০১:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

  • এডমিন
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • 4

আয়তনে দেশের বৃহত্তম জেলা রাঙ্গামাটি। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম থেকে এই পাহাড়ি জেলার জন্ম। জন্ম থেকেই দুর্গম তকমা নিয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত এই জনপদের মানুষ। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পেতে শুরু করে। তবে দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর পরেও বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত জেলার ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।

জানা যায়, বিদ্যুৎ বঞ্চিত ১৩ ইউনিয়নের তিনটি জেলা সদর উপজেলার আওতাধীন। কাপ্তাই হ্রদের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূর্ভাগা এই তিন ইউনিয়ন হলো- জীবতলী, বন্ধুকভাঙ্গা ও বালুখালী। এছাড়া লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা, বগাচত্বর ও ভাসান্যাদম ইউনিয়ন, বরকল উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া ও বড় হরিনা ইউনিয়ন, বিলাইছড়ির ফারুয়া ও বড়থলী ইউনিয়ন ও জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নে পৌঁছেনি বিদ্যুৎ সুবিধা।

তথ্য মতে, ৬,১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পাহাড়ি এই জেলায় উপজেলার সংখ্যা ১০টি। জেলার প্রাচীন উপজেলা লংগদু। ১৮৬১ সালে গঠিত হয় এই উপজেলা। বরাবরের মতো দূর্গম তকমা থাকায় জেলা শহরের সঙ্গে এখনো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা পেতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রতিবেশী জেলা খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হয়ে বিদ্যুৎ আসে এই প্রাচীন জনপদে। তবে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে এখনো বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার।

এই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুতের সরবরাহ দিতে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ান। তিনি বলেন, লংগদু উপজেলা পার্বত্য অঞ্চলের একটি প্রাচীন জনপদ। তবে উন্নয়ন থেকে এখনো পিছিয়ে এই পাহাড়ি অঞ্চল। এখানে জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নেই। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন।

আরও পড়ুন:
ভারী বর্ষণে ধসে পড়া পাহাড়ি সড়ক সংস্কার হয়নি ৫ মাসেও
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু

তিনি আরও বলেন, আমার ইউনিয়ন কালাপাকুজ্জ্যার কাছেই দক্ষিণ পাবলাখালি ও মাইনীমূখের গাঁথাছড়া এলাকায় বিদ্যুৎ আছে। অল্প কিছু খুঁটি হলেই আমাদের ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন জুলাই মাসের শেষের দিকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু হবে। তবে এখনো সেই কাজের দেখা মেলেনি।

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, বছরের বড় একটা সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা গরমে ক্লাসে কষ্ট পায়। তারা পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও খাবার পানি সরবরাহ, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের সুযোগ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। এক কথায় বিদ্যুৎ ছাড়া মানসম্মত পাঠদান থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

জেলার সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত উপজেলা বরকল। পাহাড়ি এই উপজেলায় নাগরিক কোনো সুবিধা নেই বললেই চলে। জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কাপ্তাই হ্রদ। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এই উপজেলায় বিদ্যুতের সুবিধাও নেই। কয়েক বছর আগে উপজেলা সদরের কিছু এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছালেও ইউনিয়নগুলো এখনো অন্ধকারে। উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া, বড় হরিনা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। এসব এলাকায় নেই সড়ক যোগাযোগ। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই জনপদের লক্ষাধিক মানুষ।

বরকল উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া বড় হরিনা ইউনিয়নে প্রায় ১২০০ পরিবারের বসবাস। এখানকার মানুষ শতভাগ সৌর বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দরিদ্র কিছু পরিবারকে সৌর বিদ্যুতের সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ পরিবার নিজস্ব উদ্যোগে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণ বন্ধ
উপজেলা ঘোষণার এক দশকেও হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-ফায়ার সার্ভিস

ইউপি চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা বলেন, ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। তবে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে দেশের একমাত্র উপজেলা বিলাইছড়ি, যার সঙ্গে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও সুপরিচিত পাহাড়ি উপজেলা বিলাইছড়ি। ৭৪৫.৯১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার সঙ্গেও জেলা শহরের কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। এই জনপদের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিলচালিত নৌকা। কাপ্তাই হ্রদ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় রাঙ্গামাটি শহরে। সড়ক না থাকায় বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দুটি। উপজেলার বিলাইছড়ি ও কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে আংশিক কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও ফারুয়া ও বড়থলি ইউনিয়ন পুরোটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত।

