণে।

আরও পড়ুন
যে কারণে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন হানিফ সংকেত 
ইত্যাদির অনুষ্ঠানে কী হয়েছিল, জানালেন হানিফ সংকেত 

দেশপ্রেম, মানবপ্রেম আর দায়িত্ববোধ-হানিফ সংকেতের প্রতিটি কাজের কেন্দ্রে আছে দেশ। তার উপস্থাপনায় বারবার ফিরে আসে মাটি, ভাষা, মানুষের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প।
তিনি মনে করেন—একটি দেশকে ভালোবাসা মানে তার মানুষকে ভালোবাসা। তাই ‘ইত্যাতি’র প্রতিটি পর্বে আমরা দেখা যায় সেই মাটির গন্ধ, সেই সত্যিকারের বাংলাদেশ।

এফএমএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।