সংবিধানে গণভোটের কোনো বিধান নেই উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এই বিধান করতে হলে সংসদে যেতে হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার আসতে হবে।
তিনি বলেন, কিন্তু যদি পার্লামেন্ট বা নির্বাচনই না হয় তাহলে কে এই সংবিধান সংশোধন করবে। এই ক্ষমতা তো কাউকে দেয়নি জনগণ।
সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এখনো সংবিধান মোতাবেক চলে। কাজেই এর বাইরে আমাদের কারও যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। এছাড়া সংবিধানে গণভোটের কোনো বিধান নেই। এটি করতে হলে সংসদে আসতে হবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার আসতে হবে।
রোববার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থিত ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্সের (এনএলএ) নবযাত্রা উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
জয়নুল আবেদীন বলেন, সংবিধানের কোনো দোষ নেই। কিন্তু যারা সংবিধান পরিচালনা করে বা করেছেন কিংবা যারা ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখতে চেয়েছেন তারাই মূলত ধ্বংসের হোতা। সেজন্য আমরা মনে করি এই সংবিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু করতে যাওয়ার অর্থই হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা। তাই গণভোট বা পিআর পদ্ধতি যা কিছুই করেন না কেন সংবিধানের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই।
৯ মাস যুদ্ধ করে সংবিধান পেয়েছি উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের যে সংবিধান সেটি আমরা যুদ্ধ করে পেয়েছি। সেটির মাধ্যমেই দেশ চলবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর স্বাধীনতার পর রচিত সংবিধান মোতাবেকই শপথ নিয়ে একটি সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় হওয়ার সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব বিদেশে ছিলেন। সরকারে কে আসবে, কী হবে না হবে—অনেকেই চিন্তায় ছিলেন। যাহোক শেষ কালে আমি বলবো, সংবিধান মোতাবেকই শপথবাক্য পাঠ করে সরকারপ্রধান ও অন্যান্য উপদেষ্টার একটি সরকার গঠন করা হয়েছে।
‘ভেবেছিলাম এই সরকার তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। মানুষের অধিকার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার সুফল মানুষকে ফিরিয়ে দেবে। এখন নতুন করে আলোচনায় আসছে জুলাই সনদ। অথচ এই সরকারের এখন ১৬ মাস চলে।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল। তারা বলছে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যরা বলছেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কিভাবে হবে। সরকারপ্রধান নিজে গোটা জাতিকে একটা বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, মানুষের যখন ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, স্বাধীনতার সুফল প্রয়োজন তখন নতুন করে আলোচনায় আসছে জুলাই সনদ। যাকে জুলাই সনদের দায়িত্ব দেওয়া হলো তিনি (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ) আবার আমেরিকার নাগরিক। দুদিন আগে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘যে সনদে আমরা সই করলাম এই সনদ তো সেই সনদ নয়’। এখন এর সাক্ষী কে দেবে। তিনি তো (আলী রীয়াজ) চলে গেছেন দেশ ছেড়ে। টাকা-পয়সা যা নেওয়ার নিয়ে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, জুলাই সদন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে যে বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তার দায়-দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ আমরা তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম।
ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মুহা. এরশাদুল বারী খন্দকার ও যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূরের সঞ্চালনায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এনসিপির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা ও এনএলএ-এর মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট সাকিল আহমেদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্সের যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট নাজমুস সাকিব। ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স অ্যালায়েন্সের আহবায়ক অ্যাডভোকেট এসএম আজমল হোসেন বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট এরশাদুল বারী খন্দকার ও অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর।
এফএইচ/এমকেআর
এডমিন 