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

জুরাছড়ি পাহাড়ের অনিন্দ্য সুন্দর এক উপজেলা। পাহাড় পরিবেষ্টিত একটি দুর্গম অঞ্চল এটি। ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৭৬ সালে জুরাছড়ি থানা গঠিত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় পরিণত হয় জুরাছড়ি। এই উপজেলার সঙ্গেও নেই জেলার সড়ক যোগাযোগ। এমনকি ইউনিয়নগুলোর সঙ্গেও নেই সড়কের ব্যবস্থা। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা এখানে সামান্য। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আংশিক বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেও একটিতে বিদ্যুৎ নেই।

এছাড়া জেলার বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলার সব ইউনিয়নে বিদ্যুৎ থাকলেও বেশকিছু ইউনিয়নে আংশিক বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি পাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি পাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি পাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩টি পাড়া এবং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের ১৮টি পাড়া, বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের ৪টি পাড়াসহ প্রায় ৫০টি পাড়া বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

রাঙ্গামাটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত। রাঙ্গামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

সূত্র জানায়, শীঘ্রই দেড় হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প একনেকে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহসহ বিদ্যুতের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হবে।

রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম। পাহাড়ি অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ না হলে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সচল রাখা খুবই কঠিন কাজ। পাশাপাশি রয়েছে জনবলের বিশাল সংকট। বিদ্যুতের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের জনবল সংকট দূর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি শিগগিরই তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুতের উন্নয়নে একটি মেগাপ্রকল্প পাশ হতে যাচ্ছে। এটি হলে এখানকার মানুষের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হবে।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

ট্যাগঃ

শত কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ ব্যক্তি আটক

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

আপডেট সময়ঃ ১২:০২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

আয়তনে দেশের বৃহত্তম জেলা রাঙ্গামাটি। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রাম থেকে এই পাহাড়ি জেলার জন্ম। জন্ম থেকেই দুর্গম তকমা নিয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত এই জনপদের মানুষ। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পেতে শুরু করে। তবে দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর পরেও বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত জেলার ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।

জানা যায়, বিদ্যুৎ বঞ্চিত ১৩ ইউনিয়নের তিনটি জেলা সদর উপজেলার আওতাধীন। কাপ্তাই হ্রদের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দূর্ভাগা এই তিন ইউনিয়ন হলো- জীবতলী, বন্ধুকভাঙ্গা ও বালুখালী। এছাড়া লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা, বগাচত্বর ও ভাসান্যাদম ইউনিয়ন, বরকল উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া ও বড় হরিনা ইউনিয়ন, বিলাইছড়ির ফারুয়া ও বড়থলী ইউনিয়ন ও জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নে পৌঁছেনি বিদ্যুৎ সুবিধা।

তথ্য মতে, ৬,১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পাহাড়ি এই জেলায় উপজেলার সংখ্যা ১০টি। জেলার প্রাচীন উপজেলা লংগদু। ১৮৬১ সালে গঠিত হয় এই উপজেলা। বরাবরের মতো দূর্গম তকমা থাকায় জেলা শহরের সঙ্গে এখনো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা পেতেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রতিবেশী জেলা খাগড়াছড়ির দিঘীনালা হয়ে বিদ্যুৎ আসে এই প্রাচীন জনপদে। তবে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে এখনো বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার।

এই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুতের সরবরাহ দিতে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বারেক দেওয়ান। তিনি বলেন, লংগদু উপজেলা পার্বত্য অঞ্চলের একটি প্রাচীন জনপদ। তবে উন্নয়ন থেকে এখনো পিছিয়ে এই পাহাড়ি অঞ্চল। এখানে জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ নেই। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন।

আরও পড়ুন:
ভারী বর্ষণে ধসে পড়া পাহাড়ি সড়ক সংস্কার হয়নি ৫ মাসেও
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু

তিনি আরও বলেন, আমার ইউনিয়ন কালাপাকুজ্জ্যার কাছেই দক্ষিণ পাবলাখালি ও মাইনীমূখের গাঁথাছড়া এলাকায় বিদ্যুৎ আছে। অল্প কিছু খুঁটি হলেই আমাদের ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন জুলাই মাসের শেষের দিকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ শুরু হবে। তবে এখনো সেই কাজের দেখা মেলেনি।

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, বছরের বড় একটা সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা গরমে ক্লাসে কষ্ট পায়। তারা পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও খাবার পানি সরবরাহ, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার মতো কাজগুলো করতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের সুযোগ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। এক কথায় বিদ্যুৎ ছাড়া মানসম্মত পাঠদান থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

জেলার সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত উপজেলা বরকল। পাহাড়ি এই উপজেলায় নাগরিক কোনো সুবিধা নেই বললেই চলে। জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কাপ্তাই হ্রদ। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এই উপজেলায় বিদ্যুতের সুবিধাও নেই। কয়েক বছর আগে উপজেলা সদরের কিছু এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছালেও ইউনিয়নগুলো এখনো অন্ধকারে। উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া, বড় হরিনা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। এসব এলাকায় নেই সড়ক যোগাযোগ। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই জনপদের লক্ষাধিক মানুষ।

বরকল উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া বড় হরিনা ইউনিয়নে প্রায় ১২০০ পরিবারের বসবাস। এখানকার মানুষ শতভাগ সৌর বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিয়ন পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দরিদ্র কিছু পরিবারকে সৌর বিদ্যুতের সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ পরিবার নিজস্ব উদ্যোগে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদ থেকে মৎস্য আহরণ বন্ধ
উপজেলা ঘোষণার এক দশকেও হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-ফায়ার সার্ভিস

ইউপি চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা বলেন, ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। তবে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে দেশের একমাত্র উপজেলা বিলাইছড়ি, যার সঙ্গে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও সুপরিচিত পাহাড়ি উপজেলা বিলাইছড়ি। ৭৪৫.৯১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার সঙ্গেও জেলা শহরের কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। এই জনপদের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিলচালিত নৌকা। কাপ্তাই হ্রদ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় রাঙ্গামাটি শহরে। সড়ক না থাকায় বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দুটি। উপজেলার বিলাইছড়ি ও কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে আংশিক কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও ফারুয়া ও বড়থলি ইউনিয়ন পুরোটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত।

বিদ্যুৎ পৌঁছেনি পাহাড়ি ১৩ ইউনিয়নে

জুরাছড়ি পাহাড়ের অনিন্দ্য সুন্দর এক উপজেলা। পাহাড় পরিবেষ্টিত একটি দুর্গম অঞ্চল এটি। ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৭৬ সালে জুরাছড়ি থানা গঠিত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় পরিণত হয় জুরাছড়ি। এই উপজেলার সঙ্গেও নেই জেলার সড়ক যোগাযোগ। এমনকি ইউনিয়নগুলোর সঙ্গেও নেই সড়কের ব্যবস্থা। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা এখানে সামান্য। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আংশিক বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেও একটিতে বিদ্যুৎ নেই।

এছাড়া জেলার বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলার সব ইউনিয়নে বিদ্যুৎ থাকলেও বেশকিছু ইউনিয়নে আংশিক বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি পাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি পাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি পাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৩টি পাড়া এবং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের ১৮টি পাড়া, বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের ৪টি পাড়াসহ প্রায় ৫০টি পাড়া বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

রাঙ্গামাটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত। রাঙ্গামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

সূত্র জানায়, শীঘ্রই দেড় হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প একনেকে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহসহ বিদ্যুতের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হবে।

রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম। পাহাড়ি অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ না হলে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সচল রাখা খুবই কঠিন কাজ। পাশাপাশি রয়েছে জনবলের বিশাল সংকট। বিদ্যুতের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের জনবল সংকট দূর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি শিগগিরই তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুতের উন্নয়নে একটি মেগাপ্রকল্প পাশ হতে যাচ্ছে। এটি হলে এখানকার মানুষের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হবে।

এমএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।